নিশামের ‘ফুটবল স্কিলে’ তামিমের বিদায়

গা গরমের জন্য ক্রিকেটাররা ফুটবল খেলে থাকেন প্রায়ই। মাঠের ক্রিকেটেও সেই ফুটবল স্কিল কাজে লাগবে, কে জানত! জিমি নিশামের পায়ের ছোঁয়াতে রান আউটে কাটা পড়ে হতাশায় মাঠ ছাড়লেন তামিম ইকবাল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2021, 03:48 AM
Updated : 23 March 2021, 03:04 PM

বাংলাদেশ অধিনায়ক তখন খেলছিলেন দারুণ। সেঞ্চুরি ছিল দৃষ্টিসীমায়। নিশামের একটি বল মুশফিকুর রহিম আলতো করে খেলেই ছুটতে থাকেন দ্রুত সিঙ্গেল নিতে। সাড়া দেন তামিম। ছুটে আসেন বোলার নিশামও। নিচু হয়ে বল কুড়িয়ে থ্রো করার সময় তখন নেই। নিশাম বাঁ পায়ে টোকা দেন বলে, একদম নিখুঁত নিশানা। বল যখন স্টাম্পে লাগল, তামিম তখন ক্রিজ থেকে বেশ দূরে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম ৫০ ছোঁয়া ইনিংস খেলে তামিম ফিরলেন ১০৮ বলে ৭৮ রান করে। সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা থাকলেও ম্যাচের বাস্তবতায় মহামূল্য ইনিংস।

৩৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১৫৬। ২০ রানে খেলছেন মুশফিকুর রহিম, ১৬ রানে মোহাম্মদ মিঠুন।

আগের ম্যাচের মতোই টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। হ্যাগলি ওভালে দিবা-রাত্রির ম্যাচ শুরু রোদ ঝলমলে দুপুরে, উইকেটে তাই নেই তেমন আর্দ্রতা। ঘাসের ছোঁয়াও নেই। বেশ ব্যাটিং সহায়ক উইকেট।

বাংলাদেশ তবু ধাক্বা খায় শুরুতে। লিটন দাস পারেননি এই উইকেটেও নিজেকে খুঁজে পেতে। বিদায় নেন ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই।

ব্যাটিং ক্রিজের বেশ বাইরে স্টান্স নেওয়া লিটন পুল করেন ম্যাট হেনরির শর্ট বলে। তবে না পারেন তিনি অনেক উঁচিয়ে মারতে, না পারেন নিচে রাখতে। বল যায় সরাসরি স্কয়ার লেগে ফিল্ডার উইল ইয়াংয়ের হাতে। চার বলে শূন্য রানেই শেষ তার ইনিংস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ৩ ম্যাচের পর এই সিরিজের ২ ম্যাচ, এই ৫ ইনিংস মিলিয়ে লিটনের রান ৫৫। শূন্য দুটিতে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪১ ইনিংসে তার ষষ্ঠ শূন্য।

তামিম শুরু করেন প্রথম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টকে আত্মবিশ্বাসী এক ফ্লিকে চার মেরে। তবে লিটনের বিদায়ের পর সাবধানী হয়ে ওঠেন কিছুটা। তিনে নেমে সৌম্য সরকার ব্যাটে-বলে করতেই ধুঁকতে থাকেন শুরুতে। বেশ কয়েকবার অল্পের জন্য তার ব্যাটের কানা নেয়নি বল।

৭ ওভার শেষে দলের রান ছিল ১ উইকেটে ১৪।

অষ্টম ওভারে হেনরিকে দারুণ তিনটি বাউন্ডারিতে রানের গতি কিছুটা বাড়ান তামিম। প্রথমটি ফ্লিক করে, পরেরটি পুল শটে, শেষটি নান্দনিক স্কয়ার ড্রাইভে।

১০ ওভার শেষে সৌম্যর রান ছিল ২১ বলে ২। একাদশ ওভারে কাইল জেমিসনকে অফ ড্রাইভে প্রথম বাউন্ডারি পান তিনি। পুরো ছন্দ না পেলেও এরপর কিছুটা সাবলীল হতে শুরু করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। জিমি নিশামকে বাউন্ডারি মারেন পুল করে।

তবে ক্যাচ মতো দিয়ে রক্ষাও পান তিনি একবার। ১৫তম ওভারে জেমিসনের বলে তার ফ্লিকে দুর্দান্ত ফুল লেংথ ডাইভে এক হাতে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টা করেন হেনরি নিকোলস। তবে বলে হাত ছোঁয়ালেও শেষ পর্যন্ত তালুবন্দী করে রাখতে পারেননি।

বিতর্কের খোরাক জোগানোর মতো একটি ঘটনা ঘটে পঞ্চদশ ওভারে। তামিমের ড্রাইভে অনেকটা নিচু হয়ে ফিরতি ক্যাচ নেন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার বোলার কাইল জেমিসন। বোলারসহ কিউই ফিল্ডাররা উল্লাসে মাতেন। কিন্তু ক্যাচ নিয়ে সংশয়ে সিদ্ধান্ত যায় টিভি আম্পায়ারের কাছে। মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগনাল ছিল ‘আউট।’

টিভি আম্পায়ার বারবার রিপ্লে দেখে রায় দেন, ক্যাচ নেওয়ার পর একদম শেষ মুহূর্তে বল পুরো নিয়ন্ত্রণে ছিল না জেমিসনের, বল খানিকটা স্পর্শ করে মাটিতে। মাঠের বড় পর্দায় ‘নট আউট’ সিদ্ধান্ত দেখে হতাশার ভঙ্গি করেন জেমিসন।

তামিম ফিফটি ছোঁয়ার আগেই বিদায় নেন সৌম্য। ড্যারিল মিচেলকে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারার পর মনে হচ্ছিল, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন। কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাস ডেকে আনে তার বিপদ। স্যান্টনারকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান ৪৬ বলে ৩২ করে। শেষ হয় তামিমের সঙ্গে তার ৮১ রানের জুটি।

এরপর তামিম ও মুশফিকের জুটিও জমে উঠছিল। তখনই নিশামের অসাধারণ প্রচেষ্টায় তামিমের রান আউট।