ড্র হলো বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে টেস্ট।
দেশের বাইরে টানা ৯ টেস্ট হারার পর একটি ম্যাচ বাঁচাতে পারল বাংলাদেশ। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ষষ্ঠ ম্যাচে প্রথম পয়েন্টের দেখাও মিলল।
নিষ্প্রাণ উইকেটে বোলারদের ভোগান্তি আর রান জোয়ারের ম্যাচের শেষ দিনটি রাঙালেন তামিম। প্রথম ইনিংসে ৯০ রানে বাজে শটে আউট হওয়া ওপেনার এবার অপরাজিত ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৮ বলে ৭৪ রান করে।
ম্যাচের শেষ দিনে রোববার চা বিরতির পর বৃষ্টির কারণে আর খেলাই হতে পারেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১০০।
ম্যাচের তখন নির্ধারিত ওভার বাকি ছিল ৩৫। ফল নিয়ে সংশয় ছিল সামান্যই। তবে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা তামিমকে হতে হলো আশাহত।
দিনের প্রথম সেশনে ছিল রান আর উইকেটের মেলা। উইকেটশূন্য চতুর্থ দিনের পর এ দিন এক সেশনে বাংলাদেশ তুলে নেয় পাঁচ উইকেট, শ্রীলঙ্কা রান তোলে ওভারপ্রতি প্রায় পাঁচ করে।
১৫৪ রানে দিন শুরু করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ১৬৬ রানে বিদায় করেন তাসকিন আহমেদ। দিমুথ করুনারত্নের সঙ্গে তার বিশাল জুটি থামে ৩৪৫ রানে। তাসকিন নিজের পরের ওভারে করুনারত্নেকে ফেরান ২৪৪ রানে।
লাঞ্চের সময় শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করে ৮ উইকেটে ৬৪৮ রানে, ১০৭ রানে এগিয়ে থেকে।
তামিমের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভালোই। সুরাঙ্গা লাকমলের প্রথম দুই ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। চতুর্থ ওভারে ধনাঞ্জয়ার অফ স্পিন আক্রমণে আনে শ্রীলঙ্কা। তামিম পাল্টা আক্রমণ করেন প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা, তৃতীয় বলে চারে।
কিন্তু ছোট্ট মড়ক লাগে অন্য প্রান্তে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানের পর এবার সিঙ্গেল নিয়ে রানের দেখা পান সাইফ হাসান। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লাকমলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আউট তিনি বাজেভাবে খোঁচা দিয়ে।
লাকমলের পরের ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রানের পর এবার তার প্রাপ্তি শূন্য।
২৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে হঠাৎই তখন চাপে বাংলাদেশ। ধনাঞ্জয়ার পরের ওভারেও ক্রিজ ছেড়ে ছক্কা মারেন তামিম। তবে জোড়া ধাক্কার পর গুটিয়ে নেন নিজেকে। মুমিনুল হকও ধীরস্থির ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন।
এর মধ্যে খানিকটা নাটক হয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে। ধনাঞ্জয়ার বলে তামিমের ড্রাইভ সিলি পয়েন্টে ওশাদা ফার্নান্দোর বুটে লেগে ক্যাচ হয়েছে বলে আবেদন করে শ্রীলঙ্কা। মাঠের আম্পায়ার ‘সফট সিগনাল’ আউট দিয়ে সিদ্ধান্ত পাঠান তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে। তিনি লম্বা সময় নানা অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে সিদ্ধান্ত নেন ‘নট আউট।’
জুটি একটু থিতু হওয়ার পর আবারও দারুণ গতিতে ছুটতে থাকেন তামিম। বিশ্ব ফার্নান্দোর এক ওভারে তিন বাউন্ডারিতে ফিফটি স্পর্শ করেন ৫৬ বলে। টেস্টে যেটি তার ৩০তম অর্ধশতক।
ফিফটির পরও এগোতে থাকেন একই গতিতে। ধনাঞ্জয়াকে টানা দুটি বাউন্ডারির পরের ওভারে ছক্কা মারেন আরেকটি। পরে চা বিরতির আগে আবার সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করেন সময়। বিরতির পর আর সময়ই পেলেন না!
মুমিনুলের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৭৩। বাংলাদেশ অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৮৬ বলে ২৩ রান করে।
সবুজ উইকেটে পেসারদের চোখ রাঙানিতে শুরু ম্যাচ শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকল ব্যাটসম্যানদের একপেশে দাপটের। প্রথম চার দিন মিলিয়ে উইকেট পড়েছিল কেবল ১০টি। সব মিলিয়ে মাত্র ১৭ উইকেট হারিয়ে রান উঠেছে ১ হাজার ২৮৯। উইকেট প্রতি ৭৫ রানের বেশি!
টানা ২৮ টেস্টে ফল হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় ড্র হলো কোনো টেস্ট। বাংলাদেশের তাতে আপত্তির কারণ নেই। সাম্পতিক দুঃসময়ের পর বড় স্বস্তির উপলক্ষ এই ড্র।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৪১/৭ (ডি.)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৭৯ ওভারে ৬৪৮/৮ (ডি.) (আগের দিন ৫১২/৩) (করুনারত্নে ২৪৪, ধনাঞ্জয়া ১৬৬, নিসানকা ১২, ডিকভেলা ৩১, হাসারাঙ্গা ৪৩, লাকমল ২২*, বিশ্ব ০*; আবু জায়েদ ১৯-২-৭৬-০, তাসকিন ৩০-৬-১১২-৩, ইবাদত ২১-১-৯৯-১, মিরাজ ৫৮-৬-১৬১-১, তাইজুল ৪৫-৯-১৬৪-২, মুমিনুল ৪-০-১৮-০, সাইফ ২-০-৫-০)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৩ ওভারে ১০০/২ ( তামিম ৭৪*, সাইফ ১, শান্ত ০, মুমিনুল ২৩*, লাকমল ৮-২-২১-২, বিশ্ব ৫-২-১৮-০, ধনাঞ্জয়া ১১-১-৪৬-০, হাসারাঙ্গা ৯-০-১৫-০)।
ফল: ম্যাচ ড্র।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে ০-০ সমতা।
ম্যান অব দা ম্যাচ: দিমুথ করুনারত্নে।