লড়াইয়ের ইতি টানছেন লড়িয়ে ওয়াটলিং

নিউ জিল্যান্ড দলে বিজে ওয়াটলিংয়ের পরিচয় ‘ক্রাইসিস ম্যান।’ অনেক লড়াই করে গড়া তার ক্যারিয়ার, দলের বিপদে বরাবরই চওড়া তার ব্যাট। উইকেটের পেছনেও গ্লাভস হাতে আস্থার প্রতিশব্দ। তার সেই পরিশীলিত পথচলা থেমে যাচ্ছে এবার। নিউ জিল্যান্ডের এই কিপার বাটসম্যানের ঘোষণা, আর কেবল একটি সিরিজ খেলেই শেষ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 05:11 AM
Updated : 12 May 2021, 05:11 AM

আগামী মাসের ইংল্যান্ড সফর দিয়েই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরে যাচ্ছেন ওয়াটলিং। এই সফরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্টের পর ভারতের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবে নিউ জিল্যান্ড।

৩৫ বছর বয়সী এই কিপার ব্যাটসম্যানের ৭৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে যোগ হবে তাই সর্বোচ্চ আর কেবল তিন টেস্ট। ক্যারিয়ারে ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন ২৮টি, টি-টোয়েন্টি ৫টি। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ওয়াটলিংয়ের ক্যারিয়ার টেস্ট ক্রিকেটময়।

মূলত কিপার হলেও তার টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ২০০৯ সালে নেপিয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকে ড্র ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ৬২ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস। তবে ওপেনিং ও তিন নম্বর মিলিয়ে প্রথম বছর তিনেক সেভাবে সুবিধে করতে পারেননি। তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা শুরু করার পর।

ব্রেন্ডন ম্যাককালাম টেস্টে কিপিং ছেড়ে দিলে পথ সুগম হয় ওয়াটলিংয়ের। কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম টেস্টেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১২ সালে খেলেন ১২০ রানের ইনিংস। তার পর থেকে কেবল এগিয়ে চলা। এই ভূমিকায় নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন দেশের ইতিহাসের সেরা হিসেবে।

৭৩ টেস্টে ৮ সেঞ্চুরিতে তার রান ৩ হাজার ৭৭৩। কিপার হিসেবে ৬৫ টেস্টে ৭ সেঞ্চুরিতে রান ৩ হাজার ৩৮১। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে ৩ হাজার রান নেই আর কোনো কিপারের। সেঞ্চুরিতেও তিনি সবার ওপরে। কিউইদের হয়ে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা একমাত্র কিপার-ব্যাটার তিনিই। তার ২৫৭ ডিসমিসালও দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে সবশেষ টেস্ট খেলেন ২০১৫ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলিতে সেই টেস্টে করেন সেঞ্চুরি।

কিপার হিসেবে তিনি টেকনিক্যালি দারুণ। ব্যাটসম্যান হিসেবে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা আর হার না মানসিকতার প্রতিচ্ছবি। লোয়ার-অর্ডারদের নিয়ে লড়াই করে অনেকবারই তিনি দলকে উদ্ধার করেন দলকে।

২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে গড়েন ৩৫২ রানের জুটি, টেস্টে যা সর্বোচ্চ উইকেটের বিশ্বরেকর্ড। পরের বছর একই ভেন্যুতে সেই জুটি ছাড়িয়ে ৩৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েন কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে। ২০১৬ সালে অবশ্য সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে ৩৯৯ রানের জুটি গড়েন ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টো ও বেন স্টোকস।

২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরির পথে মিচেল স্যান্টনারের সঙ্গে গড়েন ২৬১ রানের জুটি, সপ্তম উইকেটে যা নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অবশ্য চোট তাকে ভুগিয়েছে বেশ। এবার হতে যাচ্ছে সবকিছুর শেষ।

প্রায় এক যুগ ধরে টেস্ট ক্রিকেট রাঙিয়েছেন ওয়াটলিং। তার বিদায়ের বিবৃতিতেও তাই ফুটে উঠল টেস্টের প্রতি ভালোবাসা।

“এটিই সঠিক সময় (বিদায়ের)। নিউ জিল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করতে পারা ছিল অনেক বড় সম্মান, বিশেষ করে টেস্ট ব্যাগি (ক্যাপ) পরতে পারা। টেস্ট ক্রিকেটই খেলাটির সর্বোচ্চ চূড়া এবং সাদা পোশাকে সতীর্থদের সঙ্গে প্রতিটি মিনিট আমি উপভোগ করেছি।”

“ পাঁচদিনের লড়াইয়ের পর ড্রেসিং রুমে বসে ছেলেদের সঙ্গে বিয়ারে চুমুক দেওয়া আমি সবচেয়ে বেশি মিস করব। গ্র্রেট কিছু ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার, দারুণ কিছু বন্ধু পেয়েছি। এই পথচলায় পাশে পেয়েছি অনেককে, সেজন্য সবসময় কৃতজ্ঞ থাকব।”

পরিবারকে সময় দিতেই বিদায়ের সিদ্ধান্ত, জানালেন তিনি।

“ আমার স্ত্রী জেস আমার বরাবরের স্থিতিশীলতা ও সমর্থনের উৎস। ওর সঙ্গে ও বাচ্চাদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে মুখিয়ে আছি আমি। আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য এ সবসময় পাশে থাকার জন্য মায়ের প্রতিও কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার।”

নিউ জিল্যান্ডের কোচ গ্যারি স্টিডের প্রতিক্রিয়ায় ফুটে উঠল ওয়াটলিংয়ের নিবেদন ও লড়াকু মানসিকতার কথা।

“ বিজে (ওয়াটলিং) অসাধারণ এক ক্রিকেটার ও মানুষ। খেলায় উন্নতির জন্য সে কঠোর পরিশ্রম করে ও সবসময় দলকে সবার ওপরে রাখে। সতীর্থ ও প্রতিপক্ষরা তাকে যে সম্মান করে, সেটা থেকেই খেলায় তার অবস্থান ফুটে ওঠে। তার রেকর্ডই তার হয়ে কথা বলে। গত দশকে টেস্টে দলের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইতে যে ইনিংস সে খেলেছে, আমার দেখা সেরা ইনিংসগুলির একটি সেটি।”

“ প্রতিটি দিন, প্রতিটি সেশনে যে লড়াই, যে মানসিকতা সে মেলে ধরে, সেটিই তাকে দলের মহামূল্য সদস্য করে তুলেছে।”