রুবেল-রকিবুলের ব্যাটে মোহামেডানকে হারাল প্রাইম ব্যাংক

সহজ ম্যাচ কঠিন বানিয়ে কিভাবে শেষ পর্যন্ত জিততে হয়, সেটির একটি নমুনা দেখাল প্রাইম ব্যাংক। রুবেল মিয়ার দারুণ ইনিংস তাদের এগিয়ে নেয় জয়ের পথে। কিন্তু আত্মঘাতী হয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনে নিজেরাই। পরে রকিবুল হাসানের দারুণ ফিনিশিংয়ে মাঠ ছাড়ে তারা জয়ের স্বস্তিতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2021, 04:52 PM
Updated : 21 June 2021, 04:52 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির সুপার লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৫ বল বাকি রেখে ৫ উইকেটে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। 

এই জয় প্রাইম ব্যাংককে তুলে নিয়েছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। ১৩ ম্যাচে আবাহনীর সমান ১০ জয়ে ২০ পয়েন্ট প্রাইম ব্যাংকের, রান রেটে তারা এগিয়ে সামান্য ব্যবধানে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার রাতে মোহামেডান ২০ ওভারে ৯ উইকেটে করে ১৫৪ রান। প্রাইম ব্যাংককে জয়ের ভিত গড়ে দেয় রুবেলের ৪০ বলে ৬৫ রানের ইনিংস। ২৫ বলে অপরাজিত ৩১ রানের ইনিংসে কাজ শেষ করেন রকিবুল।

অথচ পারভেজ হোসেন ইমনের বিস্ফোরক ইনিংসে মোহামেডানের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। ৫ ছক্কায় ২০ বলে ৪৫ রান করেন একাদশে ফেরা তরুণ ওপেনার।

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে নাহিদুল ইসলামের অফ স্পিনে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে সোজা ব্যাটে ছক্কা মেরে পারভেজের শুরু। পরের ওভারে দুটি ছক্কায় ওড়ান বাঁহাতি স্পিনার মনির হোসেনকে। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে একটি, স্লগ সুইপে আরেকটি।

আরও ভয়ঙ্কর নান্দনিক রূপে আবির্ভুত হন তিনি পঞ্চম ওভারে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম গুঁড়িয়ে দেন দুটি করে চার ও ছক্কায়। প্রথম ছক্কাটি চোখধাঁধানো লফটেড ড্রাইভে এক্সট্রা কাভার দিয়ে, পরেরটি স্লগ করে ওয়াইড লং অনে।

পারভেজের রোমাঞ্চকর যাত্রা শেষ হয় শরিফুলের হাতেই। তবে বোলিংয়ে নয়, দুর্দান্ত ক্যাচে। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মিড অফ থেকে অনেকটা উল্টো দিকে ছুটে অনেকটা লাফিয়ে এক হাতে বল তালুবন্দী করেন শরিফুল।

আরেক ওপেনার আব্দুল মজিদ একটি ছক্কার পরও ১৪ রান করে ফেরেন ১৬ বল খেলে। তিনে নেমে অভিজ্ঞ শামসুর রহমানের প্রাপ্তি ১১ বলে ৩। মিড উইকেট থেকে অনেকটা সামনে দৌড়ে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন রুবেল মিয়া।

মোহামেডানকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন পারভেজ হোসেন ইমন।

পাঁচ ওভার শেষে যে দলের রান কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৭, পরে চার ওভারে তারা ১১ রান তোলে ৩ উইকেট হারিয়ে।

থমকে যাওয়া ইনিংসকে গতি দেন ইরফান শুক্কুর। দুটি ছক্কা মারেন তিনি অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে। কিন্তু রান আউটে শেষ হয় তার ১৯ বলে ২৪ রানের ইনিংস। ব্যর্থ হন অভিজ্ঞ নাদিফ চৌধুরি।

খেই হারানো ইনিংসের ছন্দ ফেরান মাহমুদুল হাসান ও শুভাগত হোম। অধিনায়ক শুভাগত ২৫ করেন ১৫ বলে, ২৯ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল। তাদের সৌজন্যে দেড়শ ছাড়ায় মোহামেডান।

রান তাড়ায় প্রাইম ব্যাংকের মূল ভরসা রনি তালুকদার আউট হয়ে যান ১০ বলে ৯ রান করে। দ্বিতীয় উইকেটে রুবেল ও এনামুল হকের জুটি পথে রাখে দলকে।

জুটিতে সবকিছু অবশ্য বলতে গেলে রুবেলই করেন। ৩৬ বলে ৬৪ রানের জুটিতে এনামুলের অবদান মোটে ১৩ বলে ১৪।

শুভাগত হোমকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা মারার পরের বলে একই চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে যান এনামুল। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে রুবেল ৯ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৪০ বলে ৬৫।

সহজ জয়ের পথে এগোতে থাকা দল হঠাৎ হোঁচট খায় মোহাম্মদ মিঠুনের রান আউটে। পরে বাজেভাবে রান আউট হয়ে যান নাহিদুলও। কমে যায় রানের গতিও।

শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২০ রানের। বাঁহাতি পেসার আবু হায়দারের করা ১৯তম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে সমীকরণ সহজ করে দেন রকিবুল। ওভারের শেষ বলে নাঈম হাসানের বাউন্ডারিতে শেষ হয়ে যায় উত্তেজনা।

এই হারে সুপার লিগের ছয় দলের মধ্যে তলানিতে চলে গেল মোহমেডান। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মোহামেডান: ২০ ওভারে ১৫৪/৭ (মজিদ ১৪, পারভেজ ৪৫, শামসুর ৩, ইরফান ২৪, নাদিফ ৩, মাহমুদুল ৩২*, শুভাগত ২৫, আবু হায়দার ১, আসিফ ১*; মনির ৪-০-২৬-১, নাহিদুল ২-০-১৭-০, শরিফুল ৩-০-২৭-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২২-২, নাঈম ৪-০-২৪-১, দেলোয়ার ৪-০-৩৩-০)।

প্রাইম ব্যাংক: ১৯.১ ওভারে ১৫৫/৫ (রনি ৯, রুবেল মিয়া ৬৫, এনামুল ১৪, মিঠুন ১৭, রকিবুল ৩১*, নাহিদুল ৫, নাঈম ১১*; রুয়েল ৪-০-২৩-০, আসিফ ৪-০-২৯-১, আবু জায়েদ ৩.১-০-২৪-১, আবু হায়দার ৪-০-৫৪-০, শুভাগত ৪-০-২৪-০)।

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রুবেল মিয়া।