বিশ্বকাপের পথে এগিয়ে চলার আরেকটি সিরিজ

বিশ্বকাপের জন্য দল গোছানো জরুরি। একই সমান বা আরও বেশি জরুরি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলি এখন প্রতিটি দলের জন্যই ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের আঁচ লাগছে বাংলাদেশ দলে। শ্রীলঙ্কা তো বিশ্বকাপকে ভাবনায় রেখে দলের খোলনলচেই পাল্টে ফেলেছে। বিশ্বকাপ এখনও আড়াই বছর পরে, কিন্তু বিশ্ব আসরের হাওয়া বইতে শুরু করেছে এখনই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2021, 02:24 PM
Updated : 22 May 2021, 07:19 PM

দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোর রঙ এভাবে পাল্টে গেছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগ চালু হওয়ায়। বেশির ভাগ সিরিজই এখন এই সুপার লিগের অংশ, যা আদতে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। বিশ্বকাপের দল গড়ে তোলা আর সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করা, দুই অভিযানে এগিয়ে চলার পথে এবার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে রোববার মুখোমুখি হবে দুই দল। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দিন-রাতের ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর একটায়।

সুপার লিগে বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত খেলেছে দুটি সিরিজ। জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর মার্চে নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে পেতে হয়েছে ঠিক উল্টো স্বাদ। ছয় ম্যাচে তিনটি করে জয়-পরাজয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৩০। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে দুটি জয় পেলেও বাংলাদেশ উঠে যাবে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।

তবে দুই জয় পরে, আগে বাংলাদেশের চাওয়া থাকবে প্রথম ম্যাচ জয়। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সেই জয়ের পর থেকে তিন সংস্করণ মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচে জয়ের দেখা নেই দলের। দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, নতুন রূপে এগিয়ে চলা কিংবা ড্রেসিং রুমে একটু স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দেওয়া, সবকিছুর জন্যই একটি জয় এখন বহুকাঙ্ক্ষিত।

যথারীতি বাংলাদেশের বড় ভরসার জায়গা থাকবেন সাকিব আল হাসান। ছবি : বিসিবি।

বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো অবশ্য সাম্প্রতিক ব্যর্থতা নিয়ে ভাবতেই নারাজ। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার সেই চিরায়ত আশা আবার তার কণ্ঠে শোনা গেল সিরিজ শুরুর আগের দিন।

“এটা ঠিক, ফলাফলের দিক থেকে আমরা খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তবে গত দুই মাসের ভুলগুলি থেকে শিখতে হবে আমাদের। অতীতে পড়ে থেকে লাভ নেই। সামনে তাকাতে হবে। কালকের ম্যাচে আমরা যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে জয়ের ভালো সুযোগ তৈরি হবে।”

“ফলাফল সবসময় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে আমাদের প্রস্তুতি, মানসিকতা, ভাবনা, এসব আমাদের হাতেই। আমরা এসবই ঠিকঠাক করতে পারি।”

জয়ের পাশাপাশি কোচ হিসেবে ডমিঙ্গোর ভাবনায় রাখতে হচ্ছে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ দলের সম্ভাব্য ছবিও। এখন যারা দলের বড় ভরসা, দুই বছর পর তারা থাকতে নাও পারেন! বর্তমানের জয় আর ভবিষ্যতের দল, দুটির সমন্বয় করাকেই তিনি মনে করছেন এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

“আমরা জানি, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ এবং পয়েন্ট পাওয়ার (সুপার লিগের) হাতছানি আছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে দৃষ্টি রাখাও জরুরি। দুটির সমন্বয় তাই গুরুত্বপূর্ণ। কে জানে, দুই বছর পর সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিকদের হয়তো পাওয়া যাবে না! আরও কিছু ক্রিকেটার গড়ে তোলা তাই নিশ্চিত করতে হবে, যারা প্রয়োজন হলে এই মানের ক্রিকেটারদের অভাব পূরণ করতে পারে।”

নতুনদের গড়ে তোলার সেই পরিকল্পনায় প্রথম ম্যাচের ভাবনায় জোরালো ভাবেই থাকবেন আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান। সাত নম্বরে ব্যাটিং ও স্পিন বোলিং দিয়ে দলে জায়গা পাওয়ার লড়াই হবে তাদের সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেনের। শেষ পর্যন্ত হয়তো এই তিন জনের একজন জায়গা পাবেন একাদশে।

শ্রীলঙ্কার অনুশীলনে বোলিং করছেন আকিলা দনাঞ্জয়া। ছবি : বিসিবি।

পেস বোলিংয়ে সেই দাবি যেমন জানাবেন তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন থাকবেন নাকি অভিষেক হবে শরিফুলের, কৌতূহল থাকবে সেখানে।

শ্রীলঙ্কার বাস্তবতাও বলা যায় একইরকম। কদিন আগেই দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছে তারা। কিন্তু ওয়ানডে দল নিয়ে বড় বাজির আশ্রয় নিয়েছে তারা বিশ্বকাপে চোখ রেখে। একগাদা সিনিয়রকে বাদ দিয়ে দল ঢেলে সাজিয়েছে কুসল পেরেরাকে অধিনায়ক ও কুসল মেন্ডিসকে সহ-অধিনায়ক করে। নতুন অধ্যায় মসৃণ করে তুলতে জয় দিতে শুরু করতে মরিয়া থাকবে তারাও।

পাশাপাশি সুপার লিগে প্রথম পয়েন্টের স্বাদও পেতে চাইবে লঙ্কানরা। তিন ম্যাচ খেলে এখনও পর্যন্ত কোনো পয়েন্ট নেই তাদের, উল্টো মন্থর ওভার রেটের কারণে হারাতে হয়েছে দুই পয়েন্ট।

মাঠের এসব কারণের বাইরে তাদের জ্বালানি হিসেবে আছে মাঠের বাইরের একটি কারণও। কেন্দ্রীয় চুক্তি নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে তাদের। দুই পক্ষের আলোচনা চলছে, সিরিজ শেষেও চলবে। এই সিরিজ জিততে না পারলে আলোচনার টেবিলে কণ্ঠের জোরও তাদের কমে যাবে নিশ্চিতভাবেই।

সব মিলিয়ে লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। ক্রিকেটীয় মান হয়তো খুব উঁচুতে থাকবে না, তবে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের রসদের কমতি নেই এই সিরিজে।