মুশফিকের আবাহনীকে হারিয়ে দিল উজ্জীবিত খেলাঘর

ক্রিকেটীয় শক্তি-সামর্থ্য কিংবা মাঠের বাইরের প্রভাব-প্রতিপত্তি বা ঐতিহ্য, কোনো কিছুতে দুই দলের তুলনাই চলে না। আবাহনী সেখানে যোজন যোজন এগিয়ে। কিন্তু ২২ গজের লড়াইয়ে এসব সমীকরণ উল্টে যাওয়ার নজির তো কম নেই। খেলাঘর যেমন দেখাল আরেকবার। দারুণ দলীয় পারফরম্যান্সে তারা হারিয়ে দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও শিরোপা প্রত্যাশী আবাহনীকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2021, 07:50 AM
Updated : 7 June 2021, 08:49 AM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির শেষ ওভারে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচে আবাহনী লিমিটেডকে ৮ রানে হারিয়ে দিল খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি।

বিকেএসপিতে সোমবার ইমতিয়াজ হোসেনের ৪৬ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে খেলাঘর ২০ ওভারে তোরে ১৬৪ রান। সেই চ্যালেঞ্জের পিছু ছুটে মুশফিকুর রহিমের আবাহনী থমকে যায় ১৫৬ রানে।

লিগে চার ম্যাচে আবাহনীর এটি প্রথম হার, খেলাঘরের দ্বিতীয় জয়।

ম্যাচের শেষ বলের আগ পর্যন্ত কেবল ৪টি উইকেট হারায় আবাহনী, কিন্তু রান-বলের টানাপোড়েন মেটাতে পারেনি তারা। শেষ ৫ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান। আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন এই পুরো সময় খেলেও পারেননি দলকে জেতাতে। জাতীয় দলেও দুজনের যা ভূমিকা, তাতে তাদের এই ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের জন্যও ভালো বার্তা নয়।

আবাহনী হোঁচট খায় রান তাড়ার শুরুতেই। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে অফ স্পিনার রনি চৌধুরি দ্রুত ফেরান মুনিম শাহরিয়ার ও মুশফিককে।

আগের ম্যাচে ঝড়ো সূচনা করা মুনিম ইনিংসের তৃতীয় বলেই ক্যাচ দেন রনিকে স্লগ করতে গিয়ে। রনির পরের ওভারে সু্ইপ করে বাউন্ডারি মারেন তিনে নামা মুশফিক। কিন্তু প্রিয় এই শট আরও একবার ডেকে আনে তার পতন। বাউন্ডারির ওভারেই আরেকবার সুইপ করার চেষ্টায় অল্পের জন্য বেঁচে গিয়ে পরের বলে আবার একই চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান আবাহনী অধিনায়ক (৫ বলে ৮)।

৪ ওভার শেষে আবাহনীর রান ২ উইকেটে ১৩। নাজমুল হোসেন শান্ত নেমে একটু বাড়ান রানের গতি। রনির পরপর দুই বলে চার-ছক্কার পর টানা দুটি বাউন্ডারি মারেন মাসুম খানকে।

মোহাম্মদ নাঈম শেখ যথারীতি শুরু করেন ধীরগতিতে। এক পর্যায়ে রান ছিল তার ১৫ বলে ৭। পরে কয়েকটি বাউন্ডারিতে একটু বাড়ান রানের গতি। জমে যায় দুজনের জুটি। ৫৯ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন দুজন।

রানের দাবি মেটাচ্ছিলেন যিনি, সেই শান্তর বিদায়েই ভাঙে জুটি। রাফসান আল মাহমুদের অফ স্পিন উড়িয়ে মারায় চেষ্টায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন স্কয়ার লেগে (৩৩ বলে ৪৯)।

থিতু হওয়া নাঈমের কাঁধে ভার তখন দলকে এগিয়ে নেওয়ার। প্রত্যাশিত গতি যদিও পাচ্ছিলেন না তিনি। সৈয়দ খালেদ আহমেদকে পুল করে ছক্কায় যা একটু ইঙ্গিত দেন, পরের বলেই আবার একই চেষ্টায় উড়ে যায় তার বেলস। তার ৪৯ রানের ইনিংসে বল লাগে ৪২টি।

সেখান থেকে আফিফ-মোসাদ্দেকের জুটিতে একটু একটু করে দূরে সরে যায় জয়। মাসুমকে এক ওভারে চার-ছক্কা মেরে আফিফ কিছুটা আশা জাগালেও পারেননি আর পরে। মোসাদ্দেক ব্যাটে-বলেই লাগাতে পারেননি ঠিকমতো।

শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৭ রানের। খালেদের করা ওভারের প্রথম চার বলে কেবল সিঙ্গেলই নিতে পারেন আফিফ-মোসাদ্দেক। পঞ্চশ বলে মোসাদ্দেক একটি বাউন্ডারি পেলেও আউট হয়ে যান শেষ বলে।

ওই একটি বাউন্ডারিতেই মোসাদ্দেকের রান ১৯ বলে ২১, আফিফ অপরাজিত ১৮ বলে ২২ রানে। দলের চাওয়া পূরণ হয়নি তাতে।

খেলাঘর জয়ের ভিত গড়ে ম্যাচের প্রথম ভাগে। ইমতিয়াজের সঙ্গে আফসান ও মেহেদী হাসানের মিরাজের কার্যকর দুটি ইনিংস এগিয়ে নেয় দলকে।

ম্যাচের শুরুতেই মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে কাভার-পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন ইমতিয়াজ। ওই ওভারে রাফসানের ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি। ৪ ওভারে দুজন তোলে ৪২ রান।

আরাফাত সানির ফুল টসে সীমানায় ধরা পড়ে রাফসানের ইনিংস থামে ১২ বলে ১৮ রান করে। দ্বিতীয় উইকেটে ইমতিয়াজ ও মিরাজ গড়েন ৬২ রানের জুটি।

আগের ম্যাচে ফিফটির পর মিরাজ এবার করেন ২৫ বলে ৩৩। ইমতিয়াজ দলকে আরও টেনে নিয়ে থামেন ৬৬ রানে। ৬ চারের সঙ্গে তার ইনিংসে ছক্কা ৩টি।

পরের ব্যাটসম্যানরা তেমন কিছু করতে না পারলেও খেলাঘর পেয়ে যায় ভালো পুঁজি। দারুণ বোলিংয়ে পরে আদায় করে নেয় তারা স্মরণীয় জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

খেলাঘর: ২০ ওভারে ১৬৪/৬ (ইমতিয়াজ ৬৬, রাফসান ১৮, মিরাজ ৩৩, জহুরুল ৫, মইনুল ৭, সালমান ১৩, মাসুম ৪*, রিশাদ ৮*; সাইফ উদ্দিন ৪-০-২৭-১, আরাফাত সানি ৪-০-২৫-২, তানজিম ৪-০-৩৩-১, তাইজুল ২-০-২১-০, শহিদুল ৩-০-২৯-০, মোসাদ্দেক ৩-০-২৪-২)।

আবাহনী:  ২০ ওভারে ১৫৬/৫ (মুনিম ০, নাঈম ৪৯, মুশফিক ৮, শান্ত ৪৯, মোসাদ্দেক ২১, আফিফ ২২*; রনি ৩-০-২৩-২, মাসুম ৪-০-৪০-০, মিরাজ ৪-০-১৯-০, নোমান ৪-০-৩৫-০, খালেদ ৪-০-৩৫-২, রাফসান ১-০-৫-১)।

ফল: খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতি ৮ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমতিয়াজ হোসেন।