তৃতীয় ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান করেছে স্বাগতিকরা।
চলতি সিরিজ দিয়ে ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া দুই ব্যাটসম্যান কনওয়ে ও মিচেল পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ। পঞ্চম উইকেটে উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউ জিল্যান্ডের সর্বোচ্চ ১৫৯ রানের জুটি।
১১০ বলে ১২৬ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেছেন কনওয়ে। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনবার বেঁচে যাওয়া মিচেল ইনিংসের শেষ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। কনওয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ৯৫ বলে, মিচেলের লাগে ৯২ বল।
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিং নেন টম ল্যাথাম। সিরিজে প্রথমবার আগে বোলিং পাওয়া বাংলাদেশের শুরুটা হয় দারুণ। একাদশ ওভারে ৫৭ রানের মধ্যে ফিরিয়ে দেয় তিন ব্যাটসম্যানকে।
এই সময়ে হাতছাড়া হয় দুটি ক্যাচ। নষ্ট হয় রান আউটের দুটি সুযোগ। এর তিনটিতেই ব্যাটসম্যান ছিলেন নিকোলস।
অষ্টম ওভারে তাসকিনের বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ঝাঁপিয়ে দুই হাতে বলের নাগাল পেলেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। উল্টো হয় বাউন্ডারি। আগের ম্যাচেও অনেকটা একই ধরনের ক্যাচ ছেড়েছিলেন মুশফিক।
এবার খুব একটা মাশুল দিতে হয়নি। এক বল পরেই নিকোলসকে ফিরিয়ে দেন তাসকিন। তার বলে গালিতে ক্যাচ নেন লিটন দাস। ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।
পরের ওভারেই রুবেল ধরেন বড় শিকার। বিদায় করেন বিপজ্জনক মার্টিন গাপটিলকে। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল পুল করার চেষ্টায় মিড অনে ক্যাচ দেন তিনি। সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান লিটন।
চোট কাটিয়ে ফেরা রস টেইলর ফিরে যেতে পারতেন ৩ রানেই। রুবেলের অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে খেলার চেষ্টায় ক্যাচ দেন মিড অফে। কিন্তু ক্যাচ তালুতে জমাতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান।
এবারও খুব একটা মাশুল দিতে হয়নি। বাউন্ডারি মেরে পরের বলেই ফিরে যান টেইলর। রুবেলের বলটি ছিল শরীরের বেশ কাছে। তবুও কাট করেন টেইলর। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা সহজ ক্যাচ গ্লাভসে জমান মুশফিক।
মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের জায়গায় একাদশে ফেরা রুবেল ৫ ওভারে ২৫ রানে নেন ২ উইকেট। ৭ ওভারের টানা স্পেলে তাসকিন ২৯ রানে নেন একটি। তারা আক্রমণ থেকে সরে যেতেই আলগা হয়ে যায় চাপ। দুই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ভাবাতে পারছিলেন না ব্যাটসম্যানদের।
বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন অনিয়মিত পেসার সৌম্য সরকার। তার প্রথম বলে পয়েন্টে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ল্যাথামের দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মিরাজ।
১২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া নিউ জিল্যান্ডকে টানেন কনওয়ে ও মিচেল। শুরুতে রানের জন্য ছটফট করছিলেন কনওয়ে। মুস্তাফিজের বলে ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপ দিয়ে বাউন্ডারি পান তিনি। স্লিপে কোনো ফিল্ডার নেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক, পরের বলেই আবার ফাঁকা স্লিপ দিয়ে যায় ক্যাচ।
শুরুতে সাবধানী ছিলেন মিচেল। থিতু হয়ে যাওয়ার পর তাকে ফেরানোর একটা সুযোগ এসেছিল। কিন্তু বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেন মুঠোয় নিতে পারেননি বল। নষ্ট হয় রান আউটের সুবর্ণ সুযোগ। সে সময় ২৪ রানে ছিলেন মিচেল। ফিফটি স্পর্শ করার পর তাসকিনের বলে তার ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ।
৭১ বলে ফিফটি স্পর্শ করে জুটির রান। পরের ৭১ বলে যোগ করে আরও একশ রান।
মুস্তাফিজকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে থামেন কনওয়ে। ভাঙে ১৪৭ বল স্থায়ী ১৫৯ রানের জুটি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিতে ১৭ চারে ১২৬ রান করেন কনওয়ে।
রুবেলকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে দ্রুত ফিরেন জিমি নিশাম।
সেঞ্চুরির জন্য শেষ ২ ওভারে ২৯ রান প্রয়োজন ছিল মিচেলের। রুবেলের ওভার থেকে ১১ রান নেওয়ার পর মুস্তাফিজের প্রথম তিন বলে হাঁকান বাউন্ডারি। এর মধ্যে তৃতীয় বলটি ‘নো’ বল হওয়ায় পান ফ্রি হিট। পরের দুই বলে ৩ রান নিয়ে স্ট্রাইক হারান।
পঞ্চম বলে স্যান্টনার ৩ রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন মিচেলকে। ৯৮ রানে থাকা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শেষ বলে ২ রান নিতে গিয়ে অনায়াসে আউট হতে পারতেন। ফিল্ডারের থ্রো ছিল বাজে, একই রকম বাজে ছিল মুশফিকের কিপিং। বল ঠিক মতো ধরতেই পারেননি তিনি। প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির স্বাদ পান মিচেল। তার ৯২ বলের ইনিংসে ৯ চারের পাশে ২টি ছক্কা।
শেষ ১০ ওভারে ১০৭ রান যোগ করে নিউ জিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩১৮/৬ (গাপটিল ২৬, নিকোলস ১৮, কনওয়ে ১২৬, টেইলর ৭, ল্যাথাম ১৮, মিচেল ১০০*, নিশাম ৪, স্যান্টনার ৩*; মুস্তাফিজ ১০-০-৮৭-১, তাসকিন ১০-১-৫২-১, রুবেল ১০-১-৭০-৩, মেহেদি ৭-০-৪৬-০, মিরাজ ৫-০-২৩-০, সৌম্য ৮-০-৩৭-১)।