২১ উইকেট পতনের দিনে উজ্জ্বল তাইজুল, সোহাগ

দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাজত্ব করলেন বোলাররা। ম্যাচের শুরুর দিনেই শেষ হয়ে গেল বরিশাল বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের প্রথম ইনিংস। ২১ উইকেট পতনের দিনে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে উজ্জ্বল তাইজুল ইসলাম। একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়া দলকে লড়াইয়ে রাখতে বল হাতে আলো ছড়ালেন সোহাগ গাজী।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2021, 12:36 PM
Updated : 29 March 2021, 02:24 PM

বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে প্রথম দিনের খেলা শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বরিশালের রান ১ উইকেটে ২৩। প্রথম ইনিংসে ৮২ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটি এখনও ৪৬ রানে পিছিয়ে।

মাঝে ৬৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে রাজশাহীকে ১৫১ রানে থামান সোহাগ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই অফ স্পিনার ২২ বার নিলেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট।

এক দিনে দুইবার আউট হলেন বরিশালের ওপেনার সৈকত আলি। প্রথম ইনিংসে ক্যাচ দিয়েছিলেন মোহর শেখের বলে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বল অহেতুক তাড়ায় ধরা পড়েন স্লিপে। বাকি সময়টা নাইটওয়াচম্যান কামরুল ইসলাম রাব্বিকে নিয়ে কাটিয়ে দেন মইনুল ইসলাম।

দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট নেন তাইজুল। সঙ্গে ১০ নম্বরে নেমে খেলেন ৩৭ রানের ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।

উইকেটে শুরু থেকে সুবিধা পেয়েছেন স্পিনাররা। প্রথম থেকেই পেয়েছেন বড় টার্ন। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে টিকে থাকতে চাইলে কাজটা কঠিন ছিল না। তবে তাতে যে ধৈর্য প্রয়োজন তা ছিল না বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানের।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচে সোমবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বরিশালের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো, ১০ রানে দুই উইকেট হারায় তারা। সৈকতকে ফেরানোর পর ফজলে মাহমুদকে এলবিডব্লিউ করে দেন মোহর শেখ।

শুরুর এই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি বরিশাল। পরের ৮ উইকেট ভাগ করে নেন দুই বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম ও তাইজুল।

চার ব্যাটসম্যান যান দুই অঙ্কে, তাদের কেউ ২০ ছুঁতে পারেননি। সর্বোচ্চ মইন খানের ২ ছক্কায় ১৮।

বরিশালের কেউ খুঁজে পাননি সানজামুল ও তাইজুলের জবাব। তাদের স্পিনে প্রথম সেশনেই গুটিয়ে যায় বরিশাল। ১৮ রানে ৪ উইকেট নেন সানজামুল। তাইজুল ৪ উইকেট নেন ৩৯ রানে। 

রাজশাহীর ইনিংসের শুরুটা ছিল দারুণ। এক প্রান্তে দ্রুত রান তুলছিলেন তানজিদ হাসান। আরেক প্রান্তে সাবধানী ছিলেন জহুরুল ইসলাম। দ্রুত পঞ্চাশ স্পর্শ করে দলটির রান। দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫১ রানের দৃঢ় ভিতের উপর।

এর পরপরই ছোবল দেন সোহাগ। ভালো শুরুর পর দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় রাজশাহী। ৫১ থেকে ৮৬ এই ৩৫ রান করার পথে ৮ উইকেট হারায় দলটি। এর ছয়টিই নেন অভিজ্ঞ অফ স্পিনার সোহাগ।

শিকার শুরু করেন জহুরুলকে ফিরিয়ে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ রান করা তানজিদকে থামান মইন। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে মিডল অর্ডার। অভিজ্ঞ ফরহাদ হোসেন ও সাব্বির রহমানকে বিদায় করেন সোহাগ। দুই ব্যাটসম্যানই ধরা পড়েন সৈকতের হাতে।

তৌহিদ হৃদয়, প্রিতম কুমার ও সানজামুলকে রানের খাতাই খুলতে দেননি সোহাগ।

তার ছোবল এড়িয়ে লড়াই করছিলেন তিন নম্বরে নামা জুনায়েদ সিদ্দিক। পাচ্ছিলেন না সঙ্গী। ১০ নম্বরে দাঁড়িয়ে যান তাইজুল। গড়ে ওঠে ইনিংসের সেরা জুটি।

আক্রমণে ফিরে কামরুল ইসলাম রাব্বি ভাঙেন ৬২ রানের ওই জুটি। তাকে দুই চার মেরে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন তাইজুল। তার ৪২ বলে খেলা ৩৭ রানের ইনিংস চার ছয়টি।      

দুই রানের চেষ্টায় জুনায়েদ রান আউট হলে ১৫১ রানে গুটিয়ে যায় রাজশাহীর ইনিংস। বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান চারটি চারে ৯৯ বলে করেন ৪৩ রান। দল পায় ৬৯ রানের লিড।

দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুটা ভালো হয়নি বরিশালের। শুরুতেই সৈকতকে ফিরিয়ে দেন তাইজুল। বাকি সময়ে আর কোনো ক্ষতি হতে দেননি মইনুল ও রাব্বি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বরিশাল ১ম ইনিংস: ২৯.৩ ওভারে ৮২ (সৈকত ২, মইনুল ১২, মাহমুদ ২, সালমান ১৩, আবু সায়েম ১, সোহাগ ১১, মইন ১৮, শামসুল ৮, তানভির ৮, মনির ২, রাব্বি ৩*; মোহর ৫-২-৭-২, মুক্তার ৬-২-১৬-০, সানজামুল ১০-৩-১৮-৪, তাইজুল ৮.৩-০-৩৯-৪)

রাজশাহী ১ম ইনিংস: ৪৮.৫ ওভারে ১৫১ (তানজিদ ৩৬, জহুরুল ১৫, জুনায়েদ ৪৩, ফরহাদ ৯, হৃদয় ০, সাব্বির ৯, মুক্তার ১, প্রিতম ০, সানজামুল ০, তাইজুল ৩৭, মোহর ১*; রাব্বি ২.৫-০-২১-১, তানভির ৯-০-৩৫-০, সোহাগ ২৩-৬-৬৫-৬, মইন ১১-৪-২৬-১, মনির ৩-১-৪-১)

বরিশাল ২য় ইনিংস: ৭ ওভারে ২৩/১ (সৈকত ৪, মইনুল ১১*, রাব্বি ৮*; মোহর ১-০-৪-০, সানজামুল ৩-১-৬-০, তাইজুল ২-০-৯-১, হৃদয় ১-০-৪-০)