বড় হারের চোখ রাঙানিতে শেষ দিনে বাংলাদেশ

লক্ষ্য তো ধরাছোঁয়ার বাইরেই, হারও অনেকটা নিশ্চিত। দেখার ছিল কেবল, লড়াই কতটা করতে পারে বাংলাদেশ। সেখানেও অবস্থা তথৈবচ। লড়াইয়ের ইঙ্গিতগুলো পূর্ণতা পেল না কিছু বাজে শট, শ্রীলঙ্কার ভালো বোলিং আর উইকেটের অবস্থা মিলিয়ে। বাংলাদেশের অপেক্ষায় তাই বড় পরাজয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2021, 09:46 AM
Updated : 2 May 2021, 12:10 PM

শেষ দিনে ম্যাচ নিতে পারাকে যদি সাফল্য হিসেবে ধরা হয়, তাহলে অবশ্য সফল বাংলাদেশ! পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ ইনিংসে ৪৩৭ রানের লক্ষ্যে নেমে চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৭৭।

আলেকস্বল্পতায় রোববার দিনের খেলা ১২ ওভার আগেই শেষ হয়, ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম দিনে।

শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৬০ রান। এই লক্ষ্য তাড়া করা তো বহুদূর, প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলা দলের জন্য টিকে থাকাও কঠিন।

ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম পাঁচ জনই থিতু হন, পেরিয়ে যান ২০। কিন্তু কেউ যেতে পারেননি ফিফটি পর্যন্ত। প্রতিটি জুটি ৩০ ছুঁয়েও কোনোটিতেই হয়নি পঞ্চাশ।

দুই দফায় জীবন পেয়ে, অনেক ঝুঁকি নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪০ রানে আউট হওয়া মুশফিকুর রহিম দলের সর্বোচ্চ স্কোরার।

বাকিদের মধ্যে তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন দারুণ ডেলিভারিতে, সাইফ হাসান ও মুমিনুল হক ফেরেন উইকেট উপহার দিয়ে।

কঠিন চ্যালেঞ্জে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম যথারীতি শুরু করেন দারুণ কিছু শটের মহড়ায়। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সুরাঙ্গা লাকমলকে বাউন্ডারি মারেন ব্যাকফুট পাঞ্চে। নতুন বলে শুরু করা অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসকে ছক্কা মারেন চোখধাঁধানো এক ইনসাইড আউট শটে।

মেন্ডিসই পরে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ফেরান তামিমকে। স্টাস্পে পিচ করা বল টার্ন ও বাউন্সে তামিমের ব্যাটের একপাশে আলতো ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। টানা চার ফিফটির পর এবার তামিম আউট ২৬ বলে ২৪ করে।

এই মেন্ডিসকে একটু পর ছক্কা মারেন সাইফ। বেশ কিছু শট খেলে এই ওপেনার চেষ্টা করেন ইতিবাচক থাকার। কিন্তু বেশি শট খেলার চেষ্টাই কাল হয় তার। বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন কাভার পয়েন্টে। ততক্ষণে চার টেস্টের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসটি অবশ্য খেলতে পারেন তরুণ ওপেনার, তবে সেটি কেবলই ৩৪ রানের।

চা বিরতির একটু আগে জয়াবিক্রমা থামান শান্তকেও (২৬)। উইকেটের ক্ষতে পিচ করে বল বিশাল টার্ন নিয়ে শান্তর ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত করে স্টাম্পে।

এই তিন জনের মতো মুমিনুলও শুরু করেন বেশ আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে। জয়াবিক্রমার দুই ওভারে বাউন্ডারি মারে দুটি করে। উইকেটে জমেও যান দ্রুত। কিন্তু শেষটা দারুণ হতাশার। মেন্ডিসের স্টাম্পের বাইরের বল থার্ডম্যানে খেলার চেষ্টা করেন অযথাই, ব্যাটের কানায় লেগে বল আসে স্টাম্পে।

মুশফিক ৬ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান জয়াবিক্রমার বলে, ৩১ রানে মেন্ডিসের বলে তার সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ ছাড়েন নিরোশান ডিকভেলা। বারবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে, সুইপ-রিভার্স সুইপ খেলে ঝুঁকি নিয়ে এগোতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত মেন্ডিসের বাড়তি লাফানো বল তার গ্লাভসে ছোবল দিয়ে আশ্রয় নেয় লেগ স্লিপে।

লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ বাকি সময়টা টিকে থাকেন কোনোরকমে। দুজনকেই আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার, তারা রক্ষা পান রিভিউ নিয়ে।

সকালে ২ উইকেটে ১৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে। দারুণ ফর্মে থাকা দিমুথ করুনারত্নে করেন ৬৬। তাইজুল ইসলাম নেন ৫ উইকেট, টেস্ট ক্যারিয়ারে যা তার অষ্টম।

এরপর বোলিংয়ে তারা তৈরি করে ফেলেছে জয়ের পথ। বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারে কেবল বৃষ্টিই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৩/৭ (ডি.)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৫১

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৭/২) ৪২.২ ওভারে ১৯৪/৯ (ডি.) (করুনারত্নে ৬৬, ম্যাথিউস ১২, ধনাঞ্জয়া ৪১, নিসানকা ২৪, ডিকভেলা ২৪, মেন্ডিস ৮, লাকমল ১২, জয়াবিক্রমা ৩*; মিরাজ ১৪-৩-৬৬-২, শরিফুল ১-০-৮-০, তাইজুল ১৯.২-২-৭২-৫, তাসকিন ৪-০-২৬-১, সাইফ ৪-০-২২-১)।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪৩৭) ৪৮ ওভারে ১৭৭/৫ (তামিম ২৪, সাইফ ৩৪, শান্ত ২৬, মুমিনুল ৩২, মুশফিক ৪০, লিটন ১৪*, মিরাজ ৪*; লাকমল ৪-২-১৪-০, মেন্ডিস ২০-০-৮৬-৩, জয়াবিক্রমা ২০-৫-৫৮-২, ধনাঞ্জয়া ৪-০-১৬-০)