নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে, বিদেশি ক্রিকেটারদের বিসিসিআই

ভারতে ভয়াবহ কোভিড পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে আইপিএল ছেড়ে দেশে ফিরে গেছেন বেশ কিছু বিদেশি ক্রিকেটার। টুর্নামেন্ট শেষে বাড়ি ফেরা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন অনেকে। তাদের আশ্বস্ত করতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) বলেছে, ক্রিকেটারদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে সব রকম ব্যবস্থা তারা করবে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2021, 04:18 PM
Updated : 27 April 2021, 04:18 PM

ভারতে কোভিড মহামারী ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে গত কিছুদিনে। আক্রান্তের সংখ্যায় রেকর্ড হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই, মৃত্যুও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আইপিএল চালানোয় হচ্ছে অনেক সমালোচনাও। তবে বিসিসিআই নিশ্চিত করেছে, টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাবেন তারা। যেটির ফাইনাল হওয়ার কথা আগামী ৩০ মে।

এমনিতে আইপিএলে খেলোয়াড়রা জৈব-সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেই থাকছেন। তবে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার তিন ক্রিকেটার-রাজস্থান রয়্যালসের অ্যান্ড্রু টাই, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরের অ্যাডাম জ্যাম্পা ও কেন রিচার্ডসন। টাই ফিরে গেছেন দেশে। ফেরার অপেক্ষায় আছেন জ্যাম্পা ও রিচার্ডসন। জৈব-সুরক্ষা বলয়ের মানসিক ধকলের কথা জানিয়ে আগেই দেশে ফিরে গেছেন রাজস্থানের ইংলিশ ব্যাটসম্যান লিয়াম লিভিংস্টোন। পরিবারের পাশে থাকতে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ভারতীয় অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। 

এমন পরিস্থিতিতে বিসিসিআইয়ের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেমাং আমিন মঙ্গলবার আইপিএলের সব দলকে একটি ই-মেইল পাঠিয়েছেন, যা দেখার দাবি করেছে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো। হেমাং আমিন খেলোয়াড়দের আশ্বস্ত করেছেন, জৈব-সুরক্ষা বলয়ে তারা নিরাপদেই থাকবেন।

“আমি আপনাদেরকে এমন এক সময়ে লিখছি, যখন ভারতে স্বাস্থ্যসেবা নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে। আইপিএলের দ্বিতীয় পর্ব শুরুর আগে আমরা বুঝতে পারছি, ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার কারণে কিছুটা উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। (চলে যাওয়া) খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। তাদের জন্য সব সময় আমাদের সমর্থন থাকবে। একই সঙ্গে আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, জৈব-সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আপনারা পুরো নিরাপদ।”

মহামারীকালে খেলোয়াড়দের ঝুঁকি ও ভ্রমণ কমিয়ে আনার জন্য এবারের আইপিএলে একই সময়ে দুটি ভেন্যুতে ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছে। প্রথম পর্ব হয়েছে মুম্বাই ও চেন্নাইয়ে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে সোমবার। এই পর্বের ম্যাচ হবে আহমেদাবাদ ও দিল্লিতে। এরপর খেলা হবে বেঙ্গালুরু ও কলকাতায়। সবশেষ প্লে-অফের ম্যাচগুলোর জন্য আইপিএল ফিরবে আহমেদাবাদে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় জৈব-সুরক্ষা বলয়কে আরও শক্তিশালী করার কথা জানিয়েছেন হেমাং আমিন। যেমন, আগে যেখানে প্রতি পাঁচ দিনে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানো হতো, এখন প্রতি দুই দিনে পরীক্ষা করানো হবে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে দলগুলোকে বাইরের অনুমোদিত হোটেল থেকে খাবার আনার অনুমতি দিলেও তা বাতিল করা হয়েছে।

তবে, টুর্নামেন্ট শেষ করে দেশে ফেরার প্রশ্নে বিদেশি ক্রিকেটার-কোচরা আছেন শঙ্কায়। অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে বিমান-যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আসর শেষে দেশে ফেরার জন্য ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থার জন্য অনুরোধ করেছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ক্রিস লিন। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, নিজস্ব ব্যবস্থায় দেশে ফিরতে হবে তাদের।

হেমাং আমিন জানান, টুর্নামেন্ট শেষে সবাইকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে বিসিসিআই। তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

“আমরা বুঝতে পারছি অনেকে শঙ্কার মধ্যে আছেন যে টুর্নামেন্ট শেষে কিভাবে দেশে ফিরবেন। এমন ভাবনা আসাটা স্বাভাবিক। আমরা বলতে চাই, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সবাই গন্তব্যে যেন নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে পারে, সেজন্য বিসিসিআই সবকিছু করবে। বিসিসিআই পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং টুর্নামেন্ট শেষে আপনাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। আপনারা নিশ্চিত থাকুন, বিসিসিআইয়ের জন্য টুর্নামেন্ট ততক্ষণ শেষ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা নিরাপদে বাড়িতে না পৌঁছাবেন।”

ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর এই মিছিলের মধ্যে আইপিএল চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে প্রতিনিয়ত। তবে হেমাং আমিন তুলে ধরলেন কেন তারা খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।

“যখন আপনারা আমাদের ভালোবাসার ক্রিকেট খেলেন তখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা করেন। যেমন আপনাদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘যদি আমরা মানুষকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও সাম্প্রতিক সময়ের সব সমস্যা ভুলিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমরা ভালো কাজ করছি।’ যখন আপনারা মাঠে নামেন, তখন অবশ্যই লাখ লাখ মানুষের মনে আশা জাগান। এক মিনিটের জন্য হলেও কারো মুখে হাসি ফোটাতে পারছেন, সেটাই অনেক বড় কাজ। যখন আপনি পেশাদার, আপনি জয়ের জন্য খেলবেন। তবে এবার আপনি আরও বেশি কিছুর জন্য খেলছেন। আর সেটা হচ্ছে মানবতা।”