৩৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার চতুর্থ পছন্দের স্পিনার ছিলেন প্রাভিন জয়াবিক্রমা। স্কোয়াডে সুযোগ পান অন্য তিন স্পিনারের ফিটনেস সমস্যায়। সেই জয়াবিক্রমাই অভিষেক টেস্টে উপহার দিলেন রেকর্ড বোলিং। দারুণ শুরুর পর শেষ দিকে একের পর এক উইকেট দ্রুত হারিয়ে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের ইনিংস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2021, 11:23 AM
Updated : 1 May 2021, 12:09 PM

পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ ২৫১ রানেই। ২৪২ রানে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কা ফলো-অন না করিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় লিড আরও বাড়ানোর।

উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশ তোলে ৯৭ রান, এক পর্যায়ে রান ছিল ৩ উইকেটে ২১৪। সেখান থেকে ৩৭ রানের মধ্যে তারা হারায় শেষ ৭ উইকেট।

দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতে ২ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানদের রান ১৭। ৮ উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে তারা ২৫৯ রানে।

উইকেটে যেভাবে টার্ন ও বাউন্স পাচ্ছেন স্পিনার, এই লিড এখনই অনেক বড়। চতুর্থ দিনে ক্রমেই হয়তো তা চলে যাবে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সব মিলিয়ে তৃতীয় দিনে পতন হয়েছে ১৩ উইকেটের। তাতে ১০ উইকেট বাংলাদেশের। অথচ শুরুটা তাদের ছিল দারুণ আশা জাগানিয়া।

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের ৯২ রানের ইনিংসের পর ফিফটির কাছে আউট হন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। আর কেউ রাখতে পারেননি বলার মতো অবদান।

৯২ রানে প্রাভিন জয়াবিক্রমার শিকার ৬ উইকেট। শ্রীলঙ্কার হয়ে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এখন ২২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনারের। বাংলাদেশের বিপক্ষে সব দেশ মিলিয়েই কোনো অভিষিক্ত বোলারের এটি প্রথম ৬ উইকেট।

১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকায় উপুল চন্দনার ১৭৯ রানে ৬ উইকেট ছিল অভিষেকে শ্রীলঙ্কার আগের সেরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে আগের সেরা বোলিংও ছিল এক শ্রীলঙ্কানের, ২০১৮ সালে আকিলা দনাঞ্জয়ার ২৪ রানে ৫ উইকেট।

শনিবার ম্যাচের তৃতীয় সকালে মিনিট ১৫ ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করে ৭ উইকেটে ৪৯৩ রানে। ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন তামিম। সাইফ হাসান নড়বড়ে শুরু করলেও টিকে গিয়ে সঙ্গ দেন তামিমকে।

আগের টেস্টের মতোই চোখধাঁধানো সব শটের পসরা সাজিয়ে ছুটতে থাকেন তামিম। লঙ্কান পেসাররা পাত্তা পাননি তার ব্যাটে। রমেশ মেন্ডিস ও জয়াবিক্রমার স্পিন আক্রমণে আসার পরও পাল্টা আক্রমণে তাদের দমিয়ে দেন তিনি।

৫৭ বলে ৮ চারে স্পর্শ করেন তিনি টেস্টে টানা চতুর্থ ফিফটি। এগিয়ে যান ফিফটি ছাড়িয়েও।

সময়ের সঙ্গে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন সাইফও। মেন্ডিসকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারার পর টানা দুটি চার মারেন দারুণ ড্রাইভে।

দুজনের সৌজন্যে গত চার বছরের মধ্যে সেরা উদ্বোধনী জুটি পায় বাংলাদেশ। কিন্তু শতরান পর্যন্ত যেতে পারেনি এই জুটি। জয়াবিক্রমাকে প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ দিয়ে সাইফ ফেরেন ২৫ রানে।

সেই উইকেটের রেশ থাকতেই ধরা দেয় আরেক উইকেট। লাঞ্চের আগে শেষ বলে নাজমুল হোসেন শান্ত ধরা পড়েন স্লিপে। আগের টেস্টে ১৬৩ রানের ইনিংসের পর টানা দুই ইনিংসে ফিরলেন তিনি শূন্যতে।

৭০ রান নিয়ে লাঞ্চে যাওয়া তামিম বিরতির পর বেছে নেন সাবধানী ব্যাটিংয়ের পথ। মুমিনুলের সঙ্গে তার জুটি জমে ওঠে। কিন্তু সেঞ্চুরি আর পাওয়া হয় না তার।

টার্নিং উইকেটে অনেক সময়ই বেশি বিপজ্জনক হয় টার্ন না করা বল। তামিম যেটির শিকার। অ্যাঙ্গেল বদলে রাউন্ড দা উইকেট আসেন জয়াবিক্রমা। দ্বিতীয় বলটিই টার্ন করবে ভেবে খেলেন তামিম, বল সোজা গিয়ে তার ব্যাট ছুঁয়ে আশ্রয় নেয় স্লিপের হাতে।

আগের টেস্টে ৯০ ও অপরাজিত ৭৪ রানের পর এবার তামিম আউট হলেন ১৫০ বলে ৯২ করে।

মুশফিকের সাবলিল ব্যাটিংয়ে সেই ধাক্কা দল সামাল দেয় অনেকটাই। মুমিনুলের সঙ্গে তার জুটিও থিতু হয়ে যায়। কিন্তু আবারও বিরতির ঠিক আগে বিপত্তি।

চা বিরতির আগে শেষ ওভারে জয়াবিক্রমার জোরের ওপর করা সোজা ডেলিভারি ছোবল দেয় মুশফিকের প্যাডে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে উল্লাসে মাতে লঙ্কানরা। ৭ চারে ৪০ রানে শেষ হয় মুশফিকের ইনিংস। মুমিনুলের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটি থামে ৬৩ রানে।

৯২ রানে আউট হন তামিম ইকবাল, বাংলাদেশের আর কেউ করতে পারেননি ফিফটি। ছবি : শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।

তখনও খুব বাজে অবস্থা নয় বাংলাদেশের। কিন্তু চা বিরতির পর মুড়ি-মুড়কির মতো পড়তে থাকে উইকেট। বড় ভরসা মুমিনুলকে দিয়েই শুরু। ১ ও ১১ রানে জয়াবিক্রমার বোলিংয়ে দুইবার জীবন পেয়েও শেষ পর্যন্ত ফিফটি করতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। মেন্ডিসের ফুল টস বল দৃষ্টিকটুভাবে ইয়র্কার বানিয়ে এলবিডব্লিউ হন তিনি ৪৯ রানে।

পরের ওভারেই লিটনকে দারুণ ডেলিভারিতে ফেরান জয়াবিক্রমা। কিছুটা প্রতিরোধ গড়া মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে তিনি পূরণ করেন পাঁচ উইকেটের মাইলফলক। পরে তাসকিনকে ফিরিয়ে ধরেন ষষ্ঠ শিকার।

দ্বিতীয় নতুন বলে সুরাঙ্গা লাকমল নেন শেষ দুই উইকেট। শেষ আউট হওয়া ব্যাটসম্যান তাইজুল হিট উইকেট হন অদ্ভুতভাবে। ডিফেন্স করার চেষ্টায় ভারসাম্য হারিয়ে খুলে যায় তার একটি বুট, পা গিয়ে লাগে স্টাম্পে।

বিশাল লিডের পর শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা দ্রুত হারায় দুই উইকেট। মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন লাহিরু থিরিমান্নে। তাইজুলকে তেঁড়েফুড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন ওশাদা ফার্নান্দো।

শ্রীলঙ্কার তাতে খুব দুর্ভাবনার কিছু নেই। বরং ম্যাচ বাঁচানোর পথ খুঁজতে হবে বাংলাদেশকেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ১৫৯.২ ওভারে ৪৯৩/৭ (ডি.) (আগের দিন ৪৬৯/৬) (ডিকভেলা ৭৭*, মেন্ডিস ৩৩, আবু জায়েদ ২২-৪-৬৯-০, তাসকিন ৩৪.২-৭-১২৭-৪, মিরাজ ৩৬-৭-১১৮-১, শরিফুল ২৯-৬-৯১-১, তাইজুল ৩৮-৭-৮৩-১)।

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস :  ৮৩ ওভারে ২৫১ (তামিম ৯২, সাইফ ২৫, শান্ত ০, মুমিনুল ৪৯, মুশফিক ৪০, লিটন ৮, মিরাজ ১৬, তাইজুল ৯, তাসকিন ০, শরিফুল ০, আবু জায়েদ ; লাকমল ১০-০-৩০-২, বিশ্ব ৭-১-১৯-০, ম্যাথিউস ২-০-৭-০, মেন্ডিস ৩১-৭-৮৬-২, জয়াবিক্রমা ৩২-৭-৯২-৬, ধনাঞ্জয়া ১ -০-৬-০)।

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস : ৭ ওভারে ১৭/২ (থিরিমান্নে ২, করুনারত্নে ১৩*, ওশাদা ১, ম্যাথিউস ১*; মিরাজ ৪-২-৭-১, শরিফুল ১-০-৮-০, তাইজুল ২-১-২-১)।