মুনিমের ব্যাটে আবার ঝড়, শান্তর ফিফটি

আগের ম্যাচে বিস্ফোরক ইনিংস খেলা মুনিম শাহরিয়ার আবারও আলো ছড়ালেন। আসরের শুরু থেকে রানের জন্য সংগ্রাম করা নাজমুল হোসেনও এবার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে করলেন ফিফটি। দুই তরুণের ব্যাটে শেখ জামালের বিপক্ষে বড় সংগ্রহ গড়ে অনায়াসে জিতল আবাহনী।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2021, 12:38 PM
Updated : 14 June 2021, 12:38 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে সোমবার ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৪৯ রানে জিতেছে আবাহনী। এই জয়ে তারা পয়েন্টের দিক থেকে ধরে ফেলল প্রাইম ব্যাংককে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শিরোপাধারীদের ইনিংসের ১৯তম ওভারে বৃষ্টি নামে। তাদের ইনিংসের সমাপ্তি হয় সেখানেই। সে সময় দলটির স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১৮১।

শেখ জামাল পায় ১৩ ওভারে ১৪৮ রানের লক্ষ্য। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে দলটি করতে পারে মাত্র ৯৮।

আগের ম্যাচে অপরাজিত ৯২ রানের দারুণ ইনিংস খেলা মুনিম এবার করেন ৭৪। জেতেন টানা দ্বিতীয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার। চলতি আসরে প্রথম ফিফটিতে ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই মোহাম্মদ নাঈম শেখকে হারায় আবাহনী। দ্বিতীয় ওভারে ছক্কা হাঁকানো বাঁহাতি এই ওপেনার নাসির হোসেনকে বেরিয়ে এসে ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন লংঅফে।

চলতি আসরে প্রথম ফিফটির পথে নাজমুল হোসেন শান্তর একটি শট।

এর আগে তৃতীয় ওভারে ইবাদত হোসেনকে ছক্কায় ওড়ানোর পর টানা দুই বলে চার মারেন মুনিম। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এই তরুণ চড়াও হন নাসিরের ওপর। অফ স্পিনারকে টানা দুই বলে চার-ছক্কা মারার পর মারেন আরেকটি চার। প্রথম ৬ ওভারে আবাহনী তোলে ১ উইকেটে ৫৯।

উইকেটের চারপাশে শট খেলতে থাকেন মুনিম। বাড়তে থাকে রান। দ্বাদশ ওভারে জিয়াউর রহমানকে লংঅন দিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় এই ওপেনার থামেন ৭৪ রানে। তার ৪০ বলের ইনিংসে তিন ছক্কার পাশে চার ৯টি। ভাঙে ৮৮ রানের জুটি।

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির মাস সেরার পুরস্কার জয়ের দিনে রানের খাতা খুলতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। ইবাদতের অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে লেগে খেলার চেষ্টায় ফিরেন শূন্য রানে।

পরের ওভারে জিয়াকে ছক্কায় ওড়ান শান্ত। অফ স্পিনার এনামুল হকের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৩৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। চলতি আসরে তার প্রথম।

অষ্টাদশ ওভারে এনামুলের ওপর চড়াও হন মোসাদ্দেক হোসেন ও শান্ত। দুটি ছক্কার পর একটি চার মারেন মোসাদ্দেক, শান্তর ব্যাট থেকে আসে একটি চার। ওভারে সব মিলিয়ে অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার দেন ২৩ রান।

১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সালাউদ্দিনের বলে পয়েন্টে সৈকত আলির হাতে ক্যাচ দিয়ে থামেন মোসাদ্দেক। বৃষ্টির জন্য আবাহনীর ইনিংসের সমাপ্তিও এখানেই।

শান্তর সঙ্গে ৬২ রানের জুটিতে ১৫ বলে ২৬ রান করেন মোসাদ্দেক। ৪২ বলে দুই ছক্কা ও ছয় চারে ৬৫ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত।

শুরু থেকে শেখ জামালের প্রয়োজন ছিল ওভার প্রতি ১১ রানের বেশি। সব ব্যাটসম্যানই ছিলেন বড় শট খেলার আশায়। কিন্তু কেউই বড় করতে পারেননি নিজের ইনিংস।

প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় শেখ জামাল। সৈকতকে কট বিহাইন্ড করেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তিনে নেমে ঝড় তোলার আভাস দিয়েছিলেন জিয়া। একটি করে ছক্কা ও চারে ৪ বলে ১১ রান করা এই অলরাউন্ডারকে বিদায় করেন তানজিম হাসান।

শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবকে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো আবাহনী।

পঞ্চম ওভারে তিন উইকেট নিয়ে শেখ জামালের আশা প্রায় শেষ করে দেন মেহেদি হাসান রানা। বাঁহাতি এই পেসারের বলে মিড অফে ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েস। দ্রুত রানের চেষ্টায় থাকা নুরুল হাসান সোহান ডিপ এক্সট্রা কাভারে আফিফ হোসেনের চমৎকার ক্যাচে থামেন। দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফিরেন তানবীর হায়দার।

প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে দশের ঘর ছাড়াতে পারেন কেবল সোহান। শেখ জামাল অধিনায়ক দুটি করে ছক্কা ও চারে ১১ বলে করেন ২২। শেষের দিকে ২৩ বলে ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধান কমান এনামুল।

১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আবাহানীর সফলতম বোলার মেহেদি রানা। ১৬ রানে ২ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার আরাফাত সানি।

৯ ম্যাচে সপ্তম জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে আবাহনী। রান রেটে এগিয়ে শীর্ষে প্রাইম ব্যাংক। সমান ম্যাচে চতুর্থ ম্যাচে হারা শেখ জামাল ১০ পয়েন্ট নিয়ে আছে সপ্তম স্থানে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী: ১৮.২ ওভারে ১৮১/৪ (নাঈম ১০, মুনিম ৭৪, শান্ত ৬৫*, মুশফিক ০, মোসাদ্দেক ২৬; ইবাদত ৩-০-২০-১, সালাউদ্দিন ৩.২-০-২৭-১, নাসির ২-০-২৪-১, হালিম ৩-০-৩০-০, জিয়া ৪-০-৩৬-১, ইলিয়াস সানি ১-০-১২-০, এনামুল ২-০-৩২)

শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব: (১৩ ওভারে লক্ষ্য ১৪৮) ১৩ ওভারে ৯৮/৮ (সৈকত ১, ইমরুল ৮, জিয়া ১১, সোহান ২২, তানবীর ১, নাসির ৬, ইলিয়াস সানি ৫, এনামুল ২৯*, হালিম ৩, ইবাদত ৯*; সাইফ ৩-০-১৯-১, তানজিম ২-০-২৬-১, মেহেদি রানা ৩-০-১৬-৩, আরাফাত সানি ৩-০-১৬-২, আমিনুল ২-০-২১-১)

ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৪৯ রানে জয়ী আবাহনী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুনিম শাহরিয়ার