তামিমদের জয়ে নায়ক নাঈম

তানভির ইসলামের বলে জোরালো আবেদন, সাড়া দিলেন না আম্পায়ার। ব্যাটসম্যান নাঈম হাসানের রান তখন শূন্য। সুমন খানের বলে লং অনে ক্যাচের সুযোগ, ফসকে গেল সাজ্জাদুল হকের হাত থেকে। ব্যাটসম্যান এবারও নাঈম। ম্যাচ তখনও দোদুল্যমান। শেষ পর্যন্ত সেই নাঈমই গড়ে দিলেন ম্যাচের ভাগ্য। দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে তার ছোট্ট কার্যকর ইনিংসে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল প্রাইম ব্যাংক।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2021, 04:12 PM
Updated : 2 June 2021, 04:12 PM

১১৯ রানের পুঁজি নিয়েও দারুণ জয়ের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। তবে তারুণ্যনির্ভর দলটি বাগে পেয়েও হারাতে পারেনি অভিজ্ঞতায় ঠাসা ফেবারিট প্রতিপক্ষকে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে বুধবার প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব তিন উইকেটে জিতেছে তিন বল বাকি থাকতে। 

বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে নাঈম অবদান রাখেন শাইনপুকুরকে অল্প রানে আটকে রাখতে। সেই রান তাড়ায়ও ব্যাটিং ধসে যখন হারের মুখে প্রাইম ব্যাংক, নাঈমের ১৬ বলে অপরাজিত ১৮ রানের ইনিংস তখন দলের জন্য হয়ে ওঠে মহামূল্য।

প্রাইম ব্যাংকের রান তাড়ায় প্রথম বলেই রবিউল ইসলাম রবিকে কাট করে এনামুল হকের বাউন্ডারিতে। ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি আসে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকেও।

এনামুল থমকে যান পরের ওভারেই। সুমন খানের বল খোঁচা মেরে প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক বিদায় নেন ঠিক আগের ম্যাচের মতোই ৭ বলে ৫ করে।

তবে তামিম ও রনি তালুকদার দলকে এগিয়ে নেন অনায়াসেই। দুজনের দারুণ সব শটে দলের রানও বাড়তে থাকে গতিময়তায়। তাদের পথ হারানোর শুরু নিজেদের ভুলেই।

২৭ বরে ৩২ করে তামিম রান আউট হন দ্বিতীয় রানের চেষ্টায়, যেখানে দায় তার নিজেরই। একই পথের পথিক হন মোহাম্মদ মিঠুনও। তৃতীয় রানের জন্য তিন দফায় ঝুঁকে হেলায় হারান নিজের উইকেট।

এরপর তানভির ইসলামের চমক। এক ওভারেই এই বাঁহাতি স্পিনার ফেরান অলক কাপালী ও নাহিদুল ইসলামকে। দুজনই ধরা পড়েন স্লিপে তানজিদ হাসানের হাতে। তিন ওভারের মধ্যে ১৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন হতচকিত প্রাইম ব্যাংক। দলের রান ৬ উইকেটে ৭৫!

শরিফুল ইসলাম নেমে আউট হয়ে যান একটি করে ছক্কা ও চার মেরেই। এরপর অভিজ্ঞ রকিবুল হাসান ও নাঈম দলকে পার করান শেষের বৈতরণি। নাঈমকে সঙ্গ দিয়ে রকিবুল অপরাজিত থাকেন ৩৪ বলে ১৮ রান করে।

ম্যাচের শুরুটা ছিল সাব্বির হোসেন ও নাহিদুলের দ্বৈরথ দিয়ে। নাহিদুলের অফ স্পিন দিয়ে বোলিং শুরু করে প্রাইম ব্যাংক। প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন সাব্বির। তৃতীয় ওভারে নাহিদুলকেই ছক্কায় ওড়ান লং অন দিয়ে। তবে জয়টা শেষ পর্যন্ত বোলারেরই। ওই ওভারেই জোরের ওপর করা বলে পুল করার চেষ্টায় উপড়ে যায় সাব্বিরের অফ ও মিডল স্টাম্প।

পরের জুটিতে রানের গতি অনেকটাই যায় থমকে। দীর্ঘক্ষণ উইকেটে কাটিয়েও ছন্দ পাননি তানজিদ ও রবিউল ইসলাম। ২০ বলে ১৮ করে ফেরেন রবিউল। ২৮ বল খেলে তানজিদের প্রাপ্তি মোটে ২১।

ব্যাটিংয়ের আগে বল হাতে নাঈম ছিলেন দলের সেরা।  

এমনিতে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত হলেও লিগের দুই ম্যাচেই অচেনা চেহারায় বাঁহাতি এই তরুণ। আগের ম্যাচে দুই ছক্কার পরও ৩০ করেছিলেন ৩০ বলে।

রবিউল-তানজিদকে দিয়ে শুরু হয় শাইনপুকুরের ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া। ৫ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় তারা। অফ স্পিনার নাঈম নেন তিন উইকেট, বাঁহাতি স্পিনার মনির হোসেন দুটি।

এই সময়টায় একটা পাশ আগলে রেখে দলকে একশ পার করান তৌহিদ হৃদয়। ২৫ বলে ২৯ রানের ইনিংসে শাইনপুকুর অধিনায়ক একটি ছক্কা মারেন শরিফুলকে আপার কাট করে। শেষ দিকে রবিউল হকের ১৩ বলে ১৬ করে আরেকটু বাড়ান দলের রান।

সেই রানে লড়াই জমল, উত্তেজনাও ছড়াল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাইনপুকুরের জয় পাওয়া হলো না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শাইনপুকুর: ২০ ওভারে ১১৯ (সাব্বির ১৫, তানজিদ ২১, রবিউল ইসলাম ১৮, তৌহিদ ২৯, মাহিদুল ০, মৃত্যুঞ্জয় ২, সাজ্জাদুল ৪, রবিউল হক ১৬*, সুমন ৪, মুরাদ ১, তানভির ০; নাহিদুল ৪-০-২২-১, শরিফুল ৪-০-২৭-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২৫-১, মনির ৪-০-১৫-২, নাঈম ৪-০-২৪-৩)।

প্রাইম ব্যাংক:  ১৯.৩ ওভারে ১১৯/৭ (এনামুল ৫, তামিম ৩১, রনি ২৬, মিঠুন ৬, রকিবুল ১৮*, অলক ১, নাহিদুল ০, শরিফুল ১২, নাঈম ১৮*; রবিউল ইসলাম ৪-০-২৮-০, সুমন ৪-১-২৪-১, মুরাদ ৪-০-২৭-১, রবিউল হক ৩-০-২৭-০, তানভির ৪-০-১২-৩, সাব্বির ০.৩-০-২-০)।

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৩ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাঈম হাসান।