শেষটায় মলিন বাংলাদেশ

সিরিজে নিখুঁত ম্যাচ আর খেলা হলো না বাংলাদেশের। উল্টো আগের দুই ম্যাচের চেয়ে খারাপ করল তিন বিভাগেই। এর মাশুল দিতে হলো বড় ব্যবধানে হেরে। কুসল পেরেরার সেঞ্চুরি ও দুশমন্থ চামিরার পাঁচ উইকেটে জয় দিয়ে সিরিজ শেষ করল শ্রীলঙ্কা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2021, 11:55 AM
Updated : 28 May 2021, 06:35 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার তৃতীয় ওয়ানডেতে ৯৭ রানে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। সফরকারীদের ২৮৬ রান তাড়ায় ৪৫ বল বাকি থাকতে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে প্রথম পয়েন্ট পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জেতা বাংলাদেশ থাকছে শীর্ষেই।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মন্থর হয়ে আসা উইকেটে স্বাগতিকদের ইনিংসে মূল আঘাতটা করেন চামিরা। ৯ ওভারে ১৬ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা গতিময় এই পেসার। তার দারুণ বোলিংয়েই দুইশ রানের নিচে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ইনিংসে পঞ্চাশ রানের জুটি কেবল একটি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মাহমুদউল্লাহর ৫৩। দলের আর কেউ ছুঁতে পারেননি ৩০।

লঙ্কানদের ইনিংসে পঞ্চাশ রানের জুটি তিনটি। তিনটিতেই ছিলেন সিরিজে তাদের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান পেরেরা। ৬৬, ৭৯ ও ৯৯ রানে তিনবার জীবন পাওয়া বাঁহাতি এই ওপেনার করেন ১২২ বলে ১২০ রান। তার অধিনায়কোচিত ইনিংসে ১১টি চারের পাশে একটি ছক্কা।

শুরুতে লাইন-লেংথ পেতে একটু সংগ্রাম করলেও শেষ পর্যন্ত তাসকিনই বাংলাদেশের সফলতম বোলার। ৪৬ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। লঙ্কানদের বিপক্ষে এটা তার সেরা বোলিং। ২০১৭ সালে ডাম্বুলায় ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ৪৭ রানে।

সিরিজে প্রথমবার টস জিতে ব্যাটিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি পেরেরাকে। তার সঙ্গে দানুশকা গুনাথিলাকার উদ্বোধনী জুটিতে উড়ন্ত সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা।

বোলিংয়ে লাইন ও লেংথে ততটা ধারাবাহিক ছিলেন না বোলাররা। সঙ্গে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। দ্রুত এগোতে থাকে শ্রীলঙ্কা। ৪০ বলে স্পর্শ করে তারা পঞ্চাশ।

পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে লঙ্কানরা তুলে ফেলে ৭৭ রান। দুই ওপেনার এগোচ্ছিলেন প্রায় এক তালে। দ্বাদশ ওভারে জোড়া আঘাতে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান তাসকিন।

অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন গুনাথিলাকা। ভাঙে ৮২ রানের জুটি। দুই দল মিলিয়ে এটাই সিরিজের সেরা ওপেনিং জুটি। ওই ওভারের শেষ বলে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হন পাথুম নিসানকা।

দুই কুসলের ব্যাটে জোড়া ধাক্কা সামাল দেয় শ্রীলঙ্কা। সহ-অধিনায়ক কুসল মেন্ডিসের সঙ্গে মিলে দলকে এগিয়ে নেন পেরেরা। সাকিব আল হাসানের বলে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় মুস্তাফিজুর রহমানকে কঠিন ক্যাচ দিয়ে প্রথমবার বেঁচে যান পেরেরা। সে সময় তার রান ছিল ৬৬।

সাকিবের ওভারেই পরে ৭৯ রানে পেরেরার ক্যাচ ছাড়েন আফিফ হোসেন। পরের ওভারে বোলিং ফিরে প্রথম বলেই ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন। মিড অফে ধরা পড়েন মেন্ডিস।

ষষ্ঠ সেঞ্চুরির ঠিক আগে আবার জীবন পান কুসল। ৯৯ রানে মুস্তাফিজের বলে লঙ্কান অধিনায়কের ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ।

তিন অঙ্ক ছুঁয়ে অবশ্য রানের গতি বাড়াতে পারেননি তিনি। তবে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে গড়ে তোলেন ৬৫ রানের আরেকটি ভালো জুটি। বাঁহাতি পেসার শরিফুলের বলে চমৎকার এক ক্যাচে পেরেরাকে থামান মাহমুদউল্লাহই।

দলে ফেরা নিরোশান ডিকভেলা রান আউট হয়ে বিদায় নেন দ্রুত। ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে দেননি তাসকিন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখা ধনাঞ্জয়া দলকে নিয়ে যান তিনশ রানের কাছে। ৭০ বলে চারটি চারে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন মিলিয়ে ২৩ ওভার বোলিং করে উইকেটশূন্য। ওয়ানডেতে এর চেয়ে বেশি বোলিং করে কেবল একবার কোনো উইকেট পাননি বাংলাদেশের স্পিনাররা।

ব্যাটিংয়ে নেমে চামিরার ছোবলে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকেই ফিরিয়ে দেন এই পেসার।

লিটন দাসের জায়গায় সুযোগ পেয়ে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ফিরেন কেবল ১ রান করে। চামিরার বলে দৃষ্টিকটু শটে বাঁহাতি এই ওপেনার ফিরেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।

চামিরাকে ঠিকমতো পুল করতে না পেরে মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন সাকিব। তিনে ফেরার সিরিজ ভালো কাটল না বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। তিন ম্যাচ মিলিয়ে করতে পারলেন কেবল ১৯ রান। আম্পায়ারের সংশয়পূর্ণ এক সিদ্ধান্তে কট বিহাইন্ড হয়ে থামেন তামিম। 

২৮ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা টানেন মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেক। আগের দুই ম্যাচের মতো এবার অবশ্য কাজ শেষ করতে পারেননি মুশফিক। অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে এগিয়ে এসে ছক্কার চেষ্টায় ২৮ রানে থামেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। ভাঙে ৫৬ রানের জুটি।

ততক্ষণে থিতু হয়ে গেছেন মোসাদ্দেক। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জমে তার জুটি। পাঁচে নামা মোসাদ্দেকের কাছে পরিস্থিতির দাবি ছিল ঠাণ্ডা মাথার বড় ইনিংস। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রিভার্স সুইপে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। ৭২ বলে খেলা তার ৫১ রানের ইনিংসে তিনটি চারের পাশে একটি ছক্কা।

এরপর খুব একটা সঙ্গ পাননি মাহমুদউল্লাহ। শেষে তাকে ফিরিয়েই বাংলাদেশকে দুইশ রানের নিচে থামিয়ে দেন বিনুরা ফার্নান্দো।

একটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ২৩৭ রান করা মুশফিকুর রহিম জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (গুনাথিলাকা ৩৯, কুসল পেরেরা ১২০, নিসানকা ০, কুসল মেন্ডিস ২২, ধনাঞ্জয়া ৫৫*, ডিকভেলা ৭, হাসারাঙ্গা ১৮, রমেশ ৮*; শরিফুল ৮-০-৫৬-১, মিরাজ ১০-০-৪৮-০, মোসাদ্দেক ৩-০-৩২-০ তাসকিন ৯-০-৪৬-৪, মুস্তাফিজ ১০-০-৪৭-০, সাকিব ১০-০-৪৮-০)।

বাংলাদেশ: ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ (তামিম ১৭, নাঈম ১, সাকিব ৪, মুশফিক ২৮, মোসাদ্দেক ৫১, মাহমুদউল্লাহ ৫৩, আফিফ ১৬, মিরাজ ০, তাসকিন ০, শরিফুল ৮, মুস্তাফিজ ০*; ধনাঞ্জয়া ৪-০-১৪-০, চামিরা ৯-১-১৬-৫, বিনুরা ৬.৩-০-৩৩-১, চামিকা ৬-০-৩৪-০, হাসারাঙ্গা ১০-০-৪৭-২, রমেশ ৭-০-৪০-২)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ৯৭ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ

ম্যান অব দা ম্যাচ: দুশমন্থ চামিরা

ম্যান অব দা সিরিজ: মুশফিকুর রহিম