সাকিবের আচরণ নিয়ে প্রতিবেদনের অপেক্ষায় সিসিডিএম

মাঠে বসেই সাকিব আল হাসানের অবিশ্বাস্য আচরণ দেখেছেন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা সিসিডিএমের কর্তারা। তবে এই বিষয়ে তাদের কোনো করণীয় নেই। সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ জানালেন, নিয়ম অনুযায়ীই হবে সব। আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির প্রতিবেদনের পর আচরণবিধি অনুযায়ী নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত।     

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2021, 01:39 PM
Updated : 11 June 2021, 01:52 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার দুপুরে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ম্যাচে তিন দফায় বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দেন সাকিব। প্রথমবার লাথি মারেন স্টাম্পে, একটু পর তিন স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন। পরে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় অশালীন ভঙ্গি করেন আবাহনীর ড্রেসিং রুম বা গ্যালারির দিকে। সে সময় তিনি ও আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ তেড়ে যান পরস্পরের দিকে।

ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি পরিচালক ও সিসিডিএম প্রধান কাজী ইনাম জানান, সাকিবের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। 

“দেখেন খেলার মাঠে অনেক কিছুই হয়। আজকে আবাহনী-মোহামেডানের খেলা ছিল এবং এখানে বেশ উত্তেজনা ছিল, কিছু ঘটনাও ঘটেছে। সাকিব আল হাসানকে আমরা দেখতে পেয়েছি। এটা ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউব লাইভেও ছিল। তাই আপনারা সবাই দেখতে পেয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”

“ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে উত্তপ্ত একটি মুহূর্ত এসে যেতে পারে, কিন্তু আমরা আশা করি, সবসময় খেলোয়াড় তাদের মেজাজ ধরে রাখবে। যাই হোক, এটা স্বীকৃত ম্যাচ, এখানে নিয়ম আছে। ম্যাচ রেফরি, আম্পায়ার্স, তারা একটা রিপোর্ট দিবেন। আশা করছি, আজ তাদের রিপোর্ট আসবে। সব রুলস কিন্তু আছে, কোনো নিয়ম ভাঙলে নিয়ম অনুযায়ীই সব হবে।”

কাজী ইনাম মনে করেন, আবাহনী ও মোহামেডান ম্যাচে উত্তেজনা থাকাই উচিত। কিন্তু মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব যা করেছেন তা কোনোভাবে তার কাম্য নয়।

“দেখেন ম্যাচের মধ্যে অনেক সময় কোনো কারণে খেলোয়াড় উত্তেজিত হয়ে যেতেই পারে, কিন্তু তাদের সবার বিশেষ করে সিনিয়র খেলোয়াড়দের অবশ্যই মেজাজ ধরে রাখতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজকের ম্যাচে সেটা হয়নি। কিন্তু আমার এটাও বলতে হবে আমি নিজেও ছোটবেলা থেকে আবাহনীর সাপোর্টার।…এরা সবাই পেশাদার খেলোয়াড়, আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। আজ যা হলো ভালো কোনো উদাহরণ নয়।”

“ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ক্রিকেটে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কখনও তার সিদ্ধান্ত আপনার পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু খেলাটা তো চালিয়ে যেতে হবে। আমি জানি না সিদ্ধান্ত কি ছিল তবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”

ঘটনার সূত্রপাত আবাহনীর রান তাড়ার পঞ্চম ওভারে। ১৪৬ রান তাড়ায় সাকিবের প্রথম ওভারে টানা দুই বলে ছক্কা-চার মারেন আবাহনী অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ওই ওভারের শেষ বলে মুশফিকের প্যাডে লাগে বল। বোলার সাকিব আম্পায়ারের দিকে তাকিয়ে আবেদন করার দুই-তিন সেকেন্ডের মধ্যেই এগিয়ে বাঁ পায়ে লাথি মারেন স্টাম্পে। আম্পায়ার ইমরান পারভেজের সঙ্গে ক্ষীপ্ত ভঙ্গিতে কথা বলতেও দেখা যায় তাকে। এই পর্ব চলে বেশ কিছুক্ষণ।

পরের ওভারের পঞ্চম বলের পর বৃষ্টি শুরু হলে মাঠকর্মীদের দিকে ইশারায় কাভার আনতে বলেন আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। সাকিব তখন আবার আম্পায়ারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলতে থাকেন কিছু একটা। এরপর হুট করে তিনটি স্টাম্পই তুলে আছাড় মারেন মাটিতে।

এবারও আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক হয় তার। এবার এক পর্যায়ে গিয়ে উপড়ে ফেলা স্টাম্পের একটি নিয়ে উল্টো করে আবার মাটিতে পোঁতার চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে।

মাঠে উত্তপ্ত পরিস্থিতির শেষ পর্ব সাকিবরা মাঠ ছাড়ার সময়। আবাহনীর ড্রেসিং রুম বা গ্যালারির দিকে অশালীন ভঙ্গি করেন তিনি। এসময় আবাহনীর ড্রেসিং রুমের বাইরে থেকে তার দিকে কিছু বলতে বলতে এগিয়ে যান কোচ খালেদ মাহমুদ। তেড়ে আসেন সাকিবও। মোহামেডানের ক্রিকেটারদের কয়েকজন তখন থামান সাকিবকে। মাঠ ছাড়ার সময় মোহামেডানেরই শামসুর রহমান দৌড়ে আবাহনীর ড্রেসিং রুমের দিকে গিয়ে থামান খালেদ মাহমুদকে।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে শেষ পর্যন্ত সাকিবের মোহামেডান জিতেছে ৩১ রানে।