৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচ স্ট্রিক

আইসিসি দুর্নীতি বিরোধী বিধির বেশ কয়েকটি ধারা ভঙ্গের দায়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশের একসময়কার বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিককে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2021, 10:35 AM
Updated : 14 April 2021, 11:49 AM

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার আইসিসি জানায়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের কোচ থাকার সময় ও নানা সময়ের বিভিন্ন ঘরোয়া দলের কোচ থাকার সময় বিধি ভঙ্গের এই ঘটনাগুলোয় জড়িত হন স্ট্রিক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি আইপিএল, বিপিএল ও আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগের নানা ভূমিকায় দায়িত্ব পালনের সময় এসবে জড়ান তিনি। এক জুয়াড়ির প্রস্তাব প্রক্রিয়াকে সহজতর করা, দলের ভেতরের তথ্য দেওয়া ও আরও নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

শুরুতে অভিযোগগুলোর প্রতিবাদ করলেও পরে নিজের দায় স্বীকার করেন স্ট্রিক। শাস্তিও মেনে নেন ৪৭ বছর বয়সী সাবেক এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ের সফলতম বোলার ও ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই কোচ আবার ক্রিকেট কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারবেন ২০২৯ সালের ২৮ মার্চ থেকে।

স্ট্রিকের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, দলের ভেতরের তথ্য পাচার করা, যেখানে তিনি জানতেন বা জানা উচিত ছিল যে, এসব তথ্য বাজি বা বাজিকরের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে পারে। সুনির্দিষ্ট করে বললে, ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে বাংলাদেশে ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তান সিরিজ ও ২০১৮ আইপিএল ও ২০১৮ আফগান প্রিমিয়ার লিগের সময় ভেতরের তথ্য বাইরে জোগান দেন তিনি।

জুয়াড়ি দিপক আগারওয়ালের সঙ্গে যেসব সিরিজের সময় কথোপকথনের ঘটনা প্রকাশ না করায় নিষেধাজ্ঞা পেতে হয়েছিল সাকিব আল হাসানকে, সেসব সিরিজের মধ্যে ছিল ২০১৮ সালের সেই ত্রিদেশীয় সিরিজও।

স্ট্রিকের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, দুর্নীতি বিরোধী বিধি ভাঙার উপযাচক, উদ্দীপক হিসেবে কাজ করা বা ভাঙতে প্রবৃত্ত করতে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কাজ করা। জাতীয় দলের একজন অধিনায়কসহ মোট  চারজন ক্রিকেটারকে তিনি এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি জুয়াড়ি হতে পারেন বা তার চাওয়া তথ্যগুলি জুয়া সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্যবহৃত হতে পারে।

২০১৭ বিপিএল, ২০১৮ পাকিস্তান সুপার লিগ, ২০১৮ আইপিএল ও ২০১৮ আফগান প্রিমিয়ার লিগ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচে দুর্নীতির প্রস্তাব পেয়েও প্রকাশ না করার অভিযোগ তাছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে কোনো উপহার, অর্থ, আতিথ্য বা সুবিধা গ্রহণ করেও তা প্রকাশ না করা এবং তদন্তকাজে বাধা দেওয়া ও দেরি করানো। সবকিছু মিলিয়েই এত বড় শাস্তি।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে স্ট্রিকের সম্পর্ক অনেক দিনের। খেলোয়াড়ি জীবনে জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলের হয়ে এসেছেন এখানে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে। পরে ২০১৪ সালের মে মাসে তাকে বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি।

তার সময়ে বাংলাদেশের বোলিংয়ের উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দুই বছরের মেয়াদ শেষে তাকে ধরে রাখতে চেয়েছিল বিসিবি। কিন্তু ভারত জাতীয় দল বা একাডেমির বোলিং কোচ হওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করেননি। পরে ভারতে প্রত্যাশিত দায়িত্ব না পেয়ে উত্তর প্রদেশের বোলিং পরামর্শকের কাজ নেন। 

ওই বছরই আবার তিনি জিম্বাবুয়ের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। আগেও নানা সময়ে তিনি জিম্বাবুয়ের প্রধান কোচ ও বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় বোলিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন নিয়মিতই।

তার খেলোয়াড়ি জীবনও দারুণ সমৃদ্ধ। জিম্বাবুয়ের সর্বকালের সেরা বোলার মনে করা হয় তাকে। ৬৫ টেস্ট খেলে তার উইকেট ২১৬টি। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৮০ উইকেটের বেশি নেই আর কারও। ওয়ানডেতে ১৮৯ ম্যাচে উইকেট ২৩৯ টি। দেড়শ উইকেট নেই তার দেশের আর কারও।

এছাড়াও ব্যাট হাতে রান প্রায় ৪ হাজার। ১টি টেস্ট সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে ২৪টি আন্তর্জাতিক ফিফটি। জিম্বাবুয়েকে নেতৃত্ব দেন ২১ টেস্ট ও ৬৮ ওয়ানডেতে। কৃতকর্মের শাস্তি হিসেবে এখন তাকে কাটাবে হবে ক্রিকেটবিহীন জীবন।