‘শান্ত কেন পারছেন না’, গত কিছুদিনে এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি চর্চিত প্রসঙ্গগুলির একটি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট মাতিয়ে, দেশের ক্রিকেটের সবগুলি ধাপ পেরিয়ে আসা ব্যাটসম্যান তিনি। হাই পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক যত্নে গড়ে তোলা একজন, সেই তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসে কেন খাবি খাচ্ছেন, সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল জটিল এক ধাঁধা।
ধাঁধার সমাধান এখনও মেলেনি, তবে জট খোলা শুরু হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম দিনে দারুণ টেম্পারমেন্টের প্রমাণ মেলে ধরে শান্ত করেন সেঞ্চুরি। প্রথম দিন শেষে তিনি অপরাজিত ২৮৮ বল খেলে ১২৬ রানে।
দিনের দ্বিতীয় ওভারেই সাইফ হাসান আউট হওয়ার পর উইকেটে যান শান্ত। ৮৮ ওভার ব্যাট করে দিন শেষে মাঠ ছাড়েন মাথা উঁচু করে। তামিম ইকবালের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ১৪৪ রানের জুটি। তৃতীয় উইকেটে মুমিনুল হকের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে হয়ে গেছে ১৫০ রান।
আগের ৬ টেস্টে মাত্র একটি ফিফটি। ৮ ওয়ানডে ও ৩ টি-টোয়েন্টি খেলে একবারও ৩০ ছুঁতে না পারার পর এলো শান্তর এই সেঞ্চুরি।
এই ম্যাচের আগে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২২ ইনিংস, খুব কম হয়তো নয়, আবার একজন ক্রিকেটারের শেষ দেখে ফেলার মতো যথেষ্টও নয়। তারপরও শান্তকে নিয়ে ছিল তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। সেটির একটি কারণ হতে পারে, ম্যাচ খুব বেশি না খেললেও দলের সঙ্গে আছেন তিনি কম-বেশি চার বছর ধরে।
“আগের চেয়ে ভালো লাগছে এখন। কিছুটা স্বস্তিও পাচ্ছি। কারণ গত কয়েক মাসে আমি অনেক কষ্ট করেছি, কিন্তু রান পাইনি। তবে বিশ্বাস ছিল, রান করতে পারব আমি। প্রমাণের কিছু আমি দেখিনি। অনেক পরিশ্রম করেছি। হ্যাঁ, ফল আসছিল না, কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল যে বড় রান করতে পারব। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।”
“সত্যি কথা বলতে, আমাকে নিয়ে কী হয়েছে, নিজে খুব একটা দেখিনি। শুনেছি কিছু পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব থেকে যে এরকম হচ্ছে। আমার মনে হয়, সবাই আমার কাছ থেকে হয়তোবা অনেক আশা করে যে ভালো করতে পারি বা সামর্থ্য আছে, এজন্যই মানুষ এসব বলে।”
পাল্লেকেলের উইকেটে ঘাস ছিল। বাংলাদেশ শুরুতে উইকেটও হারায়। তবে তামিম ইকবালের দারুণ সব শটে চাপ উল্টো শ্রীলঙ্কার ওপরই চেপে বসে। শান্ত জানালেন, পারিপার্শ্বিকতা না ভেবে তিনি কেবল নিজের ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিয়েছেন।
“উইকেটে যাওয়ার পর তামিম ভাই বলেছিলেন, ‘উইকেট খুব ভালো।’ ওইটা মাথায় ছিল। আমি বল দেখেছি, খেলেছি। উইকেট নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করিনি। নতুন বল একটু সুইং করছিল, কিন্তু ইতিবাচক ছিলাম।”
“তামিম ভাই খুব ভালো ব্যাট করেছে, তাতে আমি সময় নিতে পেরেছি। বল বুঝে খেলার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়, ইনিংসটি খুব গোছানো ছিল, তাড়াহুড়ো খুব বেশি করিনি।”
দুঃসময়ের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে স্কিলের চেয়ে মানসিকতার ব্যাপারটিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মনে করেন শান্ত।
“স্কিল তো ছিলই, তবে মানসিক ব্যাপারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকে মানসিকভাবে অনেক রিল্যাক্সড ছিলাম। শুরু থেকে শেষ বল পর্যন্ত দেখেছি আর ব্যাট করেছি। কত বল খেললাম বা রান করলাম, এসব নিয়ে ভাবিনি।”
এমন একটা ইনিংস, তার মাইলফলকের উদযাপন খুব সাধারণ হওয়ার কারণও জানালেন শান্ত। তাতে ফুটে উঠল তার মানসিকতা।
“আমার বিশ্বাস ছিল, বড় রান করতে পারি। কাজেই খুব বেশি উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। আরও ব্যাটিং বাকি আছে, কাজেই যত লম্বা করা যায়।”
বাংলাদেশ দলও বৃহস্পতিবার সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে, কত লম্বা করতে পারেন শান্ত।