বাবর-ফখরের ব্যাটে সিরিজ জিতল পাকিস্তান

টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন ফখর জামান। দৃঢ় ভিতের উপর দাঁড়িয়ে শেষটায় ঝড় তুললেন বাবর আজম। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তান পেল বড় সংগ্রহ। নিয়মিত খেলোয়াড়দের অনেককে ছাড়া খেলতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা দারুণ লড়াই করলেও শেষরক্ষা করতে পারল না। বোলারদের মিলিত চেষ্টায় সিরিজ জিতে নিল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2021, 04:37 PM
Updated : 7 April 2021, 05:26 PM

সেঞ্চুরিয়নে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২৮ রানে জিতেছে সফরকারীরা। ৩২০ রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গেছে ২৯২ রানে।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল পাকিস্তান।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৯৩ রানের রেকর্ড ইনিংস খেলা ফখর এবার করলেন ১০৪ বলে ১০১ রান। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবরের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৪ বলে ৯৪ রান। শেষ দিকে হাসান আলির ১১ বলে ৩২ রানের ক্যামিও ইনিংসে তিনশ পার করে পাকিস্তান।

দুই দলই বেশ কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে নামে এই ম্যাচে। আইপিএলে যোগ দিতে দেশ ছাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ছিলেন না কুইন্টন ডি কক, ডেভিড মিলার, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি ও আনরিক নরকিয়া। আর পেশির চোটে ছিটকে পড়েন রাসি ফন ডার ডাসেন।

পাকিস্তান দানিশ আজিজ, আসিফ আলি, মোহাম্মদ হাসনাইনের বদলে নামায় সরফরাজ আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ ও হাসান আলিকে। চোট পাওয়া শাদাব খানের জায়গায় অভিষেক হয় উসমান কাদিরের।

টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া বাবর সুপারস্পোর্ট পার্কের উইকেট দেখে বলেছিলেন, তিনশর ওপরে সংগ্রহ দাঁড় করাতে চান তারা। শতরানের শুরুর জুটিতে সেই ভিত গড়ে দেন ফখর ও ইমাম-উল-হক।

৬০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করার পর বেশি দূর এগোতে পারেননি ইমাম। কেশব মহারাজের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। ৫৭ রানে ইমামের বিদায়ে ভাঙে ১১২ রানের জুটি।

ফখর ও বাবরের ব্যাটে এগিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তান। ৬২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করার পর রানের গতি বাড়ান ফখর। দারুণ সব শট খেলে ৯৯ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। তার পরের পঞ্চাশ আসে কেবল ৩৭ বলে। 

তিন অঙ্কে যাওয়ার পরপরই ফিরে যান ফখর। ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১০১ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার মহারাজের বলে হন কট বিহাইন্ড।

ফখরের বিদায়ের পর ছোটখাটো ধস নামে পাকিস্তান ইনিংসে। মোহাম্মদ রিজওয়ান, সরফরাজ, ফাহিম আশরাফ, নওয়াজরা টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। এক উইকেটে ২০৬ রান থেকে পাকিস্তানের স্কোর হয় ২৫৭/৬।

৫৫ বলে ফিফটি করা বাবর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে কেবল দেখছিলেন সতীর্থদের বিদায়। এক পর্যায়ে তিনশ রান পাকিস্তানের জন্য মনে হচ্ছিল দূরের পথ।

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেই শঙ্কা দূর করেন হাসান। জে জে স্মাটসের ওভারে তার চার ছক্কায় পাকিস্তান পায় ২৫ রান, দল পেরিয়ে যায় তিনশ। হাসান খেলেন ১১ বলে ৪ ছক্কা ও এক চারে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস।

ইনিংসের শেষ ওভারে আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োকে দুই ছক্কা ও এক চারে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যান বাবর। সেঞ্চুরিতে পা রাখতে শেষ বলে ছক্কা প্রয়োজন ছিল তার, কিন্তু পারেননি পাকিস্তান অধিনায়ক। বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে শেষ হয় তার ৮২ বলে ৯৪ রানের ইনিংস। ৭টি চারের সঙ্গে মারেন ৩টি ছক্কা। এই জুটিতে পাকিস্তান পায় ২৪ বলে ৬৩ রান।

লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুটা বড় করতে পারেননি এইডেন মারক্রাম। স্মাটস টিকেননি বেশিক্ষণ। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে ওয়ানডে অভিষেকে উইকেটের স্বাদ পান লেগ স্পিনার উসমান।

এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করতে থাকেন ইয়ানেমান মালান। টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে ধরেন দলের হাল।

এক ওভারেই এই দুই জনকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের চাপে ফেলে দেন নওয়াজ। ৯ চারে ৭০ রান মালানকে এলবিডব্লিউ করার পর বাঁহাতি স্পিনার বোল্ড করে দেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ককে।

হাইনরিখ ক্লাসেনকেও দ্রুত সাজঘরে ফেরত পাঠান নওয়াজ। ১৪০ রান ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দলকে টানেন ভেরেইন ও ফেলুকওয়ায়ো। তাদের শতরানের জুটিতে লড়াইয়ে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকা।

কিন্তু ফিফটির পর ফিরে যান দুই জনই। ৪০ বলে পঞ্চাশ করে ভেরেইন দ্রুত রান বাড়ানোর চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন তিনটি করে ছক্কা-চারে ৬২ রান করে। পরের ওভারেই ফিরে যান ৫৪ রান করা ফেলুকওয়ায়ো। এরপর আর পেরে উঠেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩২০/৭ (ইমাম ৫৭, ফখর ১০১, বাবর ৯৪, রিজওয়ান ২, সরফরাজ ১৩, ফাহিম ১, নওয়াজ ৪, হাসান ৩২; মারক্রাম ১০-০-৪৮-২, হেনড্রিকস ৭-০-৩৮-০, সিপামলা ৬-০-৫০-০, ডুপাভিলন ৫-০-৩০-০, ফেলুকওয়ায়ো ৪-০-৩৭-১, মহারাজ ১০-১-৪৫-৩, স্মাটস ৮-০-৬৭-১)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৩ ওভারে ২৯২ (মালান ৭০, মারক্রাম ১৮, স্মাটস ১৭, বাভুমা ২০, ভেরেইন ৬২, ক্লাসেন ৪, ফেলুকওয়ায়ো ৫৪, মহারাজ ৫, হেনড্রিকস ১, সিপামলা ৪*, ডুপাভিলন ১৭; আফ্রিদি ৯.৩-০-৫৮-৩, হাসান ১০-০-৭৬-১, রউফ ৯-১-৪৫-২, উসমান ৯-০-৪৮-১, নওয়াজ ৭-০-৩৪-৩, ফাহিম ৫-০-৩০-০)।

ফল: পাকিস্তান ২৮ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছে পাকিস্তান।

ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম।

ম্যান অব দা সিরিজ: ফখর জামান।