ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের ১৫৮তম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। ‘লিডিং উইমেন ক্রিকেটার ইন দা ওয়ার্ল্ড’ মনোনীত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার বেথ মুনি।
উইজডেনের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও সম্মানজনক স্বীকৃতি, বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডার, পাকিস্তানের কিপার-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইংলিশ অলরাউন্ডার ড্যারেন স্টিভেন্স, দুই ব্যাটসম্যান ডমিনিক সিবলি ও জ্যাক ক্রলি।
মূলত ইংলিশ গ্রীষ্মে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করা ক্রিকেটারদের বিবেচনা করা হয় পাঁচ বর্ষসেরার জন্য। একাধিকবার এই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না কাউকে।
স্টোকসের ‘লিডিং ক্রিকেটার’ মনোনীত হওয়া অনেকটা অনুমিতই। গত বছর ৭ টেস্ট খেলে ৫৮.২৭ গড়ে ৬৪১ রান করেন তিনি, বিশ্বে যা সর্বোচ্চ। পাশাপাশি বল হাতে তার শিকার ১৯ উইকেট, মাত্র ১৮.৭৩ গড়ে।
উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি ১৮৮৯ সাল থেকে দেওয়া হলেও ‘লিডিং ক্রিকেটার’ খেতাব দেওয়া শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। প্রথমবার সেরা হন রিকি পন্টিং।
এবারের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম নিঃসন্দেহে ড্যারেন স্টিভেন্স। জীবনের ইনিংসে ৪৫ বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এই স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
মহামারীকালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের বদলে আয়োজিত হওয়া বব উইলিস ট্রফিতে ৫ ম্যাচে ২৯ উইকেট শিকার করেন স্টিভেন্স। এবারও তিনি কাউন্টি মৌসুম শুরু করেছেন প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে ও দুই উইকেট নিয়ে।
১৯৩৩ সালের পর সবচেয়ে বেশি বয়সে বর্ষসেরা ক্রিকেটারদের একজন স্টিভেন্স। সব মিলিয়ে তিনি চতুর্থ সর্বোচ্চ বয়সী।
জ্যাক ক্রলি ও ডমিনিক সিবলি সেরা পাঁচে জায়গা পেয়েছেন মূলত ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্টের পারফরম্যান্সে। গত বছর ৯ টেস্ট খেলে সিবলির রান ৪৭.৩০ গড়ে ৬১৫। এর মধ্যে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯ ঘণ্টার বেশি চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব্যাট করে ১২০ রানের ইনিংসটি।
৭ টেস্ট খেলে ক্রলির রান ৫২.৭২ গড়ে ৫৮০। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাউথ্যাম্পটনে খেলেন ২৬৭ রানের ম্যারাথন ইনিংস। এছাড়াও তার সেঞ্চুরি আছে বব উইলিস ট্রফি ও টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে।
কোভিড বিরতির পর খেলা শুরু হলে প্রথম টেস্টেই সাউথ্যাম্পটনে ৬ উইকেট নেন হোল্ডার। পাশাপাশি নেতৃত্ব দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দারুণ জয়ে। বছরজুড়ে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে হোল্ডারের দারুণ ভূমিকার প্রশংসাও করা হয়েছে অ্যালমানাকে।
মেয়েদের ‘লিডিং ক্রিকেটার’ বেথ মুনি ছিলেন গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট।’ ফাইনালে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভারতকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ে রাখেন বড় অবদান। এছাড়া মেয়েদের বিগ ব্যাশেও ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার।
এবারের ‘লিডিং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার’ মনোনীত হয়েছেন কাইরন পোলার্ড। গত বছর টি-টোয়েন্টিতে ৫৩.৫৮ গড়ে ৬৪৩ রান করেছেন এই ক্যারিবিয়ান ১৯৯.০৭ স্ট্রাইক-রেটে। ছক্কা মেরেছেন ৫৯টি, যা প্রতি ৫.৫ বলে একটি করে! ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ও আইপিএলে দলের শিরোপা জয়ে রেখেছেন বড় অবদান।
এবার বড় চমক ছিল ‘ফটোগ্রাফ অফ দা ইয়ার’ প্রতিযোগিতায়। প্রতিষ্ঠিত কোনো ফটোগ্রাফার নয়, এবার এই পুরস্কার জিতেছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। ভারতে একটি টিভি ডকুমেন্টারির কাজ করতে গিয়ে চলতি পথে রাজস্থানের যোধপুরে মরুভূমিতে কিশোরদের ক্রিকেট খেলার ছবি তুলে বাজিমাত করেছেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫০ বছর উপলক্ষে এবার বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে পাঁচ দশকের সেরাদের। ১৯৭০-এর দশকে সেরা হয়েছেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ড, ১৯৮০-এর দশকে কপিল দেব, ১৯৯০-এর দশকে শচিন টেন্ডুলকার, ২০০০-এর দশকে মুত্তিয়া মুরালিধরন ও ২০১০-এর দশকে বিরাট কোহলি।
এবার অ্যালামানাকের প্রচ্ছদে জায়গা পেয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এই ইংলিশ পেসারের মাস্ক পরা ছবিটি যেন সময়ের প্রতিবিম্ব।