সবুজ উইকেট, আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাল্লেকেলে টেস্টের প্রথম সকালে টস জিতে যে সাহস দেখাল বাংলাদেশ, দিনজুড়ে তা রূপ নিল প্রাপ্তির প্রায় পূর্ণতায়। বুধবার প্রথম দিনের চ্যালেঞ্জ জিতে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩০২।
যুব পর্যায় থেকেই যাকে মনে করা হতো বয়সের চেয়ে পরিণত, সেই শান্তর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিতেও থাকল সেটির ছাপ। দারুণ নিয়ন্ত্রিত ও ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ে দিন শেষে অপরাজিত তিনি ২৮৮ বলে ১২৬ রান করে।
এ দিন বড় দুটি জুটির একটিতে শান্তর সঙ্গী তামিম, আরেকটি মুমিনুল হক। চোখধাঁধানো সব শটের প্রদর্শনী মেলে ধরে তামিম আউট হয়ে যান ৯০ রান করে। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির আশায় মুমিনুল দিন শেষে অপরাজিত ৬৪ রানে।
সেই পরীক্ষা জয়ের প্রথম নায়ক তামিম। ম্যাচের প্রথম ওভার থেকেই ছড়িয়ে দিতে থাকেন চ্যালেঞ্জ জয়ের ঘোষণা।
শ্রীলঙ্কার সেরা পেসার সুরাঙ্গা লাকমলের প্রথম ওভারে জোড়া বাউন্ডারিতে শুরু। তামিমের ব্যাট থেকে আসতে থাকে একের পর এক বাউন্ডারি।
দ্বিতীয় ওভারে সাইফ হাসানকে শূন্য রানে ফেরান বিশ্ব ফার্নান্দো। তামিম সেই চাপকে উড়িয়ে দেন তুড়ি বাজিয়ে। বিশ্বর এক ওভারেই মারেন তিন বাউন্ডারি! শুরুতে একটু নড়বড়ে থাকলেও শান্ত আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান দ্রুতই।
সবুজ উইকেট দেখে অতি রোমাঞ্চ থেকেই কিনা, লঙ্কান পেসাররা এলোমেলো বল করেন বেশ। তামিম-শান্ত কাজে লাগান তা।
৫৩ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তামিম। এগিয়ে যান আরও। লাঞ্চের পর শান্তর সঙ্গে তার জুটি ছাড়িয়ে যায় শতরান।
শান্তর ইনিংসে একটি খুঁত, সুযোগ দেন ২৮ রানে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার নিরোশান ডিকভেলা।
তামিমের সেঞ্চুরি যখন মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার, তখনই হারিয়ে ফেলেন মনোযোগ। বিশ্ব ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ধরা পড়েন স্লিপে। ১৫ চারের ইনিংস শেষ হয় সেঞ্চুরি থেকে ১০ রান দূরে।
শান্তর সঙ্গে তার জুটি থামে ১৪৪ রানে।
গোটা ইনিংসে যেমন, তেমনি সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও তাড়াহুড়ো করেননি। নব্বই থেকে শতরানে যেতে বল খেলেন ৩৮টি! ধনাঞ্জয়ার বলে দৃষ্টিনন্দন এক কাভার ড্রাইভে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ২৩৫ বল খেলে।
তামিমের বিদায়ের পর মুমিনুলও দারুণ জুটি গড়ে তোলেন শান্তর সঙ্গে। শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। দিনশেষে তিনি অপরাজিত ৬৪ রানে।
শান্তর সঙ্গে মুমিনুলের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ১৫০। দেশের বাইরে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের যা সর্বোচ্চ জুটি।
প্রথম দিনের চাওয়া আর পাওয়া মিলে গেছে অনেকটুকুই। দ্বিতীয় দিনের চাওয়ার তালিকায় নিশ্চিতভাবেই থাকবে শান্তর আরও বড় ইনিংস, দেশের বাইরে মুমিনুলের প্রথম সেঞ্চুরি, দলের রান পাহাড়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩০২/২ (তামিম ৯০, সাইফ ০, শান্ত ১২৬*, মুমিনুল ৬৪*; লাকমল ১৮-৭-৫৫-০, বিশ্ব ১৭-২-৬১-২, কুমারা ১৯-২-৬৩-০, ম্যাথিউস ৫-১-৮-০, ধনাঞ্জয়া ১৬-১-৭১-০, হাসারাঙ্গা ১৫-১-৩৪-০)।