বেয়ারস্টো-স্টোকসের নৈপুণ্যে রেকর্ড রান তাড়া করল ইংল্যান্ড

প্রথম ওয়ানডেতে আশা জাগিয়েও সেঞ্চুরি পাননি জনি বেয়ারস্টো। দলও পেয়েছিল হারের তেতো স্বাদ। এবার আর কোনো হতাশা নয়। তার দারুণ সেঞ্চুরি, সঙ্গে বেন স্টোকসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড রান তাড়া করে সিরিজে সমতা এনেছে ইংল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2021, 04:10 PM
Updated : 26 March 2021, 05:39 PM

পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের ৬ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ৩৩৭ রানের লক্ষ্য সফরকারীরা ছুঁয়ে ফেলেছে ৩৯ বল আগে।

তিন ম্যাচের সিরিজটি এখন ১-১ সমতায়।

ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তিনশর ওপরে রান তাড়া করার রেকর্ড ছিল না ইংল্যান্ডের। ১৯৭৪ সালে ২৬৫ রান তাড়া করে জয় দলটির আগের সেরা। এর চেয়ে বেশি রান তাড়ায় দুটি ম্যাচ অবশ্য টাই হয়েছিল। দুটিই ২০১১ সালে, ৩৩৮ রানে ও ২৭০ রানে।

দলকে রেকর্ড গড়া জয় এনে দেওয়ার মূল কারিগর বেয়ারস্টো ও স্টোকস দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ১৭৫ রানের জুটি। রান তাড়ায় দ্বিতীয় উইকেটে ভারতের বিপক্ষে এটি ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ ও যে কোনো দলের বিপক্ষে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি।

বেয়ারস্টো ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একাদশ সেঞ্চুরি করে আউট হন ১১২ বলে ১২৪ রানে। ১১ চার ও ৭ ছক্কার ইনিংসটির সুবাদে ম্যাচ সেরা হন এই ওপেনার। তবে স্টোকসের সঙ্গী হয়েছে ১ রানের জন্য শতক না পাওয়ার আক্ষেপ। ম্যাচের লাগাম ইংল্যান্ডের হাতে এনে দেওয়া এই অলরাউন্ডার ফেরেন ৫২ বলে ৯৯ রান করে। ১০ ছক্কার সঙ্গে মারেন ৪টি চার।

এর আগে সেঞ্চুরি করেন লোকেশ রাহুল। ১১৪ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। সঙ্গে রিশাভ পান্তের ৪০ বলে ৭৭ ও বিরাট কোহলির ৬৬ রানের সুবাদে তিনশ পার করা সংগ্রহ গড়ে ভারত।

উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল না তেমন কিছুই। তবে সেই সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতের দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। চতুর্থ ওভারে রিস টপলির বলে স্লিপে ধরা পড়েন ধাওয়ান। ইনিংস বড় করতে পারেননি রোহিতও।

৩৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন কোহলি ও রাহুল। ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা ভারত অধিনায়ক ৬২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন। রাহুলের ফিফটি আসে ৬৬ বলে। তাদের দুই জনের জুটির শতরান হয় ১১৯ বলে।

এবারও ফিফটির পর বেশিদূর এগোতে পারেননি কোহলি। আদিল রশিদের লেগ স্পিনে কট বিহাইন্ড হন তিনি ৩ চার ও এক ছক্কায় ৬৬ রানে। এই ইনিংসের পথে ওয়ানডেতে তিন নম্বর পজিশনে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রান পূর্ণ করলেন কোহলি। প্রথম কীর্তিটি গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং।

বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রান বাড়াতে থাকেন দলে ফেরা পান্ত। স্টোকসকে পরপর দুই বলে ছক্কায় ওড়ান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। টম কারানকে ছক্কার পর চার মেরে তিনি ফিফটি তুলে নেন ২৮ বলে। রাহুলের একটি করে ছক্কা-চারে ওই ওভারে ২২ রান তোলে ভারত।

১০৮ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন রাহুল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যা তার পঞ্চম ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম। এর খানিক পরেই তিনি টম কারানের বলে ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেটে। তার ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও ২টি ছক্কায়। ভাঙে তাদের ১১৩ রানের জুটি।

নেমেই ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন হার্দিক পান্ডিয়া। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই তিনি স্যাম কারানকে ওড়ান ছক্কায়। ওই ওভারে পরে মারেন আরেকটি। মাঝে পান্তের ছক্কায় ওভারটি থেকে ২১ রান পায় ভারত।

টম কারান এসে ফেরান পান্তকে। ৭ ছক্কা ও ৩ চারে তিনি করেন ৭৭ রান। শেষ ওভারে ফিরে যান হার্দিকও। ১৬ বলে তার ৩৫ রানের ইনিংস সাজানো এক চার ও ৪ ছক্কায়।

ভারত শেষ ১০ ওভারে তোলে ১২৬ রান। প্রতিপক্ষকে ছুড়ে দেয় তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য।

প্রথম ম্যাচের মতো রান তাড়ায় জেসন রয় ও বেয়ারস্টোর ব্যাটে ভালো শুরু পায় ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে তারা কোনো উইকেট না হারিয়ে তোলে ৫৯ রান।

কুলদিপ যাদবকে ছক্কায় উড়িয়ে ৪৮ বলে ফিফটি স্পর্শ করে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রয়। ইংলিশ ওপেনার রান আউটে কাটা পড়েন ৭ চার ও এক ছক্কায় ৫২ বলে ৫৫ রান করে। ভাঙে ১১০ রানের উদ্বোধনী জুটি।

সময়ের সঙ্গে মারমুখী হতে থাকেন বেয়ারস্টো। শার্দুল ঠাকুরকে টানা মারেন দুই ছক্কা। কুলদিপকে ছক্কায় উড়িয়ে ৪৫ বলে তুলে নেন ফিফটি। স্টোকসকে নিয়ে এগোতে থাকেন লক্ষ্যের দিকে। পরে ভারতীয় রিস্ট স্পিনারকেই ছক্কায় উড়িয়ে ৯৫ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন বেয়ারস্টো।

থিতু হয়ে ঝড় তোলেন স্টোকস। কুলদিপকে হ্যাটট্রিক ছক্কায় ওড়ান ইংলিশ অলরাউন্ডার। ৪০ বলে করেন ফিফটি। পরের ১২ বলে খুনে ব্যাটিংয়ে তোলেন ৪৯ রান। ক্রুনাল পান্ডিয়ার ওভারে তিন ছক্কার সঙ্গে মারেন এক চার। ওই ওভার থেকে ইংল্যান্ড তোলে ২৮ রান।

ভুবনেশ্বরকে চার মেরে ৯৯ রানে পৌঁছে যান স্টোকস। পরের বলেই বাউন্সারে কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি। ভাঙে ১৭৫ রানের জুটি।

এরপর বেয়ারস্টোও উইকেটে থাকতে পারেননি বেশিক্ষণ। প্রসিধের বলে কাভারে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে থামেন ১২৪ রানে। তরুণ এই পেসার বোল্ড করে দেন ওয়েন মর্গ্যানের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব পাওয়া জস বাটলারকে।

দুই ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে নাটকীয় শেষের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত আর খেলায় ফিরতে পারেনি তারা।

অভিষিক্ত লিয়াম লিভিংস্টোন (২৭) ও দাভিদ মালান (১৬) বাকি কাজ সারের অনায়াসে।

আগামী রোববার একই মাঠে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৩৩৬/৬ (রোহিত ২৫, ধাওয়ান ৪, কোহলি ৬৬, রাহুল ১০৮, পান্ত ৭৭; হার্দিক ৩৫, ক্রুনাল ১২*, শার্দুল ০*; স্যাম ৭-০-৪৭-১, টপলি ৮-০-৫০-২, টম ১০-০-৮৩-২, স্টোকস ৫-০-৪২-০, মইন ১০-০-৪৭-০, রশিদ ১০-০-৬৫-১)।

ইংল্যান্ড: ৪৩.৩ ওভারে ৩৩৭/৪ (রয় ৫৫, বেয়ারস্টো ১২৪, স্টোকস ৯৯, মালান ১৬* বাটলার ০, লিভিংস্টোন ২৭*; ভুবনেশ্বর ১০-০-৬৩-১, প্রসিধ ১০-০-৫৮-২, শার্দুল ৭.৩-০-৫৪-০, কুলদিপ ১০-০-৮৪-০, ক্রুনাল ৬-০-৭২-০)।

ফল: ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায়।

ম্যান অব দা ম্যাচ: জনি বেয়ারস্টো।