আপনাদের কথার গুরুত্ব আমার বা দলের কাছে নেই: তামিম

নিউ জিল্যান্ডে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স বাংলাদেশ দলের। চারপাশে সমালোচনার ঝড়। তামিম ইকবাল বলছেন, বাইরের আলোচনার মূল্য তাদের কাছে একটুও নেই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক কথা বললেন দলের ফিল্ডিং, মুশফিকের কিপিং, তার নিজের স্ট্রাইক রেট, দল নিয়ে পরিকল্পনাসহ সাম্প্রতিক আরও অনেক প্রসঙ্গে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2021, 02:49 AM
Updated : 3 April 2021, 09:55 AM

নিউ জিল্যান্ড যাওয়ার আগে বলেছিলেন, আগে যা হয়নি, তা এবার করতে চান। যাওয়ার পর কোচ, দলের অনেক ক্রিকেটার, সবার একই কথা ছিল। হলো না কেন?

তামিম ইকবাল: হলো না কেন….এটার দোষ আমাদেরই। হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। পারিনি আমরা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ১৩০ রানে অলআউট হব বা শেষ ওয়ানডেতে দেড়শ, এতটা খারাপ ভাবতে পারিনি। প্রথম ওয়ানডেতে উইকেট একটু কঠিন ছিল, কিন্তু ১৩০ রানে অলআউট হওয়ার মতো নয়।

সবচেয়ে হতাশার হলো, আমাদের একটা সুযোগ এসেছিল। আমরা সবাই মিলে হাতছাড়া করেছি। অধিনায়ক হিসেবে বলুন বা মানুষ হিসেবেও, আমি কখনও কাউকে পয়েন্ট আউট করি না। ১৫ বছর খেলে এতটুকু জানি, কেউ ইচ্ছে করে খারাপ খেলে না, ক্যাচ ছাড়ে না। এটা হয়ে যায়। আমার সঙ্গেও হয়েছে। বিশ্বের সেরা ফিল্ডারদের সঙ্গেও হয়েছে। আমি তাই দল হিসেবেই বলি যে, ‘আমরা ক্যাচ ছেড়েছি।’ ক্যাচগুলি নিতে পারলে ওই ম্যাচ আমাদের জেতার কথা।

 

জিততে পারলে আমাদের জন্য দারুণ অর্জন হতো। দলের প্রস্তুতি বলেন বা সবকিছু, অধিনায়ক হিসেবে আমি খুশি ছিলাম। যতটুকু অনুশীলন দরকার, আমরা করেছি। যতটা ভালো খেলার দরকার ছিল, ততটা পারিনি।

নিউ জিল্যান্ডে গত পাঁচ বছরে এটি ছিল বাংলাদেশের তৃতীয় সফর। বারবার যখন দল ব্যর্থ হয়, তখন কি এটা বলা যায় যে এই কন্ডিশনে আপনাদের সামর্থ্যই এতটুকু?

দলে পুরনোদের ফেরানো নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলবেন তামিম।

তামিম: বলতে পারেন…হ্যাঁ, গত চার-পাঁচ বছরে তিনবার গিয়েছি নিউ জিল্যান্ডে। সেখানে কী আশা করা যায় বা কী হবে, এটা নিয়ে সবারই ধারণা আছে। তবে আইডিয়া থাকা আর সেখানে গিয়ে পারফর্ম করা ভিন্ন ব্যাপার।

যেটা বললাম, আমাদের আরও ভালোভাবে সাড়া দেওয়া, আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। তিনটা ম্যাচে অন্তত যদি লড়াই করে হারতাম, তাহলে নিজেকে সন্তুষ্ট করা একটু সহজ হতো। এভাবে হারলে অনেক প্রশ্ন মাথায় আসে। মিডিয়া বলেন বা দর্শক, তাদের অনেক কথা বলার থাকে। খারাপ খেললে সমালোচনা নিতে আমি প্রস্তুত।

আমাদের যে অভিজ্ঞতা আছে, অবশ্যই আরও ভালো করা উচিত ছিল। পাশাপাশি আরেকটি কথাও বলতে চাই, এই যে চার জন নিয়ে কথা হয় (সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ), বারবার উঠে আসে, যেটি সত্যি বলতে আমরা চার জন এই-সেই, এভাবে ভাবতে বা বলতে যদিও আমার ভালো লাগে না, কারণ আমি তরুণদের অনেক বড় সমর্থক, কিন্তু ব্যাপারটি হলো, ওদেরও এখন দায়িত্ব নিতে হবে এবং ভালো পারফর্ম করতে হবে।

ওরা যে একদমই করে না, তা বলছি না। মাঝেমধ্যে করেছে। সবাই ভালো, সবার সামর্থ্য আছে। তবে আমরা যদি তিন ম্যাচের দুইটায় পারফর্ম করি, বা দেড়টায়, ওদেরও একটায় করতে হবে। তাহলে আর এই চার জনের ওপর এতটা নির্ভরতা থাকবে না দলের। এবার তৃতীয় ওয়ানডে দেখুন, নিউ জিল্যান্ডের চার উইকেটে পড়ে গিয়েছিল, গাপটিল-নিকোলস-টেইলর-ল্যাথাম। কিন্তু মাত্র তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা দুই জন সেঞ্চুরি করল। এখানেই আমাদের ঘাটতি। আমি, মুশফিক বা সাকিব রান করলাম না, লিটন-মিঠুন-সৌম্যরা সেঞ্চুরি করে ম্যাচ বের করে নিয়ে এলো।

আবারও বলছি, ওরা যে করেনি, তা নয়। কখনও কখনও করে। কিন্তু আরেকটু ধারাবাহিক হলে এই দল আরও ভালো হবে।

দ্বিতীয় ওয়ানডের পর পুরস্কার বিতরণীর সময় আপনি বলেছিলেন, ‘আমরা এখানে উন্নতি করতে নয়, জিততে এসেছি।’ দলকে কি সেই বার্তা দিতে পেরেছিলেন?

তামিম: অবশ্যই। দেখুন, আগের অধিনায়করাও এখানে জিততেই এসেছিলেন। আমি তো ছিলাম সেসব দলে। আমার বার্তা এবার পরিষ্কার ছিল, উন্নতি করতে আসিনি। আর কয়দিন উন্নতি করব? জিতব কখন!

লিটন দাসের সঙ্গে প্রচুর কথা হয়, জানালেন তামিম।

এখন খেলার ফল এমন হয়েছে, আমরা যদি বলি যে জিততে গিয়েছিলাম, তাহলে হাসির ব্যাপার হবে। কিন্তু সত্যি কথা, আমি বা আমার দল এটাকে পাত্তা দেই না। যে কেউ হাসুক, আমরা খুব খারাপ খেলেছি। কিন্তু আমরা তো জানি, যেভাবে আমরা প্রস্তুতি নেই, কষ্ট করি, যেভাবে মেলে ধরার চেষ্টা থাকে, তাতে আমি খুশি।

আমি যখন বাংলাদেশ দলে খেলা শুরু করি, প্রতিটি ক্রিকেটারকে তখন ধরে ধরে জিমে বা ট্রেনিংয়ে নিয়ে যেতে হতো। এখন পুরো অন্যরকম। এখন আমাদের প্রধান কোচ, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকারও কোচ ছিলেন, তিনি যখন বলেন যে তার কাজ করা সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রমী দল আমরা, কিংবা আমাদের আগের শ্রীলঙ্কান ট্রেনার, যে অন্য অনেক জায়গায় কাজ করেছেন, তারা যখন বলেন এসব, অনেক ভালো ব্যাপার। এসব কখনোই বাইরে আসবে না, বাইরের লোকেরও হয়তো এসবে আগ্রহ নাই। কিন্তু আমরা জানি আমরা কতটা কষ্ট করছি। তারপরও আমরা যখন ব্যর্থ হই, ভালো কারও লাগার কথা নয়।

ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতার কথা বলছিলেন। অনেক দিন থেকেই ফিল্ডিং ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে…

তামিম: এবার কুইন্সটাউনে আমাদের প্রথম অনুশীলনের দিন ড্যানিয়েল ভেটোরির (স্পিন কোচ, নিউ জিল্যান্ডের কিংবদন্তি) সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন ভেটোরি বলছিলেন, ‘নিউ জিল্যান্ডে সফরকারী দলগুলি এত খারাপ করে দুটি কারণে, একটা হলো ফিল্ডিং, অনেক ক্যাচ ড্রপ হয়, আরেকটি হলো বাড়তি অতিরিক্ত রান।’ নিউ জিল্যান্ডে ফিল্ডিং করা কঠিন, কারণ এখানে এত বাতাস থাকে যে বুঝে ওঠা কঠিন।

কিপিং ছাড়ার সিদ্ধান্ত মুশফিকের ওপরই ছাড়লেন তামিম।

তবে ওই বাতাসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সময় আমাদের ছিল। কোনো অজুহাত দিতে চাই না। এই সিরিজে ফিল্ডিং বড় ভূমিকা রেখেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যাচগুলি না ছাড়লে আমরা জিতে যেতাম। অন্য ম্যাচগুলিতেও ফিল্ডিং ভালো করলে ওদের রান আরও কম হতো।

ফিল্ডিং অবশ্যই আমাদের পারফরম্যান্সে বড় প্রভাব ফেলছে। এটা নিয়ে আমরা ভাবি, অসম্ভব চেষ্টাও করি। এখন আমার মনে হয়, ব্যাটিং ও বোলিংকে যেভাবে গুরুত্ব দেই ততটা কিংবা তার বেশি গুরুত্ব ফিল্ডিংয়ে দিতে হবে। কারণ এখানেই আমরা ম্যাচ হেরে যাচ্ছি।

ফিল্ডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তো কিপিং। আপনার দলের সেরা কিপারই কি কিপিং করছে?

তামিম: হ্যাঁ, আমার দলের সেরা কিপারই কিপিং করছে। পরিসংখ্যানে যদি যাই, সেরা কিপারই কিপিং করছে।

আপনি বলতে পারেন লিটনের কথা বা মিঠুন, কিংবা সোহান। কিন্তু মুশফিক ১৫-১৬ বছর ধরে কিপিং করছে। সে কিপিং করবে নাকি করবে না, সেটা বিবেচনার ভার তারই। এই অধিকার সে অর্জন করেছে। আমি এটা অনুভব করি।

সাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক নরম্যাল, বললেন তামিম।

সে যদি কিপিং চালিয়ে যেতে চায়, অধিনায়ক হিসেবে আমি অবশ্যই তাকে সমর্থন দেব। কারণ, আমি জানি, সে কতটা কঠোর পরিশ্রম করে। হ্যাঁ, হয়তো দু-একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভুল সবাই করি আমরা। আমি এমন নই যে তাকে গিয়ে বলব, ‘না, তোমাকে কিপিংয়ে চাই না।’ আমার সমর্থন তার প্রতি থাকবে।

তারপর সে করতে চায় নাকি চায় না, এটা তার ব্যাপার। কারণ আমি নিশ্চিত, আমি যেমন দলের ভালোর কথা ভাবছি, সেও সেটা ভাবে। তার যদি মনে হয়, তার চেয়ে ভালো কিপার দলে আছে, তাহলে সেটা তার সিদ্ধান্ত। যদি চালিয়ে যেতে চায়, সেখানেও পাশে থাকব।

কিপিং নিয়ে এমনিতে কথা হয়েছে তার সঙ্গে?

তামিম: আমি তো ওয়ানডে শেষেই ফিরে এসেছি, ওভাবে কথা হয়নি। তবে সে যদি বলতে চায়, সবসময়ই স্বাগত। শুধু অধিনায়ক বলেই নয়, আমরা তো বন্ধুও। আমরা অনেক কিছু নিয়েই কথা বলি। বলতেই পারে এটা নিয়ে। কিন্তু আমার সমর্থন ওর প্রতি আছে।

মুশফিকের কিপিং সমর্থন করার জন্য এখন তো আপনার সমালোচনা-ট্রল হতে পারে!

তামিম: লোকে করতেই পারে, আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে আমার টিমমেটের পাশে আমি সবসময়ই থাকব।

আপনি নেতৃত্ব পাওয়ার পর ২০২৩ বিশ্বকাপের দল গোছানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। কতটুকু হলো সেই প্রক্রিয়া?

তামিম: কিছু কিছু জিনিস ঠিক করতে পেরেছি। তবে সমস্যাটি কোথায় হয়, ফল ভালো না হলে সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। অনেক কিছুই ধাঁধায় পড়ে যায় তখন।

বিশ্বকাপের আগে আমাদের ওয়ানডে ম্যাচ খুবই কম, ২০-২৫টির মতো ম্যাচ আছে। আমি মূল ক্রিকেটারদের কথা জানি, যে এই ২৫ জন থেকেই দল হবে। দু-একজন ক্রিকেটার এখন দলের বাইরে আছেন, আমি মনে করি তারা ভূমিকা রাখতে পারেন। এটা নিয়ে শিগগিরই ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলব। ওই ২৫ জন খুব গুরুত্বপূর্ণ যে কোন ১১ জন খেলবে, কোন ১৫ জনের স্কোয়াড হবে আর প্রয়োজন হলে কারা তাদের বিকল্প হবে।

বছরখানেকের মধ্যে যদি কোনো তরুণ ক্রিকেটার অসাধারণ পারফর্ম করে, তাদেরও সুযোগ আসবে অবশ্যই। তবে আমি যদি অধিনায়ক থাকি বিশ্বকাপ পর্যন্ত, ৭-৮ জনের অভিষেক দেখবেন না। দু-একজন হতে পারে, যারা অসাধারণ ভালো খেলবে।

বিশ্বকাপ এখনও দুই বছর পরে বলতে পারেন, কিন্তু ম্যাচ বেশি নেই। কাজেই পুরো সেট-আপ চেঞ্জ করে দেব দলের, আমি এমন কিছু করতে চাই না।

প্রথম সিরিজে আপনারা যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলেন, সাকিবকে তিন থেকে চারে নামানো বা সৌম্যকে সাতে, এখন কি মনে হয় ভুল ছিল?

তামিম: মোটেও নয়! ঠিক ছিল, কারণ সবকিছুর পক্ষেই যুক্তি ছিল। সাকিবের সঙ্গে আমি কথা বলে নিয়েছিলাম। তার আগে টিম ম্যানেজমেন্টের একটা আলোচনা ছিল, যেখানে সাকিবও ছিল। ওকে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, যে কেন ওকে চার নম্বরে চিন্তা করা হচ্ছে। তারপরও আমি আলাদা করে ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওর আপত্তি ছিল না। ও বলেছিল, অনেক দিন পর ফিরে আসছে, চারে খেলতে সমস্যা নেই।

তবে সে তিনে ফিরবে। কারণ তিনে তার এত ভালো রেকর্ড, খুব সম্ভবত তাকে তিনে দেখবেন। হতে পারে, পরের সিরিজেই।

সৌম্যর ব্যাপারটি…তখন বলেছিলাম যে অনেক আগেই ওকে জানানো হয়েছিল সাতে খেলার কথা। সে রাজি হয়েছিল, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এটিই। চেষ্টা করতে চেয়েছিল। একটা ম্যাচেই কেবল সুযোগ পেয়েছে, তবু শেষ দিকে।

নিউ জিল্যান্ডে যাওয়ার পর আমরা সৌম্যকে ছয়ে ভাবছিলাম, একইরকম ভুমিকায়। কিন্তু তিনে ব্যাট করার মতো কেউ ছিল না। যারা ছিল, তাদের মধ্যে সৌম্যকেই উপযুক্ত মনে হয়েছে।

তারপরও সিরিজের সময় ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে ওর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে। হয় ওকে সাতে ফিরে যেতে হবে, অথবা ওপেনিং বা তিন নম্বর পজিশনের ব্যাটসম্যানের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। সৌম্য আমাকে একটা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, সে কী চায়।

আমার আর আমার টিমমেটের মধ্যে কথা হয়েছে, সেটা আমাদের মধ্যেই থাকুক। সামনে যখন দল দেখবেন, তখন আপনারা বুঝতে পারবেন যে আমাদের আলোচনা কী হয়েছে।

লিটন ও সৌম্যর যা ধারাবাহিকতা, এই আশা কি করতে পারেন যে ২০২৩ বিশ্বকাপে বড় ভূমিকা তারা রাখতে পারবেন?

তামিম: দেখুন, বড় ভূমিকা অবশ্যই চাইব তারা রাখুক। তবে ওইরকম পারফরম্যান্স ওদের করতে হবে। দল যেন বিশ্বাস করতে পারে ওদের ওপর। এই মুহূর্তে দলের প্রচণ্ড বিশ্বাস আছে ওদের ওপর। লিটন, সৌম্য এমনকি শান্তর ওপরও, অনেক আস্থা আছে। দল নির্বাচনেও সেটা দেখতে পাচ্ছেন আপনারা। ওদের খুব বেশি বদলানো হয়নি।

আমি এখনও বিশ্বাস করি, এই তিন জনই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ওরা যদি ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করা শুরু করে, তাহলে ভালো।

লিটনের সঙ্গে আমার প্রচুর কথা হয়, আমার ওপেনিং পার্টনার সে। সৌম্যর সঙ্গে কথা হয়।  ওদের চিন্তাধারা ভালো, এই একটা ব্যাপারে ওদের প্রতি আমার অভিযোগ নেই। মানসিকতা ঠিক আছে। স্রেফ মাঠে সেটা দেখানোর ব্যাপার।

তরুণদের প্রতি সমর্থনের কথা বলছেন। নিউ জিল্যান্ডে শেষ ওয়ানডেতে শরিফুল ইসলামকে খেলানো যেত না? কন্ডিশন, পরিস্থিতি আদর্শ ছিল…

তামিম: হ্যাঁ, খেলানো যেত। বলতে পারেন। তবে রুবেল গোটা সফরে অসাধারণ বল করছিল (নেটে)। প্রথম দুটি ম্যাচ খেলতে পারেনি, ভাগ্য খুবই খারাপ ছিল বলেই প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেনি। প্রস্তুতি ম্যাচে ৪ উইকেট নিযেছিল, প্র্যাকটিসে ভালো করেছিল। এজন্যই ওকে নিয়েছি। ম্যাচে সে ভালো বোলিংও করেছে, শুরুতে উইকেট নিয়েছে।

শরিফুল সুযোগ পেতে পারত। তবে তার সময় সামনে আসবে।

আপনার নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কি বলবেন?

তামিম: আমি নিজেকে যেভাবে দেখি বা বিচার করি, নিজের পারফরম্যান্সে খুশি নই। তিন ম্যাচের মধ্যে একটায় ভালো খেলেছি। তবে নিজের কাছে প্রত্যাশা আরও বেশি।

নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর দেশে ও বিদেশে একটি করে সিরিজ খেললেন। নেতৃত্বে কতটা অভ্যস্ত হতে পেরেছেন বা নিজের করে নিতে পেরেছেন?

তামিম: আমার কাছে মনে হয়, আই অ্যাম অন দা রাইট ট্র্যাক। সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণের কথা যদি বলেন বা সবকিছু নিখুঁত করা, এখনও তা নই। ওটাও একটা সময়ের ব্যাপারে। পরিকল্পনা থাকে অনেক, বাস্তবায়নের জন্য সময় লাগে। তার ওপর হারতে থাকলে, কিছু কিছু পরিকল্পনা নিয়ে সংশয় জাগে।

আমি যতই ব্যাখ্যা দেই বা যা-ই বলি না কেন, আমি জানি যে আমাদের মানুষজনের যা চিন্তাধারা, সবাই বলবে ‘এসব অজুহাত’ বা এরকম কিছু। কিন্তু একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিতে চাই, আপনারা কী ভাবছেন, আমাদের একজনের কাছেও এটার কোনো গুরুত্ব নেই। আমরা হারছি, এই সিরিজে বাজেভাবে হেরেছি, এটা আমরা জানি। কত কষ্ট করছি ভালো করার জন্য, এটাও আমরা জানি।

অবশ্যই খারাপ লাগে, যখন আপনারা বা অন্যরা খারাপ মন্তব্য করেন বা কিছু বলেন। সবারই খারাপ লাগে। মানুষ তো। তবে এটাও সত্যি, এসব আমাদের জন্য ম্যাটার করে না। কারণ এটাও জানি, যদি এখন আমরা সিরিজ জিতে বা একটা ম্যাচ জিতেও আসতাম, আপনাদের প্রশ্নগুলি অন্যরকম হতো। আপনারা বাতাসের সঙ্গে ঘুরতে থাকেন, তাই ইট ডাজন্ট ম্যাটার।

টি-টোয়েন্টি থেকে বিরতি কি কেবল এক সিরিজের জন্যই?

তামিম: আপাতত ‘হ্যাঁ।’ সামনে যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে আমাকে পাওয়া যাবে। আমার বার্তা খুব পরিষ্কার ছিল, ব্যক্তিগত কারণে এই সিরিজ থেকে বিরতি চাই। আর কিছু নেই। যদি অন্য কোনো ব্যাপার ভাবি, তাহলে সময় হলে জানা যাবে। আপাতত সব ফরম্যাটেই মনোযোগ দিচ্ছি।

কিন্তু খেলার চাপ সামনে বাড়বে, টানা তিন সংস্করণ খেলে যেতে পারবেন?

তামিম: আমি নিজেকে দেখি আরও তিন-চার বছর ভালোভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। আশা করছি ২০২৬ বা অন্তত ২০২৫ পর্যন্ত খেলব, অবশ্যই যদি ফিটনেস থাকে ও ফর্ম থাকে। যদি অতদূর পর্যন্ত যেতে পারি বা চাই, হয়তো একটি ফরম্যাট আমাকে ছাড়তে হবে। এখনই যে ছাড়তে হবে বা এখনই ছাড়ব না, তেমন নয়। এমন হতে পরে, কালকেও ছাড়তে পারি। আবার, দুই বছর পরও ছাড়তে পারি।

এতটুতু বলতে পারি, আরও ৫ বছর যদি খেলি, তিন ফরম্যাটে একসঙ্গে খেলব না। একটা ফরম্যাট অবশ্যই ছাড়ব। সেটা হতে পারে সাত মাস পর বা দুই বছর পর বা যে কোনো সময়। যেখানে দলে আমার অবদান রাখার সুযোগ আছে বা দল আমাকে চায় সেই দুই ফরম্যাট খেলে অন্যটা ছাড়ব। কোনটা আগে ছাড়ব, সেটা সময় হলেই দেখা যাবে।

আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেকে দেখেন?

তামিম: এখনও পর্যন্ত তো দেখি। কিন্তু কোন সময় কোন সিদ্ধান্ত নেই, কে জানে! এখনও পর্যন্ত মাথায় অন্য কিছু নেই।

ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে আপনার স্ট্রাইক রেট নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই প্রচুর কথা হচ্ছে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আপনি নানা সময়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন, সেসব নিয়েও সমালোচনা-ট্রল হয়েছে। আপনার কাছে বা দলের কাছে সেসবের গুরুত্ব কতটা? 

তামিম: আমার মনে হয় না দলের সমস্যা আছে। দেখেন, আমি যদি ১১৫ বা ১২০ স্ট্রাইক রেট থেকে ১৩০-১৪০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করতে পারি (টি-টোয়েন্টিতে), তাহলে তা অবশ্যই খুব হেল্পফুল হবে। উন্নতির জায়গা তো অবশ্যই আছে।

ওয়ানডেতে আমার মনে হয়, আই অ্যাম ডুয়িং আ পারফেক্ট জব, নো কমপ্লেইনস অ্যাট অল। দল থেকেও কোনো অভিযোগ নেই, তারা খুবই খুবই খুশি। দে ওয়ান্ট মি টু প্লে লাইক দ্যাট। আমি পুরোপুরি খুশি।

যদি আপনি পরিসংখ্যান দেখেন, ওই ধরনের ব্যাটিং করে আমি দলের জয়ে সহায়তা করছি। এমন কোনো খেলা কেউ দেখাতে পারবে না, যেখানে আমার এই ধরনের ব্যাটিংয়ের কারণে বাংলাদেশ দল হেরে গেছে। এরকম ২০টা খেলা আপনারা দেখতে পারবেন, এই কারণে আমরা জিতেছি। বলছি না যে আমার কারণেই জিতেছে, কিন্তু ইম্প্যাক্ট রাখতে পেরেছি। ওয়ানডে তাই ঠিক আছে।

টি-টোয়েন্টিতে অবশ্যই, ১১৬ স্ট্রাইক রেটের জায়গায় ১২৫ বা ১৩০ হলে আমি খুশি হব। ১৩০ স্ট্রাইক রেটে যদি ধারাবাহিক হতে পারি, দলের জন্য বড় সহায়তা হবে। এই জায়গায় উন্নতি করতে পারি। আমি এমন নই যে বলব, ‘এতটুকুই পারি, নিলে এর মধ্যেই নাও।’ আমি সবসময়ই বলি যে চ্যালেঞ্জ পছন্দ করি।

একটা ধারণা আছে যে আপনি খুব ইমোশনাল, চারপাশের অনেক কথা বা আবহ আপনার খেলায় প্রভাব ফেলে!

তামিম: আশেপাশের কথায় খেলায় প্রভাব ফেললে তা তো দৃশ্যমান হতো। আমার পারফরম্যান্স কি তা বলে? আমাকে নিয়ে কথা তো আজ থেকে নয়, সেই ২০১৪-১৫ সাল থেকেই হয়। সেসব যদি আমার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলত, তাহলে টিকতে পারতাম না। আমার পরিসংখ্যানই এই কথা বলবে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ বছর হয়ে গেছে আপনার। তামিম ইকবালের সেরা সংস্করণ যেটি হতে পারত, আপনি কি তা পেরেছেন?

তামিম: আমি তো নিজের কাছে আশা আরও বেশি করি। ২০১৫ সালের আগে সম্ভবত এরকম ভাবিনি। তখনও হয়তো ৩০-৩৫ গড় থাকলে খুশি থাকতাম। গত ৫ বছর ধরে আমি, সাকিব, মুশফিক, আমাদের গড় পঞ্চাশের বেশি (ওয়ানডেতে, ২০১৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত তামিমের গড় ৫১.৬৭, মুশফিকের ৪৮.৪৮, সাকিবের ৪৬.৩১)। বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানদের মতোই তো গড়।  আপনারা বলেন বা ফেসবুক কিংবা দর্শক, আপনারা যাদেরকে হাইলি রেট করেন, তাদের গড় ও আমাদের গড় প্রায় সমান। দুই-একজনের কথা আলাদা, তাদের গড় হয়তো ৬০-৭০।

আমি সম্ভবত এই সময়ে প্রথম ৫ ওপেনারের মধ্যে থাকব (এই সময়ে অন্তত ২০ ইনিংস খেলা ওপেনারদের মধ্যে পঞ্চম সর্বোচ্চ গড়)। মুশফিক মনে হয় রস টেইলরের পরেই আছে (চার নম্বরে অন্তত ২০ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গড়ের তালিকায়)।

অবশ্যই আমরা আরও বেশি চাই। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা তিন জন যদি বাংলাদেশকে আরও বেশি ম্যাচ জেতাতে পারতাম, সেটা আরও ভালো হতো।

এই যে স্ট্রাইক রেট নিয়ে আলোচনা…আমি অজুহাত দিচ্ছি না, কিন্তু ক্রিকেটে অনেক কিছু ভাবতে হবে। আমি কোন উইকেটে বেশি খেলি? গড় স্কোর কত এই মাঠে? কোন পজিশনে ব্যাট করি? ডট বলের পরিমাণ একটা ওপেনারের সবচেয়ে বেশি হওয়াই নরম্যাল, সার্কেলের ভেতর ব্যাট করতে হয়। অনেক কিছু ভেবে আলোচনা করবেন।

আমাদের দেশে বাতাস যেদিকে চলে, আমরা সবাই সেদিকে দৌড়াতে থাকি। কেউ আমার পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। আমার কথা হলো, আপনি আমাকে পছন্দ করেন বা না করেন, আমি কিন্তু আপনার দলের একজন ক্রিকেটার। আমিও আপনিই, আপনাদেরই একজন। আমাকে বা আমার কোনো টিমমেটকে আপনি যখন ছোট করছেন, তখন নিজের দেশের মানুষকেই ছোট করছেন। দেশের মানুষকে কোনো কিছু অর্জন করতে বাধা দিচ্ছেন। আপনি যদি ক্রমাগত কাউকে বলতে থাকেন যে ‘তুমি খারাপ, খারাপ, খারাপ, খারাপ…’, সে যতই মানসিকভাবে শক্ত হোক না কেন, একটা পর্যায়ে প্রভাব ফেলবেই।

যদি আমার বা আমার টিমমেটদের চেয়ে ভালো কেউ থাকে, যদি কেউ আমার চেয়ে ভালো স্ট্রাইক রেটে আরও বেশি রান করতে পারে, তাহলে কি মনে হয় আমার বা কারও ওই দলে জায়গা থাকবে? জায়গা তো থাকবে না। না যদি থাকে, তাহলে ওটা নিয়ে আলোচনা করে লাভ কি?

তারা হয়তো আপনাকে শুধু দেশের তারকা নয়, বিশ্ব তারকা হিসেবে দেখতে চায়, বিশ্বের সেরাদের মধ্যে দেখতে চায়!

তামিম: আমি কিন্তু একবারও বলিনি যে নিজের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। একবারও বলিনি যে আমি এমনই থাকব, কেউ নড়াতে পারবে না।

ধরুন, আমার স্ট্রাইক রেট যদি ৮০ হয়, একই পারফরম্যান্স যদি আমি ৮৫ স্ট্রাইক রেটে করতে পারি, আমি খুশি হব না? দল আরও লাভবান হবে না? কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, আমার দায়িত্ব আর জেসন রয়ের দায়িত্ব এক নয়। তার ভূমিকা ভিন্ন, আমার ভিন্ন।

আমাদের দলে যদি এরকম হয় যে বেশির ভাগ সময়ই ১০ ওভারের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে যায়, তখন ভুমিকা কি হবে? অন্য দলের কৌশল থাকতে পারে যে ১০ ওভারে তারা যে কোনোভাবে ১০০ করবে, কারণ তাদের সাতজন কোয়ালিটি ব্যাটসম্যান আছে। তাদের ভূমিকা অন্যরকম।

আপনি রেকর্ড দেখুন, আমাদের রান যদি ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৪০-৪৫-৫০ থাকে, আমরা ভালো করি। কিন্তু ১০ ওভারে ৬০ রান তুলেও আমরা যদি ৩ উইকেট হারাই, সেদিন ভালো করেত পারি না। ইতিহাস বলে, আমাদের দলের জন্য প্রথম ১০ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় একটু ধীরগতিতে এগোনো মানে দলের ক্ষতি করা নয়, সাহায্য করা।

শ্রীলঙ্কায় যেমন দেখা গেছে, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভা, সনাৎ জয়াসুরিয়া, রোশান মাহনামারা দলকে ছোট থেকে পরের ধাপে নিয়েই কেবল থামেনি, বিশ্বকাপ জিতিয়েছে, বিশ্বসেরা দলগুলির একটি করে তুলেছে। আপনারা অবশ্যই একটা ধাপে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সেরাদের মধ্যে নিতে পারলেন কোথায়?

তামিম: ঘাটতি অবশ্যই আছে। আমার কাছে মনে হয়, ২০২৩ বিশ্বকাপ আমাদের শেষ সুযোগ। আমি, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, আমাদের ১৩-১৪ বছর হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে আমরা হয়তো ‘ওকে’ করতে পেরেছি, কিন্তু দল হিসেবে আমরা কি অর্জন করেছি, এই চার জন? এটা একটা প্রশ্ন।

আমার মনে হয়, চার জনই এটা অনুভব করি। সামনের বিশ্বকাপে ভালো কিছু করতে চাই। যদি করতে পারি, তাহলে হয়তো আমরা গর্ব করে বলতে পারব যে বাংলাদেশকে আমরা এই জিনিসটি এনে দিয়েছি।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্যগুলির একটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। ওই ১৫ জনের ভবিষ্যতে কি হবে, সেটা আল্লাহই জানেন। তবে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এটা সবসময় থেকে যাবে। আশা করি, আমরাও ভালো কিছু দিতে পারব।

সেই বিশ্বকাপে কি আপনি নিজেকে অধিনায়ক হিসেবে দেখেন?

তামিম: ব্যাক অফ দা মাইন্ড থাকতে পারে। তবে অধিনায়কত্ব, পারফরম্যান্স, এসবের নিশ্চয়তা নেই। এখন আমি যখন অধিনায়ক, তখন তো ওই ভাবনার পথে হাঁটতে হবে। অধিনায়ক হয়ে যদি কেবল কালকেরটাই ভাবি, তা হলে তো হবে না। সামনের সিরিজের আগে বা পরে কেউ যদি আমার বদলে দায়িত্ব পায়, তাকেও একইভাবে ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়েই ভাবতে হবে।

পারফরম্যান্স না থাকলে শুধু অধিনায়ক কেন, খেলোয়াড় হিসেবেও নাও থাকতে পারি। আবার দল যদি ভালো করে, আমি ভালো করি, হয়তো থাকব।

বাংলাদেশ দল বেশির ভাগ সময় তখনই ভালো করে, যখন দলের বোঝাপড়া খুব ভালো থাকে। একটা পরিবারের মতো থাকে। এই দল কি তেমন আছে?

তামিম: দলের ভেতর কম-বেশি সবকিছু ঠিক আছে। অবশ্যই আরও ভালো হতে পারি আমরা। বলছি না সব নিখুঁত। তবে বাংলাদেশ দলে বড় গণ্ডগোল কখনোই ছিল না। অন্তত আমি যে ১৪ বছর ধরে আছি, কারও সঙ্গে কারও বড় ঝামেলা দেখিনি।

হ্যাঁ, একটি পরিবারে তর্ক হয়, দ্বিমত হয়, কথা কাটাকাটি হয়। হওয়াটাই স্বাস্থ্যকর। ভালোর শেষ নেই। আরও সম্পৃক্ত হতে পারি সবাই। আরও ৬ মাস পর যদি জিজ্ঞেস করেন, তখন যদি এখনকার চেয়ে ভালো হয়, তারপরও ভালো হওয়ার জায়গা থাকবে।

আপনার সঙ্গে সাকিবের সম্পর্ক শীতল বলে গুঞ্জন শোনা যায়…!

তামিম: আমার আর সাকিবের সম্পর্ক নরম্যাল। খারাপ নয়। এমন নয় যে আমরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলি না বা যে কোনো প্রয়োজনে পরস্পরের কাছে যেতে পারি না। কখনোই এরকম সম্পর্ক আমাদের ছিল না। 

৭-৮ বছর আগে আপনারা যখন বলতেন যে ‘বেস্ট অব দা ফ্রেন্ডস’, আমরা গলায় গলায় ধরে হাঁটি, তখনও আপনাদের সমস্যা ছিল যে এত ভালো কেন সম্পর্ক! এখনও আপনারাই বানান যে আমাদের সম্পর্ক খারাপ, আমাদের মধ্যে গণ্ডগোল। ওই সময়ও আমরা বলিনি যে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ডস, এখনও কোনো সময়ই বলিনি যে শত্রু। যা বানানো, আপনারা বা মানুষজন বানাচ্ছেন।

আমার কাছ থেকে যদি পরিষ্কার বার্তা চান, আমার আর সাকিবের সম্পর্ক এমন যেটা বললাম, আমরা চাইলেই পরস্পরের কাছে যেতে পারি। দল নিয়ে ওর সঙ্গে আলোচনা করতে হলে করি। ওর কিছু মনে হলে আমাকে বলে। আমার ও ওর সম্পর্ক একদম নরম্যাল।

মাশরাফি আর সাকিব সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেট, সিস্টেম নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেটা বিরল। আপনার অভিমত কি?

তামিম: বলাটা খুব কঠিন, যেহেতু আমি একটা চুক্তিতে আছি। আমি দ্বিমতও করছি না, একমতও হচ্ছি না। আমার বার্তা একটিই থাকবে, সবার একসঙ্গে হয়ে সমাধান করা উচিত। ক্রিকেটাররা, বোর্ড সবাই চাই দলের ভালো। দুই পক্ষের সম্পর্ক ভালো থাকা জরুরি। বিরোধ থাকলে বসে, কথাবার্তা বলে সেটাকে কমিয়ে আনা উচিত। দুই পক্ষই গুরুত্বপূর্ণ। এটা সমাধান করা অসম্ভব কিছু নয়।

তামিম ইকবালকে কখনও বোর্ডে দেখা যাবে?

তামিম: সেটা ক্যারিয়ার শেষেই বোঝা যাবে যে আমি আসব কিনা বা ক্রিকেটের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা আছে কিনা। সময়ই বলবে।