‘বাংলাদেশ টাইগার্স মূলত ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেবে’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক আলোচিত বিষয় ‘বাংলাদেশ টাইগার্স।’ গত মঙ্গলবার বোর্ড সভা শেষে এই নামে একটি ছায়া জাতীয় দল গঠনের কথা জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। দায়িত্ব দেওয়া হয় বোর্ড পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ ও খালেদ মাহমুদকে। তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাজী ইনাম আহমেদ জানালেন, এটি মূলত হবে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামে কাদের জায়গা হবে, কীভাবে কাজ করা হবে, কারা কাজ করবেন, সবকিছুর বিস্তারিত ধারণাও দিলেন এই বিসিবি পরিচালক।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2021, 11:38 AM
Updated : 20 June 2021, 11:38 AM

ছায়া জাতীয় দল বলা হয় তো মূলত কোনো দেশের ‘এ’ দলকে। ‘বাংলাদেশ টাইগার্স’ আসলে কি? ভাবনা কীভাবে এলো?

কাজী ইনাম আহমেদ: আমি আসলে এটিকে বলব একটি ‘প্রোগ্রাম’, বলতে পারেন ‘ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম।’ এটির আইডিয়া আমার সঙ্গে প্রথম শেয়ার করেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার আগে (এপ্রিলে)। পরে তামিম এটা বোর্ড প্রধানের (নাজমুল হাসান) সঙ্গেও কথা বলেন। আমার সঙ্গে যখন বোর্ড প্রধানের দেখা হয়, তখন উনার সঙ্গে কথা হয় এটা নিয়ে। বোর্ড প্রধান আইডিয়টা খুবই পছন্দ করেন। এরপর আমরা অনেক আলোচনা করি।

আমাদের মূল ভাবনার জায়গা, তামিমেরও যে পয়েন্ট ছিল, আমাদের এখানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রোগ্রাম আছে সেই বয়সীদের জন্য, ‘এইচপি’ দলের প্রোগ্রাম আছে, যেখানে মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ বছর বয়সীদের নেওয়া হয়, বেশি বয়সী হয়তো ২-৩ জন থাকে। এই দুটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাকি যে ক্রিকেটাররা আছে, তাদের মধ্যে অভিজ্ঞ অনেকে আছে, জাতীয় দল থেকে যারা বাদ পড়েছে বা একটু ‘ফাইন টিউন’ করে জাতীয় দলে আসতে পারে, তারা তো তেমন কোনো ফ্যাসিলিটিতে থাকে না। তাদেরকে নিয়ে কি করা যায়?

উদাহরণ হিসেবে ধরি, ইমরুল কায়েস, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, এনামুল বিজয়… বোলারদের মধ্যে তাসকিন, আল আমিনরা অনেক দিন বাইরে ছিল, এখন শফিউল ইনজুরি নিয়ে বাইরে… এরকম আরও অনেকে আছে বা থাকবে। ওরা সবাই অভিজ্ঞ এবং বয়সের কারণে যুব দল বা এইচপিতে ক্যাম্প করতে পারছে না। তারা কি একই অনুশীলন সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে? তারা কি নির্দিষ্ট কোচের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু স্কিল নিয়ে কাজ করতে পারে? বছরজুড়ে কি তাদের কোনো প্রোগ্রামের আওতায় রাখা যায়? সেই চিন্তা থেকেই ‘বাংলাদেশ টাইগার্স’ এসেছে।

তাসকিন যেমন নিজের উদ্যোগে অনেক কাজ করে জাতীয় দলে ফিরে ভালো করছে। দায়িত্বটি তো আমাদের, আমরা ওদের আরও অনেককে অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা দিতে চাই।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বলুন বা বিপিএল বা অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্ট, এই অভিজ্ঞরাই বেশি ভালো করে। কিন্তু নিজেদের ফিটনেস ও স্কিল নিয়ে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ ওরা সেভাবে পায় না। ক্রিকেটে অভিজ্ঞতা অনেক বড় ব্যাপার। এজন্যই ওদের নিয়ে কাজ করে জাতীয় দলের জন্য তৈরি করতে চাই।

বাংলাদেশ টাইগার্স তাই মূলত ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এটা অনেক এগিয়ে নেবে।

তার মানে কি, এখানে মূলত সুনির্দিষ্ট স্কিল নিয়ে, যার যেখানে ঘাটতি বা দুর্বলতা, সেসব জায়গা নিয়ে কাজ হবে?

‘বাংলাদেশ টাইগার্স’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছেন এটির দায়িত্ব পাওয়া বিসিবি পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ। পাশে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরি।

কাজী ইনাম:
এটাই মূল উদ্দেশ্য। এখানে আরেকটা বড় ব্যাপার থাকবে অধিনায়কদের ইনপুট। সব ফরম্যাটের অধিনায়করা তাদের চাওয়া জানাতে পারে। তামিম বা (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ বলতে পারে, তাদের ছয়-সাত নম্বরে বিগ হিটার প্রয়োজন যে কিনা গিয়েই শট খেলতে পারবে কিংবা বলতে পারে, ডেথে বোলিং করার জন্য মুস্তাফিজের সঙ্গে আরেকজন বোলার প্রয়োজন। তারা কয়েকজনের নাম জানাতে পারেন। আমরা তাদেরকে এই প্রোগ্রামে এনে ঠিক ওই জায়গায় উন্নতি করানোয় কাজ করব।

একটা উদাহরণ দেই, ২০১৯ বিপিএলে মিডল অর্ডারে নেমে শামসুর রহমান শুভ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খুব ভালো করল। সেবার তাকে বেশ আগেই অধিনায়ক তামিম বলে রেখেছিল যে, ‘আমরা আপনাকে দলে নেব, মিডল অর্ডারে খেলাব, আপনি বড় শট প্র্যাকটিস করতে থাকেন।’ শুভ সেভাবেই কাজ করেছে, ফল পেয়েছে। সেটা কাজে নাও লাগতে পারত, কিন্তু পরিকল্পনাটা ছিল। এখন সেটাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, গুছিয়ে করতে চাই আমরা।

এই ক্রিকেটাররা বছরের ৫-৬ মাস ব্যস্ত থাকে ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে। খেলা চলার সময় স্কিল ডেভেলপমেন্টের সুযোগ থাকে না। বাকি সময়টায় স্কিল ডেভেলপমেন্টের কাজ তারা করতে পারে বাংলাদেশ টাইগার্স প্রোগ্রামে।

এই প্রোগ্রামে যারা থাকবেন এবং যাদের যে জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করা হবে, তারা যেন ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন দলে সেই ভূমিকাই পান, সেসবও খেয়াল রাখতে পারি আমরা। মেহেদী হাসান মিরাজ যেমন ঘরোয়া ক্রিকেটেও আমরা দেখেছি তাকে আট-নয়ে ব্যাট করাতে। অথচ সে যুব দলে জেনুইন ব্যাটসম্যান ছিল, এখনও ভালো করছে। বাংলাদেশ টাইগার্স প্রোগ্রামে আমরা তার ব্যাটিং নিয়ে কাজ করে এটুকু নিশ্চিত করতে পারি যেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ওই জায়গায় সুযোগ পায়। মিরাজ এখানে উদাহরণ, বলছি এরকম সবার কথাই।

আমাদের এই প্রোগ্রাম তাই যে শুধু অফ সিজনে চলবে, তা নয়। ঘরোয়া ক্রিকেট মৌসুমেও চলবে, অনুশীলন করানোর পাশাপাশি আমরা দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ও করব।

আপনারা বলেছেন, স্থানীয় কোচরাই এই প্রোগ্রামে কাজ করবেন। যেহেতু সুনির্দিষ্ট স্কিল নিয়ে কাজ হবে এবং ফাইন টিউন করার ব্যাপার, স্থানীয় কোচরা সেখানে কতটা কার্যকর হবেন বলে মনে করেন?

কাজী ইনাম: স্থানীয় কোচদের তো আমাদের সুযোগ দিতে হবে। তাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। আমাদের তরুণ স্থানীয় কোচরা খুবই ভালো কাজ করছে এখন। আফতাব, রাজিন সালেহ, তালহা জুবায়ের, সেলিম, ডিকেন্স, ডলার, নাসিরুদ্দিন ফারুক, এবছর থেকে নাফিস ইকবাল করছে, অনেকেই দারুণ করছে। ওদের বেশ কজন এর মধ্যেই বোর্ডের সঙ্গে কাজ করছে, অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে।

এই ছেলেদের অনেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে, অনেক শিখেছে, জানে। ওদেরকেও লেভেল ১, লেভেল ২ কোচিং করানো হচ্ছে আমাদের বোর্ড থেকে। ক্রিকেটারদের ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি কোচদেরও শেখার, গড়ে ওঠার সুযোগ এই প্রোগ্রামে। তাদেরকে যদি আমরা সুযোগই না দেই, সবসময়ই যদি ভাবি যে তারা পারবে না, তাহলে তো কখনোই শিখবে না ওরা।

আরেকটা ব্যাপার হলো ভাষা। যেহেতু এখানে লম্বা সময় ধরে যত্ন নিয়ে কাজ করা হবে, ভাষার ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ছেলেরা বাংলাতেই বেশি অভ্যস্ত। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ, অনেক সময় বড় কোচরা এলেও আমাদের ছেলেরা কাছে খুব একটা যায় না বা সব খোলামেলা বলতে পারে না।

সেক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের জন্য বিদেশি পরামর্শক আনার পরিকল্পনা আছে? ডেথ ব্যাটিংয়ের জন্য কোনো স্পেশালিস্ট বা ইয়র্কার কিংবা এরকম কিছু শেখানোর কেউ?

কাজী ইনাম: অবশ্যই সেই পরিকল্পনাও আছে। বিদেশি পরামর্শক আনলে তারা শুধু ক্রিকেটারদেরই শেখাবে না, আমাদের কোচরাও তাদের কাছ থেকে শিখতে পারবে।

তামিমের সঙ্গে আলোচনার সময় ঠিক এই কথাই হচ্ছিল। ধরুন, বিপিএলে বা ঢাকা লিগে খুব ভালো শট খেলছে কেউ কেউ। সে হয়তো অনেকদিন থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছে, কিন্তু কোনো প্রোগ্রামে নেই। কিংবা জাতীয় দলে খেলেছে কিছু দিন, এখন নেই। বয়স ২৮-২৯ বা তিরিশের বেশি। ধরে নিন, সোহান, আরিফুল, শুভাগতর মতো ক্রিকেটাররা। এরকম পাঁচ-ছয়জন হিটারকে আমরা প্রোগ্রামে রেখে কাজ করলাম। তার পর কোনো একজন বিশেষজ্ঞকে আনলাম।

মনে করুন, যুবরাজ সিং। দুর্দান্ত হিটার ছিলেন, উপমহাদেশের সংস্কৃতি বোঝে। কিংবা ইয়র্কার দেখানোর জন্য লাসিথ মালিঙ্গাকে আনা হলো। দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহের জন্য তারা এসে দেখিয়ে যেতে পারেন। নামগুলি বললাম স্রেফ বোঝানোর জন্য। প্রয়োজনের সময় যাকে পাই, আমরা আনার চেষ্টা করব।

বছরজুড়ে প্রোগ্রাম চললে তাদের কি আবাসিক ক্যাম্প হবে নাকি তারা যার যার বাসায় থেকে মাঠে এসে অনুশীলন করবে?

কাজী ইনাম: এখনও সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিক আলোচনা চলছে। তবে আপাতত যে ভাবনা আছে, তাতে আবাসিক-অনাবাসিক মিলিয়েই হবে। যখন যে পরিস্থিতিতে যা প্রয়োজন। পাশাপাশি কোথায় হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে হলে সবাই বাসা থেকে আসতে পারে। আবহাওয়া ভালো থাকলে কক্সবাজারে করতে পারি, সিলেটে এখন ভালো ফ্যাসিলিটিজ আছে। ওসব জায়গায় হলে তো হোটেলেই থাকতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ হলো, বছরজুড়ে এটা চালিয়ে যাওয়া ও স্থায়ী রূপ দেওয়া।

‘বাংলাদেশ টাইগার্স’ নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের জয়গা সেটি, বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক হবে কিনা বা কোন জায়গা এটি আলাদা…

কাজী ইনাম: আমাদের ভাবনায় এটি নিয়ে কোনো সংশয়ের জায়গা নেই। এটি সম্পূর্ণ আলাদা প্রোগ্রাম। বোর্ড প্রধান এটি চেয়েছেন, বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই আমাকে ও সুজন ভাইকে দায়িত্ব দেওয়ায়।

দেখুন, ‘এ’ দল যেভাবে কাজ করে, সেটার সঙ্গে বাংলাদেশ টাইগার্সের মিল নেই। ‘এ’ দল সফর করবে বা দেশে সিরিজ খেলবে। আগের মতোই এটা চলবে। ‘এ’ দলে এইচপি থেকে ক্রিকেটার থাকবে, বাংলাদেশ টাইগার্স থেকে থাকবে, অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেও থাকতে পারে। ‘এ’ দল সাধারণত কোনো সিরিজের আগে কয়েকদিন অনুশীলন করে ম্যাচ খেলে।

আর বাংলাদেশ টাইগার্স একটা ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, যেটা বছরজুড়ে চলবে। অনুশীলনই এখানে মূল ব্যাপার। ‘এ’ দলের খেলা আগের মতোই ক্রিকেট অপারেশন্সের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকবে। যে কোনো সিরিজ বা খেলা তাদের মাধ্যমেই হয়ে আসছে, হবেও। সামনের কয়েক বছরে বাংলাদেশের যে পরিমাণ খেলা আছে, ক্রিকেট অপারেশন্সের অনেক কাজ আছে।  

যুব দল বলুন বা এইচপি, এখন এই বাংলাদেশ টাইগার্স, সবকিছুর মূল লক্ষ্য কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়া। আশা করি, সবার সহযোগীতায় আমরা এটা সফলভাবে করতে পারব।

বাংলাদেশ টাইগার্স কি ম্যাচ খেলবে?

কাজী ইনাম: আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল, ‘এ’ দল তো ম্যাচ খেলেই। এইচপি দলও ইমার্জিং দলের ব্যানারে ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশ টাইগার্স ট্রেনিং করবে মূলত। তবে ম্যাচ প্র্যাকটিসের চেয়ে ভালো প্র্যাকটিস তো আর নেই। ধরুন, ওরা সিলেটে ট্রেনিং করছে। তখন সিলেট দলের সঙ্গে কিছু ম্যাচ খেলতেই পারে, নিজেদের উন্নতি দেখতে। কিংবা সুযোগ হলে, অন্য কোথাও খেলতেও পারে।

তবে, ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামটাই এখানে মূল ব্যাপার। বাকিগুলো পরিস্থিতি অনুযায়ী দেখা যাবে।

চলতি ঢাকা লিগ শেষে এই প্রোগ্রাম শুরু করতে চান বলে জানিয়েছিলেন আপনারা। কিন্তু এই বৃষ্টির মৌসুমে তা কতটা সম্ভব?

কাজী ইনাম: প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হবে। বোর্ড প্রধান এই প্রোগ্রাম নিয়ে খুবই রোমাঞ্চিত, দ্রুতই শুরু করতে চান। আমাদের রিক্রুটমেন্ট, পরিকল্পনা, কোচিং ও ম্যানেজমেন্ট স্টাফ নিয়োগ, এসব দ্রুত শুরু করতে হবে। প্রাথমিকভাবে, অন্তত তিন মাসের একটি শর্ট টার্ম পরিকল্পনা করতে হবে। তার পর আস্তে আস্তে বছরজুড়ে কাজ করতে হবে। লিগ শেষেই আমরা এসব শুরু করতে চাই।

বৃষ্টির মৌসুমেও অনেক কাজ করার আছে। জিম, ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যায়, ইনডোরে ট্রেনিং করা যায়। ক্রিকেটারদের বিশ্রামেরও প্রয়োজন আছে। আমরা ঈদের পরই শুরু করার চেষ্টা করব।

এই প্রোগ্রামে থাকা ক্রিকেটাররা কি কোনো ধরনের পারিশ্রমিক পাবেন?

কাজী ইনাম: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। আমরা এটা ভেবেছি এবং এর মধ্যেই প্রস্তাব দিয়েছি, বোর্ড প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি, কিছু করতে পারব এবং ক্রিকেটারদের বাড়তি কিছু দিতে পারব।

বাংলাদেশে অনেক সময়ই দেখা যায়, কোনো কিছু খুব ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়। পরে তা পথ হারায় বা মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যায়। ‘বাংলাদেশ টাইগার্স’ কি সেই ধারা ভাঙতে পারবে?

কাজী ইনাম: আমাদের বোর্ড প্রধানের সঙ্গে কাজ করে একটা ব্যাপার উপভোগ করি এটা যে, উনি যখন কাউকে দায়িত্ব দেন, সবাইকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন যেন কাজটা ভালোভাবে হয়। একটা উদাহরণ দেই, উনি আমাকে জিজ্হেস করেছিলেন, ‘এই কোভিডের সময় ঢাকা লিগ করতে পারবে তুমি?’ আমি বলেছিলাম, ‘আমি যদি নিরাপদ বায়ো-বাবল পরিকল্পনা করতে পারি, বাজেটে কোনো সমস্যা আছে?’ তিনি বলেছিলেন, ‘বাজেট কোনো ব্যাপার নয়।’

এই দেখেন, এই ঢাকা লিগের জন্য আমরা ৯ কোটি টাকা খরচ করতে পারছি। সবগুলি দলকে ফাইভ স্টার হোটেলে রাখছি, নিরাপদ থাকাই সবকিছুর আগে। উনি কিন্তু কোনো প্রশ্ন করেননি।

তো উনি যখন আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন, সবকরকম সমর্থনও দেবেন। আশা করি, অন্যদের সহায়তায় আমরা এটা পারব।

আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রোগ্রাম নিয়ে রোমাঞ্চিত। খুবই প্রয়োজনীয় এটি আমাদের ক্রিকেটের জন্য। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট মাঠের সঙ্গে আমার যোগাযোগ, বাবার হাত ধরে আবাহনীর খেলা দেখতে যেতাম। এখন নিজেও আবাহনীর পরিচালক। আমরা ক্রিকেট প্রশাসক যারা আছি বা আপনারা মিডিয়া, দর্শক, সবাই কিন্তু পরবর্তী সাকিব, তামিম, মুশফিকদের খুঁজছি। তরুণদের দিকেই বেশি নজর থাকে। কিন্তু জাতীয় দলের বাইরে থাকা অভিজ্ঞদের কথা ভুলে যাই। তাদেরই আমরা এখন কাজে লাগাতে চাই। 

এটা তো অনেক বড় কাজ। আপনি নিজে বোর্ড পরিচালক, সিসিডিএমের চেয়ারম্যান, নিজের ব্যবসার জগত অনেক বড়। আপনার সঙ্গে এই প্রোগ্রামের দায়িত্বে যিনি, সেই খালেদ মাহমুদ সুজনও কোর্ড পরিচালক, কোচ, জাতীয় দলে ম্যানেজার থাকেন নানা সময়ে। আপনার এই প্রোগ্রামের জন্য সময় কতটা বের করতে পারবেন?

কাজী ইনাম: দুটি ব্যাপার আছেন এখানে। সুজন ভাই ও আমি, দুজনেরই ক্রিকেটের প্রতি আবেগ তীব্র। আগে আমি বিসিবিতে মার্কেটিং ও কমার্শিয়াল নিয়ে কাজ করেছি, এখন সিসিডিএম দেখছি। তবে আমরা মূলত পছন্দ করি ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করতে, ক্রিকেটারদের গড়ে ওঠায় সহায়তা করতে। আমার বিপিএলে দল আছে, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কয়েকটি দলের সঙ্গে যুক্ত। ক্রিকেটারদের উন্নতির জন্য বাড়তি দায়িত্ব আমি খুশি মনেই নিতে আগ্রহী।

আর যেহেতু এটা স্থায়ী প্রোগ্রাম, অবশ্যই আলাদা স্টাফ আমাদের থাকবে। পেশাদার ম্যানেজার, অন্যান্য স্টাফ, প্রধান কোচসহ আরও কোচ, এসব থাকবে।

আমি বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা অনেক সময় শুধু সামনের দিকগুলোই দেখি। আড়ালে বিসিবির প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে লজিস্টিকস, গ্রাউন্ডস, এরকম বিভিন্ন কাজ করে, সমর্থন দেয়। সবাই মিলে আশা করি আমরা পারব।