অভিষেকেই নিসানকার সেঞ্চুরি আর ডিকভেলার অম্ল-মধুর ইনিংসের সৌজন্যে অ্যান্টিগা টেস্টের গতিপথ পাল্টে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম দুই দিনে ধুঁকতে থাকা দলটিই এখন শেষ দিনে মাঠে নামবে জয়ের আশায়। গাণিতিকভাবে জয়ের সম্ভাবনা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। তবে বাস্তবতা বলছে, তাদের ম্যাচ বাঁচানোই দায়।
টেস্টের চতুর্থ দিনে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ৪৭৬ রানে। প্রথম ইনিংসের ১০২ রানের ঘাটতি পুষিয়েও তারা পেয়ে যায় হৃষ্টপুষ্ট লিড।
লঙ্কান লড়াইয়ের মূল নায়ক নিসানকা। ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অভিষেকে খেলেন ১০৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
শ্রীলঙ্কান হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা চতুর্থ ব্যাটসম্যান নিসানকা। তবে দেশের বাইরে তো বটেই, কলম্বোর বাইরে তিনিই প্রথম!
ডিকভেলা আউট হন ৯৬ রানে। এই নিয়ে ৪২ টেস্টের ক্যারিয়ারে ১৭বার ফিফটি পেরিয়ে, পাঁচবার ৮০ ছুঁয়েও একটি সেঞ্চুরির স্বাদ তিনি পেলেন না এখনও।
শেষ ইনিংসে ৩৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করে ১ উইকেটে ৩৪ রানে।
শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৩৪১ রান, যেটি পারার সম্ভাবনা খুবই সামান্য। সারাদিন ব্যাট করে ড্র করা বরং সম্ভাবনার পাল্লায় বেশি ভারী। লঙ্কানদের ৯ উইকেট শিকারের সম্ভাবনাও যেমন বেশ উজ্জ্বল।
শ্রীলঙ্কা বুধবার দিন শুরু করে ৪ উইকেটে ২৫৫ রান নিয়ে। ৪৬ রানে দিন শুরু করে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা আউট হয়ে যান ৫০ করেই। ক্যারিবিয়ানরা হয়ে ওঠে উজ্জীবিত। কিন্তু তাদের দমিয়ে দেয় নিসানকা ও ডিকভেলার দৃঢ়তা।
উইকেট চতুর্থ দিনে হয়ে ওঠে আরেকটু মন্থর। পেসারদের সহায়তা ছিল না বললেই চলে, স্পিনারদের টার্নও খুব ধীর। নিসানকা বেছে নেন ভীষণ সাবধানী ব্যাটিংয়ের পথ। এতটুকু সুযোগ তিনি দেননি।
ডিকভেলা এমনিতে রোমাঞ্চকর ব্যাটিং করতেই পছন্দ করেন। তবে এ দিন তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের মতো ফাস্ট বোলারকে সুইপ করা বা দু-একবার ঝুঁকির পথে হেঁটেছেন যদিও। তবে বেশির ভাগ সময়ই নিজের সঙ্গে সমঝোতা করে যেন সামলে রাখেন সহজাত প্রবৃত্তি।
শ্রীলঙ্কার শেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটসম্যানের জুটি ছিল এটি। কিন্তু এখানেই ফাটল ধরাতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা। এই জুটি উইকেটে কাটায় প্রায় ৫৪ ওভার!
নিসানকা ফিফটি স্পর্শ করেন ১২৬ বলে, ৫ চারে। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে চার মারেন মোটে একটি! এতটাই ছিল তার নিয়ন্ত্রণ। ২৪০ বলে পা রাখেন তিন অঙ্কের স্বর্গে।
শতরানের পর রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হন তিনি রাকিম কর্নওয়ালকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে।
ডিকভেলার বহু কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি এবার হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। শুধু তার ব্যাটিংয়ের ধরনের কারণেই নয়, পারিপার্শ্বিকতাও সঙ্গ দিচ্ছিল তার। ৪৫ রানে গালিতে তার সহজ ক্যাচ ফেলেন দেন এনক্রুমা বনার। ৭৪ রানে তার ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় কিপারের কাছে। বোলার আলজারি জোসেফ হালকা একটু আবেদন করলেও অন্যরা আবেদন করেননি। কোনো রিভিউও বেঁচে ছিল না তাদের। ৯৫ রানে কেমার রোচের বাউন্সার তার হেলমেটে ছোবল দিয়ে স্টাম্পে লাগলেও পড়েনি বেল!
তার পরও সেঞ্চুরি হয়নি তার, কারণ হঠাৎ তাকে পেয়ে বসে উইকেট ছুঁড়ে দেওয়ার পুরনো ভূত। রোচের বল অযথা লেট কাটের মতো করতে গিয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে। নিজের আগের সর্বোচ্চ ৯২ ছাড়িয়ে এবার কাটা পড়লেন ৯৬ রানে।
শ্রীলঙ্কার লেজ কতটা নরম, সেটার প্রমাণ দিতেই যেন শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা ৩৮ রানের মধ্যে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ১৬৯
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ২৭১
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস : (আগের দিন ২৫৫/৪) ১৪৯.৫ ওভারে ৪৭৬ (থিরিমান্নে ৭৬, করুনারত্নে ৩, ওশাদা ৯১, চান্দিমাল ৪, ধনাঞ্জয়া ৫০, নিসানকা ১০৩, ডিকভেলা ৯৬, লাকমল ৮, চামিরা ৬, এম্বুলদেনিয়া ১০, বিশ্ব ০* ; রোচ ২৭-৩-৭৪-৩, গ্যাব্রিয়েল ১৮-২-৬৭-০, হোল্ডার ২২-৪-৪০-০, জোসেফ ২১-২-৮৩-১, কর্নওয়াল ৪২.৫-৪-১৩৭-৩, ব্র্যাথওয়েট ৯-১-৩০-০, মেয়ার্স ৯-২-২৪-২, ব্ল্যাকউড ১-০-৩-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৩৭৫) ২০ ওভারে ৩৪/১ (ব্র্যাথওয়েট ৮*, ক্যাম্পবেল ১১, বনার ১৫*; লাকমল ৭-৪-৪-০, বিশ্ব ৬-০-২১-১, এম্বুলদেনিয়া ৪-২-৫-০, চামিরা ২-১-৪-০, ধনাঞ্জয়া ১-১-০-০)।