মুশফিক-মোসাদ্দেকের ব্যাটে আবাহনীর দারুণ জয়

ম্যাচ জেতানো ইনিংস আগেও ছিল দুটি। কিন্তু লিগে এবার ফিফটি ছিল না মুশফিকুর রহিমের। মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে তো রানই ছিল না তেমন। এবার একসঙ্গেই দুজন পেলেন ফিফটির দেখা। তাদের অবিচ্ছিন্ন শতরানের জুটিতে আবাহনী পেল দারুণ এক জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2021, 12:20 PM
Updated : 8 June 2021, 12:21 PM

ব্যাটিং-বোলিং, দুই ইনিংসেই শুরুটা দুর্দান্ত করেও ধরে রাখতে না পেরে হেরে গেল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ম্যাচে আবাহনী লিমিটেড জিতল ৭ উইকেটে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সৌম্য সরকারের ফিফটিতে গাজী গ্রুপ ২০ ওভারে তোলে ১৫০ রান। আবাহনী শুরুতে খুঁড়িয়ে এগোলেও পরে দারুণ গতিময়তায় ছুটে জিতে যায় ১২ বল বাকি রেখেই।

৩৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক, ২৮ বলে ৫০ মোসাদ্দেক।

দুজনের ১০৫ রানের জুটি এসেছে কেবল ৬০ বলেই।

অথচ ম্যাচের শুরুটা গাজী গ্রুপের ছিল দাপুটে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে ৭ ওভারেই ৭০ রান এনে দেন দুই ওপেনার মেহেদি হাসান ও সৌম্য।

এই জুটিকে ৭৮ রানে থামান এবারের লিগে প্রথমবার মাঠে নামা আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। এই লেগ স্পিনারের প্রথম ওভারেই স্লগ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন মেহেদি। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ বলে ৪৩।

সৌম্যর সৌজন্যে গাজীর ইনিংস ছুটতেই থাকে। ১১.১ ওভারেই স্পর্শ করে দলের শতরান।

ওই ওভারে দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় মুমিনুল হকের রান আউট থেকেই ইনিংসের মোড় বদলের শুরু। চারে নামা ইয়াসির আলি চৌধুরি সিঙ্গেল বের করতেই হিমশিম খেতে থাকেন।

গাজী গ্রুপকে দারুণ শুরু এনে দেন সৌম্য সরকার ও মেহেদি হাসান।

সৌম্য অবশ্য চেষ্টা করে যান নিজের মতো করে। শহিদুল ইসলামের বল পূর্ব গ্যালারির দোতলায় পাঠিয়ে ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৬ বলে। লিগে যেটি তার টানা দ্বিতীয় ফিফটি। পরের বলে জায়গা বানিয়ে বাউন্ডারি মারেন কাভার দিয়ে।

কিন্তু এরপর একের পর এক উইকেটের পতনে দিশা হারায় গাজী গ্রুপের ইনিংস। ইয়াসিরের ভোগান্তি শেষ হয় আমিনুলকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে (১৬ বলে ৯)। সাইফ উদ্দিনের সোজা বল স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। তানজিম হাসান সাকিবের সোজা বলে স্লগ করে বোল্ড জাকির হাসান।

শহিদুলের করা শেষ ওভারে গাজী গ্রুপ উইকেট হারায় তিনটি। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫০ বলে ৬৭ রান করে সৌম্য ফেরেন শেষের আগের বলে।

শেষ ৫ ওভারে গাজী গ্রুপ হারায় ৬ উইকেট, রান ওঠে কেবল ২৫।

সেই হতাশা ভুলে বোলিংয়ের শুরুটা বেশ ভালো করে তারা। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও নাজমুল হাসান শান্তকে অল্পতে হারায় আবাহনী। ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ৮ ওভারের বেশি টিকে শেষ পর্যন্ত বিদায় নেন ৩৩ বলে ২৮ রান করে।

নবম ওভারে আবাহনীর রান তখন ৩ উইকেটে ৪৮। জয়ের জন্য প্রয়োজন ওভারপ্রতি প্রায় ১০ করে।

মুশফিক যথারীতি উইকেটে গিয়েই দারুণ খেলে বাড়াতে থাকেন রান। এক-দুই নেওয়ার সঙ্গে বাউন্ডারিও আদায় করেন নিয়মিত। মোসাদ্দেক শুরুতে একটু সময় নেন।

মুশফিকের রান যখন ২৫ বলে ৩৪, মোসাদ্দেকের তখন ১২ বলে ১০। পরে আরিফুল হকের টানা দুই বলে চার-ছক্কায় ডানা মেলে দেন মোসাদ্দেক। আর তাকে থামানো যায়নি। মুকিদুল ইসলামের বলে নান্দনিক শটে ছক্কা মারেন এক্সট্রা কাভার দিয়ে, সঞ্জিত সাহার বলে মাথার ওপর দিয়ে।

৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় আগে ফিফটিতেও পৌঁছে যান তিনিই। ৯০ টি-টোয়েন্টিতে এটি তার মাত্র তৃতীয় ফিফটি। সবশেষটি ছিল ২১ ম্যাচ আগে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে।

মোসাদ্দেক পঞ্চাশে পা রাখার পরের বলে সঞ্জিতকে চার মেরে নিজের ফিফটি আর দলের জয় একসঙ্গে পেয়ে যান মুশফিক। ম্যাচ সেরাও তিনিই।

আগের ম্যাচে খেলাঘরের কাছে হারের ধাক্কা সামলে আবাহনী ফিরল জয়ে, পাঁচ ম্যাচে তাদের চতুর্থ জয়। শিরোপার আশায় লিগ শুরু করা গাজী গ্রুপ পাঁচ ম্যাচে হারল তিনটিতেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গাজী গ্রুপ: ২০ ওভারে ১৫০/৮ (মেহেদি ৪৩, সৌম্য ৬৭, মুমিনুল ১২, ইয়াসির ৯, মাহমুদউল্লাহ ৫, জাকির ১, আরিফুল ৫, আকবর ১*, মুকিদুল ০; সাইফ ৪-০-২৪-১, তানজিম ৪-০-৩৩-১, শহিদুল ৪-০-৪১-২, আরাফাত সানি ২-০-১৩-০, আমিনুল ৪-০-১৯-২, আফিফ ১-০-৫-০, মোসাদ্দেক ১-০-১৪-০)।

আবাহনী: ১৮ ওভারে ১৫৩/৩ (নাঈম ১০, মুনিম ২৮, শান্ত ৫, মুশফিক ৫৩*, মোসাদ্দেক ৫০* ; নাসুম ৪-০-৩২-১, মেহেদি ৩-০-১২-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২৫-১, সঞ্জিত ৪-০-২১-১, মুকিদুল ২-০-২৯-০, আরিফুল ২-০-২২-০)।

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ : মুশফিকুর রহিম।