ইবাদত-জিয়ার পর সোহান-তানবীর

চোখধাঁধানো একটি ইনসাইড আউট শটে ছক্কা, নান্দনিক আরও কয়েকটি শট। মোহাম্মদ আশরাফুলকে মনে হচ্ছিল তার সেরা সময়ের প্রতিচ্ছবি। তবে স্রেফ ওই কয়েকটি শটেই। বাকি সময়টায় রইলেন মিইয়ে, দলকেও ঠেলে দিলেন বিপদে। শেষ পর্যন্ত নুরুল হাসান সোহান ও তানবীর হায়দারের সৌজন্যে বিপাকে পড়তে হয়নি শেখ জামালকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2021, 07:13 AM
Updated : 23 June 2021, 01:54 PM

ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও জিয়াউর রহমানের বোলিং গড়ে দিল যে ভিত, সেটি কাজে লাগিয়ে সোহান-তানবীরের জুটি শেখ জামালকে পৌঁছে দিল জয়ের ঠিকানায়। মোহামেডান হারল আরেকটি ম্যাচ।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির সুপার লিগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৭ উইকেটে হারাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। সুপার লিগে শেখ জামালের এটি তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয়, সমান ম্যাচে মোহামেডানের হার সবকটিতেই।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার ইবাদত ও জিয়া নেয় তিনটি করে উইকেট। মোহামেডান ২০ ওভারে করতে পারে ১৩৩ রান। শেখ জামাল জিতে যায় এক ওভার বাকি রেখেই।

সোহান ও তানবীর গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৫৩ রানের জুটি। ৩১ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান, ১৭ বলে ৩২ রানে তানবীর।

শেখ জামালের রান তাড়ার শুরুটা ছিল বাজে। প্রথম ওভারে আবু জায়েদের লেংথ বল স্লগ করে শূন্য রানে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন সৈকত আলি।

দ্বিতীয় উইকেটে আশরাফুল ও ইমরুল কায়েসের জুটি সামাল দেয় সেই ধাক্কা। দুজনে যোগ করেন ৫৫ রান। ২১ বলে ২৫ রান করে ইমরুলের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।

আশরাফুলের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। তবে ক্রমেই খোলসে ঢুকে যান তিনি। অবিশ্বাস্যভাবে ইনিংসের দশম ওভারে মেডেন দেন আসিফ হাসানকে। পরে আসিফের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি ৪২ বলে ৩৮ রান করে।

শেষ ৬ ওভারে শেখ জামালের প্রয়োজন পড়ে ৫০ রান। খানিকটা কঠিন হয়ে পড়া সেই সমীকরণ মেলান সোহান ও তানবীর।

লিগে ১৩ ইনিংস খেলে সোহানের রান ৩৮.৪৪ গড়ে ৩৪৬, স্ট্রাইক-রেট ১৫১.৭৫!

সকালে শেখ জামালের শুরুটাও ছিল ভালো। টস জিতে বোলিংয়ে নামা দলকে ম্যাচের প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দেন ইবাদত। ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ আব্দুল মজিদ।

তিনে নেমে ইরফান শুক্কুর তিন চার মারলেও সিঙ্গেল বের করতে ভুগছিলেন। ১৮ বলে ১৭ করে তিনি বিদায় নেন জিয়াকে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে।

সোহান-তানবীরের জুটিতে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছায় শেখ জামাল।

আগের ম্যাচে ২০ বলে ৪৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলা পারভেজ হোসেন ইমন এবার শুরুটা করেন একটু ধীরে। নাসির হোসেনকে ওয়াইড লং অন দিয়ে ছক্কার পরও পাওয়ার প্লে শেষে তার রান ছিল ১৩ বলে ১২। পরে আশরাফুলের বলে দারুণ দুটি ছক্কা মারেন লং অন ও লং অফ দিয়ে।

শামসুর রহমানের সঙ্গে পারভেজের জুটিতে মোহামেডান এগোচ্ছিল বেশ ভালোভাবেই। ১২ ওভার শেষে রান ছিল ২ উইকেটে ৮৪।

ছন্দপতনের শুরু পারভেজের বিদায় দিয়ে। মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদির অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্লগ করতে গিয়ে তিনি ছুঁড়ে আসেন নিজের উইকেট।

তার বিদায়ের পর খোলস ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন শামসুর। কিন্তু আরেকপ্রান্তে মাহমুদুল হাসান থাকেন একদমই ঝিমিয়ে। তাতেই গতি হারায় ইনিংস।

মাহমুদুল আউট হয়ে যান ১২ বলে ৩ রান করে। ইনিংসের গতি ফেরাতে পারেননি পরের ব্যাটসম্যানরা। কাজ শেষ করতে পারেননি শামসুর রহমানও। বিদায় নেন ৪০ বলে ৪৯ রান করে, চলতি লিগে তার সর্বোচ্চ স্কোর।

শেষ ৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা করতে পারে কেবল ৩১ রান। ম্যাচটা হয়তো তাদের হাত থেকে ফসকে যায় সেখানেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মোহামেডান: ২০ ওভারে ১৩৩/৯ (মজিদ ১, ইমন ৪৬, ইরফান ১৭, শামসুর ৪৯, মাহমুদুল ৩, শুভাগত ০, নাদিফ ০, ইয়াসিন ৯*, রুয়েল ০, আসিফ ১; ইবাদত ৪-০-১৭-৩, নাসির ৪-০-২৪-০, জিয়াউর ৪-০-২৯-৩, আফ্রিদি ৪-০-২০-১, আশরাফুল ১-০-১৫-০, সৈকত ১-০-১০-০, সোহরাওয়ার্দী ১-০-৯-০, ইলিয়াস সানি ১-০-১৭-০)।

শেখ জামাল: ১৯ ওভারে ১৩৭/৩ (সৈকত ০, আশরাফুল ৩৮, ইমরুল ২৫, নুরুল ৩৬*, তানবীর ৩২*; আবু জায়েদ ৩-০-২০-১, রুয়েল ৪-০-২৫-০, ইয়াসিন ৪-০-৩৮-০, শুভাগত ৩-০-১৯-১, মাহমুদুল ১-০-৫-০, আসিফ ৪-১-২৯-১)।

ফল: শেখ জামাল ধামন্ডি ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইবাদত হোসেন