মেয়েদের টেস্ট মর্যাদা: চাওয়ার আগে পেয়ে আত্মহারা নয় বাংলাদেশ

ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় দৈর্ঘ্যের সংস্করণ চালু করে, একটু প্রস্তুতি নিয়ে মেয়েদের টেস্ট মর্যাদার জন্য আবেদন করার ভাবনায় ছিল বিসিবি। এর আগেই আইসিসি সব পূর্ণ সদস্য দেশের নারী দলকে স্থায়ীভাবে টেস্ট ও ওয়ানডে মর্যাদা দিয়ে দিয়েছে। হুট করে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আনন্দে অবশ্য ভেসে যাচ্ছে না বাংলাদেশ। তড়িঘড়ি করে কোনো টেস্ট আয়োজন না করে মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেটকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করছে বিসিবি।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2021, 01:23 PM
Updated : 2 April 2021, 02:54 PM

বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে স্থায়ীভাবে ওয়ানডে ও টেস্ট মর্যাদা নিয়ে নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এখনও পর্যন্ত ১০টি দেশ খেলেছে মেয়েদের টেস্ট।

বিসিবির নারী বিভাগের ম্যানেজার তৌহিদ মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আইসিসির ঘোষণার পর পরিকল্পনা গুছিয়ে আনার কাজ শুরু করেছেন তারা। টেস্ট খেলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ের দিকে তাকিয়ে নেই তারা। মাঠে নামতে চান পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই। 

“সামনে প্রচুর কাজ, শুরু করতে চাই ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়ে। আইসিসি আমাদের এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তারা আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে। একটা গাইডলাইন পাঠাবে। আমরা সেই গাইডলাইনের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটা অনুযায়ীই আমরা এগোবো।”   

“আমি মনে করি, বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য, এটা খুব ইতিবাচক একটি ব্যাপার হলো। মেয়েদের ক্রিকেটে আমরা হয়তো একটা সময় পর টেস্ট মর্যাদার জন্য আবেদন করতাম। সেটা আগেভাগেই পেয়ে গেলাম। এখন খেলোয়াড়রা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত থাকবে। আরও অনেক বেশি মেয়ে ক্রিকেটকে ইতিবাচকভাবে নেবে।”    

করোনাভাইরাসের জন্য দুই বছর ধরে থমকে আছে মেয়েদের বড় দৈর্ঘ্যের টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর প্রথম সুযোগেই এই টুর্নামেন্ট শুরুর তাগিদ অনুভব করছেন তৌহিদ।

“২০২০ সালেও আমাদের পরিকল্পনায় এটা ছিল। কিন্তু কোভিডের জন্য সেবারও করতে পারিনি। এবারও পরিকল্পনায় আছে কিন্তু মহামারীর প্রাদুর্ভাবে করা যাচ্ছে না। আমরা তিন বছর ধরেই ভাবছি অন্তত দুই দিনের ম্যাচের একটা টুর্নামেন্ট চালুর।”

“ওরা এখন কেবল ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি খেলে, হঠাৎ করে ৩ কিংবা ৪ দিনের ম্যাচ খেলতে নামলে মানিয়ে নিতে ওদের সমস্যা হতে পারে। এর জন্য প্রাথমিকভাবে আমরা দুই দিনের ম্যাচ দিয়ে শুরু করতে চেয়েছিলাম। অন্তত বড় দৈর্ঘের ক্রিকেটটা শুরু হোক। আইসিসির এই সিদ্ধান্ত আমাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে। টেস্ট তো আর হঠাৎ করে খেলা যাবে না। একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে, খেলোয়াড় তৈরির ব্যাপার আছে।”

বিসিবির নারী ক্রিকেট বিভাগের প্রধান শফিউল ইসলাম চৌধুরি নাদেল জানান, আইসিসির ঘোষণায় এ দেশের মেয়েদের ক্রিকেটের চেহারা পাল্টে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।  

“এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আইসিসি টেস্ট মর্যাদা দেওয়ার এই সিদ্ধান্তটা নিল।”

“এখন আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ, আমাদের বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট শুরু করতে হবে। স্কুল ক্রিকেট, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট চালুর পর মেয়ে ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়ছে। এই সংখ্যাটা আমরা আরও বাড়িয়ে নিতে চাই।”

অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধাসহ মেয়েদের ক্রিকেটের ভিত শক্ত করতে মেয়েদের জন্য একটি স্টেডিয়াম নির্দিষ্ট করে পেতে চান বিসিবি পরিচালক নাদেল।

“পরের বোর্ড মিটিংয়েই ব্যাপারটা তুলব। সেই মাঠটা হবে শুধু মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য। সেখানে ইনডোর, জিম থেকে শুরু করে সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে।”

সব পরিকল্পনা ঠিকঠাক মতো এগোলেই কেবল টেস্ট খেলার ভাবনা নাদেলের। মাঠে নামতে চান পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে।    

“এতদিন আমরা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি নিয়ে কাজ করেছি। আমাদের চিন্তা-ভাবনা ছিল এই দুই সংস্করণকে ঘিরে। এখন টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এই সংস্করণ নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। লোকবল বাড়াতে হবে। এটাও আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।

“প্রস্তুতি নিয়েই আমরা টেস্ট খেলতে চাই। চাই না হুট করে খেলতে নেমে মেয়েরা বাজে ফল করুক। আগে আমাদের বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট শুরু করতে হবে। করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়েই যেন শুরু করতে পারি, সেই চেষ্টা থাকবে।”

মেয়েদের টেস্ট ম্যাচ অবশ্য ক্রিকেট বিশ্বজুড়েই হয় খুব কম। গত ৫ বছরে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, আর কোনো দল টেস্ট খেলেনি। ভারত সবশেষ টেস্ট খেলেছে ২০১৪ সালের নভেম্বরে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, নিউ জিল্যান্ড ২০০৪ সালের পর কোনো টেস্ট খেলেনি। শ্রীলঙ্কার মেয়েরা তাদের একমাত্র টেস্ট খেলেছে ১৯৯৮ সালে।