রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতে সিরিজ পাকিস্তানের

বারবার দিক পাল্টানো ম্যাচের শেষটায় ব্যবধান গড়ে দিলেন মোহাম্মদ নওয়াজ। দুই ছক্কায় পাকিস্তানকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতল বাবর আজমের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2021, 04:27 PM
Updated : 16 April 2021, 05:53 PM

সেঞ্চুরিয়নে শুক্রবার চতুর্থ ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৩ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। ১৪৫ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়েছে এক বল বাকি থাকতে। ২-১ ব্যবধান ওয়ানডে সিরিজ জেতা সফরকারীরা টি-টোয়েন্টি সিরিজ ঘরে তুলেছে ৩-১ ব্যবধানে।

দুই দলই ভুগেছে ইনিংসের দ্বিতীয়ভাগে। ভালো শুরুর পর ধুঁকতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা থেমেছে দেড়শর আগেই। এক সময়ে দুইশ রানের কাছাকাছি যাওয়ার আশা জাগিয়েছিল স্বাগতিকরা। ভালো শুরুর পর দিক হারায় পাকিস্তানও। তবে শেষটায় দলকে পথ দেখান নওয়াজ। ছক্কায় ম্যাচ শেষ করা এই অলরাউন্ডার ২১ বলে করেন ২৫ রান।  

সুপারস্পোর্ট পার্কে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতেই হারায় এইডেন মারক্রামকে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে নওয়াজকে ছক্কা-চার মেরে ঝড়ের আভাস দিয়ে এলবিডব্লিউ হন এই ওপেনার।

ইয়ানেমান মালান ও রাসি ফন ডার ডাসেনের ব্যাটে দারুণভাবে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় স্বাগতিকরা। ভালো শুরুটা বড় করতে পারেননি মালান। ২৮ বলে ৩৩ রান করে ফাহিম আশরাফের বলে ধরা পড়েন ফখর জামানের হাতে।

ফন ডার ডাসেনের ব্যাটে ছুটছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ত্রয়োদশ ওভারে এক পর্যায়ে রান ছিল ২ উইকেটে ১০৯ রান। হাইনরিখ ক্লাসেনকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের ইনিংসে ধস নামান ফাহিম।

পঞ্চাশ ছুঁয়েই ফিরে যান ফন ডার ডাসেন। ৩৬ বলে দুই ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫২ রান করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। শেষ আট ব্যাটসম্যানের কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ৩৫ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় তিন বল বাকি থাকতে।

লক্ষ্যটা নাগালে রাখতে দারুণ অবদান রাখেন ফাহিম। ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার নেন ৩ উইকেট। শুরুতে খরুচে বোলিং করা হাসান আলি শেষ দিকে নিজেকে ফিরে পান। ৪০ রান দিয়ে এই পেসারও পান ৩ উইকেট।

জবাব দিতে নেমে তৃতীয় বলেই স্টাম্পড হন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এরপর প্রতিরোধ গড়েন বাবর ও ফখর জামান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন ফখর।

বিয়ন ফোরটানকে টানা দুই বলে ওড়ান ছক্কায়। পরে সিসান্ডা মাগালাকে মারেন আরও দুটি। ২৭ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ঝড় থামান লিজাড উইলিয়ামস। উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ৬০ রানে ধরা পড়েন কাভারে। ওই ওভারেই ২৩ বলে ২৪ রান করা বাবরকে ফিরিয়ে দেন এই পেসার।

এরপরই বদলাতে থাকে খেলার চিত্র। দ্রুত ফিরে যান মোহাম্মদ হাফিজ, হায়দার আলি, আসিফ আলি ও ফাহিম। ৩৭ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান পড়ে যায় হারের শঙ্কায়। সেখান থেকে দলকে কক্ষপথে ফেরান নওয়াজ।

৩৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলেছেন ফখর জামান। ছবি: পিসিবি।

টাইমিং পেতে বেশ ভুগছিলেন তিনি। তার জন্য সহায় হয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাগালার ‘নো’ বল। পরপর দুই বলে ওভার স্টেপ করেন এই পেসার। প্রথম ফ্রি হিট কাজে লাগাতে পারেননি হাসান। পরেরটিতে ছক্কা মেরে সমীকরণ সহজ করে ফেলেন নওয়াজ। 

শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৬ রান। প্রথম ৪ বলে চার রান নেয় পাকিস্তান। পঞ্চম বলে ছক্কায় নওয়াজ দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।  

দারুণ বোলিং ফাহিম জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে সর্বোচ্চ ২১০ রান করা বাবর জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯.৩ ওভারে ১৪৪ (মালান ৩৩, মারক্রাম ১১, ফন ডার ডাসেন ৫২, ক্লাসেন ৯, লিন্ডে ৩, মুল্ডার ৬, ফেলুকওয়ায়ো ১, মাগালা ৭, ফোরটান ৮, উইলিয়ামস ২*, শামসি ০; আফ্রিদি ৪-০-১৯-১, নওয়াজ ৪-০-৪০-১, রউফ ৩.৩-০-১৮-২, হাসান ৪-০-৪০-৩, ফাহিম ৪-০-১৭-৩)।

পাকিস্তান: ১৯.৫ ওভারে ১৪৯/৭ (রিজওয়ান ০, বাবর ২৪, ফখর ৬০, হাফিজ ১০, হায়দার ৩, আসিফ ৫, ফাহিম ৭, নওয়াজ ২৫*, হাসান ২*; ফোরটান ৩-০-২৬-১, মুল্ডার ২-০-১৪-০, উইলিয়ামস ৩.৫-০-৩৯-২, মাগালা ৪-০-৩৩-২, শামসি ৪-০-২১-১, ফেলুকওয়ায়ো ২-০-১১-১, লিন্ডে ১-০-৩-০)।

ফল: পাকিস্তান ৩ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৪ টি-টোয়েন্টির সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে জিতেছে পাকিস্তান।

ম্যান অব দা ম্যাচ: ফাহিম আশরাফ।

ম্যান অব দা সিরিজ: বাবর আজম।