বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ দিল শ্রীলঙ্কা

স্পিন সহায়ক উইকেটেও বাংলাদেশের স্পিনে দেখা গেল না ধার। বাঁধ দেওয়া গেল না তাই শ্রীলঙ্কার রান প্রবাহে। প্রথম সেশনে ওভারপ্রতি প্রায় পাঁচ রান করে তুলে এগিয়ে গেল লঙ্কানরা দারুণ গতিতে। লাঞ্চের পর লিড আরও বাড়িয়ে অবশেষে তারা ঘোষণা করল ইনিংস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2021, 07:29 AM
Updated : 2 May 2021, 07:54 AM

পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ৪৩৭ রান।

টেস্টের চতুর্থ দিনে রোববার লাঞ্চের মিনিট ১৫ পর শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ১৯৪ রানে। প্রথম ইনিংসে লঙ্কানদের লিড ছিল ২৪২ রানের।

৫ উইকেটের স্বাদ পান বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। যদিও তাতে ভালো বোলিংয়ের চেয়ে বেশি অবদান লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তোলার তাড়নার।

টেস্ট ইতিহাসেই এত রান তাড়া করে জয়ের কোনো নজির নেই। বাংলাদেশ তো কখনও ২১৫ রানের বেশি তাড়া করেও জিততে পারেনি। দেশের বাইরে চতুর্থ ইনিংসে তাদের ২৮২ রানের বেশি নেই।

উইকেটে যেভাবে স্পিন ধরছে, তাতে প্রকৃতিই কেবল উদ্ধার করতে পারে বাংলাদেশকে।

চতুর্থ সকালে লঙ্কানদের চাওয়া ছিল দ্রুত রান। বাংলাদেশের আলগা বোলিংয় দিমুথ করুনারত্নে, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভারা সেই চাওয়া পূরণ করেন সহজেই। প্রথম সেশনে ৩২ ওভার খেলে লঙ্কানা যোগ করেন ১৫৫ রান।

আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান করুনারত্নে ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস নিজেদের চাওয়া বুঝিয়ে দেন দিনের শুরু থেকেই। তৃতীয় ওভারে ক্রিজে থেকেই তাইজুলকে লং অফ দিয়ে ছক্কায় ওড়ান ম্যাথিউস। পরে মিরাজকে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন করুনারত্নে।

তবে ম্যাথিউস টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। তাইজুলের ঝুলিয়ে দেওয়া বল পিচ করে সোজা গিয়ে একটু বাড়তি লাফিয়ে ছোবল দেয় তার ব্যাটে, শর্ট লেগে ক্যাচ নেন বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলি চৌধুরি।

লঙ্কানদের অগ্রযাত্রা তাতে ব্যহত হয়নি। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে অনায়াসেই দলের রান বাড়ান করুনারত্নে। এই জুটির ফিফটি আসে কেবল ৫০ বলেই! স্পিনারদের বলে বাউন্ডারি আসতে থাকে নিয়মিতই।

করুনারত্নের ক্যাচ নিয়ে ইয়াসির আলির উল্লাস। শর্ট লেগে দারুণ দুটি ক্যাচ নেন এই বদলি ফিল্ডার। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।

করুনারত্নেকে তাকে ১৬ রানে ফেরানোর একটি সুযোগ অবশ্য পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাইজুলের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ নিতে পারেননি ইয়াসির।

সকালে মেহেদী হাসান মিরাজের ৬ ওভার থেকেই আসে ৩২ রান। বাধ্য হয়ে সাইফ হাসানকে আনতে হয় বোলিংয়ে। অনিয়মিত এই অফ স্পিনারই ভাঙেন ৮২ বলে ৭৩ রানের জুটি।

করুনারত্নের ফ্লিক শট সরাসরি যায় শর্ট লেগে। চোখের পলকে আসা বল দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচে পরিণত করেন ইয়াসির। সাইফ পান প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ।

ব্যাট হাতে অসাধারণ সিরিজের শেষ ইনিংসে করুনারত্নে থামেন ৭৮ বলে ৬৬ রানে।

এটি তার ক্যারিয়ারের সেরা টেস্ট সিরিজ। ৩ ইনিংসে রান করলেন ৪২৮। তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে ৩৫৬।

অধিনায়কের পর ধনাঞ্জয়াও বিদায় নেন দ্রুত। মিরাজকে দারুণ এক ছক্কা মারার পরের বলেই আউট হন তিনি ৫২ বলে ৪১ করে। কিপার লিটনের ঊরুতে লেগে বল যায় স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে।

এরপর ৩১ বলে ২৪ করে পাথুম নিসানকা আউট হন তাইজুলকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায়। নিরোশান ডিকভেলা যথারীতি বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ২৪ রান করে আউট হন তাসকিনের শর্ট বলে।

লাঞ্চের পর রমেশ মেন্ডিস ও সুরাঙ্গা লাকমলের উইকেট নিয়ে তাইজুল পূর্ণ করেন টেস্টে তার অষ্টম ৫ উইকেট। লাকমল অবশ্য একটি করে চার-ছক্কায় রান ঠিকই বাড়ান। তার আউটের সঙ্গেই ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৩/৭ (ডি.)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৫১

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৭/২) ৪২.২ ওভারে ১৯৪/৯ (ডি.) (করুনারত্নে ৬৬, ম্যাথিউস ১২, ধনাঞ্জয়া ৪১, নিসানকা ২৪, ডিকভেলা ২৪, মেন্ডিস ৮, লাকমল ১২, জয়াবিক্রমা ৩*; মিরাজ ১৪-৩-৬৬-২, শরিফুল ১-০-৮-০, তাইজুল ১৯.২-২-৭২-৫, তাসকিন ৪-০-২৬-১, সাইফ ৪-০-২২-১)।