বিশ্বকাপ পর্যন্ত ডমিঙ্গোর বিকল্প দেখছে না বিসিবি

ফিসফাস-গুঞ্জন যা ছিল, তাতে বাংলাদেশ দলে রাসেল ডমিঙ্গোর শেষের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু সেসবের আপাতত সমাপ্তি বলেই ধরে নেওয়া যায় এখন। মহামারীর কঠিন পরিস্থিতিতে একরকম যেন বাধ্য হয়েই তাকে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচের দায়িত্বে রেখে দেওয়ার আভাস দিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2021, 04:47 AM
Updated : 24 May 2021, 04:47 AM

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি সিরিজের আগ পর্যন্ত ডমিঙ্গোর কোচিংয়ে দলের যা পারফরম্যান্স, তাতে স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো মেয়াদ শেষের আগেই বাড়ির পথ ধরতে হতো তাকে। কিন্তু এখন উল্টো মিলছে তার মেয়াদ বাড়ার ইঙ্গিত।

২০১৯ সালের অগাস্টে দুই বছরের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকান এই কোচকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ। সেই হিসেবে তার দায়িত্ব শেষ হওয়ার কথা আগামী অগাস্টে।

আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বদলে যাওয়া বিশ্বে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে একজন মানসম্পন্ন কোচ পাওয়া হবে ভীষণ কঠিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেই বাস্তবতার কথাই তুলে ধরলেন বিসিবি প্রধান।  

“এখানে দুই-তিনটা ব্যাপার আছে। প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা তার চুক্তি নবায়ন করব, কী করব না। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, যদি না করি, তাহলে তো আমাদের বিকল্প একজন থাকতে হবে। থাকতে হবে তো? কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপের আগে এ রকম কিছু আমাদের কাছে নাই। এটাই বাস্তবতা।”

ভালো কোচ পাওয়া কঠিন, তাছাড়া আপাতত দম ফেলারও ফুরসত নেই বাংলাদেশ দলের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজ খেলে আগামী মাসে জিম্বাবুয়ে সফরে যাবে তারা। এরপর দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে দল অংশ নেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। 

ব্যস্ত সূচি ও মহামারীকালীন বাস্তবতাই যা ডমিঙ্গোর পক্ষে, দলের ফল মোটেও নয়। দয়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে সংস্করণে সবচেয়ে বেশি উন্নতির কথা বারবার বলেছেন তিনি, যে সংস্করণে সংস্কৃতি পাল্টে দেওয়ার তাগিদ জানিয়েছেন, সেই টেস্টেই ফল সবচেয়ে খারাপ।

২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর স্টিভ রোডসকে সরিয়ে দেয় বিসিবি। সেই বছর সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করেন ডমিঙ্গো। তার কোচিংয়ে শুরু হয় বিব্রতকর এক হার দিয়ে। টেস্টের নতুন দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে হেরে যায় বাংলাদেশ।

ডমিঙ্গো কোচ হয়ে আসার পর এই সংস্করণে কেবল একটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, দেশের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বাকি আট ম্যাচের সাতটিতেই হার, ড্র একটি।

হারের ধরনগুলোও বেশ বিব্রতকর। ২০১৯ সালে ভারত সফরে দুটি টেস্টই বাংলাদেশ হারে ইনিংস ব্যবধানে এবং তিন দিনের মধ্যে। গড়তে পারেনি ন্যুনতম প্রতিরোধও।

কন্ডিশন ও ভারত দলে পেসারদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ কেমন। তবুও বিস্ময়কর ভাবে পেসের বদলে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কেন্দ্রে ছিল স্পিন সামলানো! শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হারে বাজেভাবে। সবুজ ঘাসের উইকেটে ভারতীয় পেসের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি দল।

পেস বোলিং খেলার প্রস্তুতি নেওয়ার পরও ফল খুব একটা আলাদা নাও হতে পারত। কিন্তু প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল স্পষ্ট।

পরে পাকিস্তানের মাটিতেও একটি টেস্ট ইনিংস ব্যবধানে হারে মুমিনুল হকের দল।

দেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের একটা অভ্যাস গড়ে উঠছিল কয়েক বছর আগে। সেটাও যেন ভেস্তে যেতে বসেছে। তার কোচিংয়ে হারতে হয়েছে দেশে চার টেস্টের তিনটিতেই। ২০১৮ সালে দেশের মাটিতে যাদের হোয়াইওয়াশড করেছিল বাংলাদেশ, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি বছরের শুরুতে হোয়াইটওয়াশড হতে হয়। দুই দলের প্রস্তুতির, টেস্টকে গুরুত্ব দেওয়ায় যে পার্থক্য, তার ছাপ যেন পড়ে সেই সিরিজে।   

বাংলাদেশে আসার পর থেকে লাল বলের ক্রিকেটের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দল। অন্যদিকে, স্বাগতিকরা প্রস্তুতি শুরু করে অনেক দেরিতে, ওয়ানডে সিরিজ শেষে। সাদা বলের পরিকল্পনায় না থাকলেও টেস্ট দলের বোলারদের ব্যবহার করা হয় ওয়ানডে দলের নেটে। টেস্ট দলের মূল পেসার আবু জায়েদ চৌধুরিকে তো শুধু শুধু খেলানো হয় একটি ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচে! 

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে বাংলাদেশই একমাত্র দল, যাদের নেই কোনো জয়। পয়েন্ট সাকল্যে কেবল ২০।

ফল যা একটু ভালো, সেটা ওয়ানডেতেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি সিরিজের আগে এই সংস্করণে নয়টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। জয় ছয়টি, হার তিনটিতে। গত বছরের মার্চে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশড করে। আর গত জানুয়ারিতে খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একইভাবে হারিয়ে শুভ সূচনা করে আইসিসি ওয়ানেড সুপার লিগে। তবে কঠিন পরীক্ষা ছিল যেখানে, সেখানে ঠিকই ব্যর্থ দল। নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে হারতে হয় সব ম্যাচ।

টি-টোয়েন্টিতে ডমিঙ্গোর কোচিংয়ে ১৪ ম্যাচের ৬টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, এর চারটিই এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় একটি করে। হেরেছে বাকি ৮ ম্যাচে।

সব মিলিয়ে ডমিঙ্গোর কোচিংয়ে এখন পর্যন্ত উন্নতির ছাপ খুব একটা মেলেনি। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক এর মধ্যে কয়েকবারই বলেছেন, টেস্টে আগের জায়গাতেই আছে বাংলাদেশ। 

দলের একের পর এক বাজে পারফরম্যান্সে গত কিছু দিন ধরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ডমিঙ্গোকে নিয়ে। উত্তাপ নিজেও টের পাচ্ছেন। শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ফিরে চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, এসব তিনি গায়ে মাখছেন না, উদ্বিগ্ন নন চাকরি নিয়ে। এখন, সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতিও তাকে নির্ভার থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে।