রেকর্ড গড়ে ভারতের সিরিজ জয়

ম্যাচটা এক অর্থে পরিণত হয়েছিল ‘ফাইনালে’। যেখানে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন রোহিত শর্মা। সঙ্গে বিরাট কোহলির কার্যকর ইনিংসে ভারত পেল রেকর্ড সংগ্রহ। রান তাড়ায় জস বাটলার ও দাভিদ মালানের ব্যাটে অনেকটা সময় ইংল্যান্ড লড়াই চালিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত বড় জয়েই সিরিজ মুঠোয় ভরেছে স্বাগতিকরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2021, 05:33 PM
Updated : 20 March 2021, 07:40 PM

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে শনিবার পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জয় ৩৬ রানে। টানা দুই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিতে নিয়েছে তারা ৩-২ ব্যবধানে।

কেবল ২ উইকেট হারিয়ে ভারত তোলে ২২৪ রান। টি-টোয়েন্টিতে যা তাদের চতুর্থ সর্বোচ্চ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডারবানে যুবরাজ সিংয়ের ওভারে ছয় ছক্কার ম্যাচে ৪ উইকেটে ২১৮ রান ছিল দলটির বিপক্ষে তাদের আগের রেকর্ড।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় বাটলার ও মালানের ৮২ বলে ১৩০ রানের জুটিতে জয়ের আশা জাগিয়েছিল ইংলিশরা। তবে মাঝপথে তিন রানে তিন উইকেট খুইয়ে পথ হারানো দলটি শেষ পর্যন্ত থামে ১৮৮ রানে।

বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ভুননেশ্বর কুমার। শুরুতেই আঘাত হানার পর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আউট করেন বিপজ্জনক বাটলারকে। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান আটকানোর কাজটিও তিনি করেন দারুণভাবে; ১৭টি ডট বল দেন, তার চার ওভার থেকে আসে মোটে ১৫ রান। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনি।

দলকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দিতে ৩৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলেন রোহিত। ওপেনিংয়ে নেমে ৫২ বলে অপরাজিত ৮০ রান করেন অধিনায়ক কোহলি।

৯৪ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। ছবি: রয়টার্স

সিরিজের প্রথম চার ম্যাচের ধারাবাহিকতায় শেষ ম্যাচেও টস জয়ী অধিনায়ক নেন বোলিং। চার ম্যাচে মাত্র ১৫ রান করা লোকেশ রাহুল এবার জায়গা হারান একাদশে।

ব্যাটিংয়ে ভারতের শুরুটা হয় দারুণ। সিরিজে চারবার আগে ব্যাট করে প্রথমবার কোনো উইকেট না হারিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে তারা। ৬ ওভারে তোলে ৬০ রান।

শুরু থেকে অসাধারণ সব শট খেলেন রোহিত। লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে ছক্কায় ওড়ান মিডউইকেটের ওপর দিয়ে। মার্ক উডের ১৪৯ ও ১৫০ কিলোমিটার গতির দুটি বলে চোখধাঁধানো চার মারেন স্ট্রেইট ড্রাইভে। এই পেসারের পরের ওভারে তিনি ছক্কায় ওড়ান পুল করে। একটি ছক্কা মারেন কোহলিও।

স্যাম কারানকে ছক্কায় উড়িয়ে রোহিত ফিফটি স্পর্শ করেন ৩০ বলে। যেখানে ৪টি ছক্কার সঙ্গে চার ৩টি। পরের ওভারে তিনি আরেকটি ছক্কা হাঁকান বোলার বেন স্টোকসের মাথার ওপর দিয়ে। পরের বলে বাউন্ডারি।

ওই ওভারেই তার ঝড় থামান স্টোকস। লেগ কাটারে আগেই ব্যাট চালিয়ে রোহিত হন প্লেড-অন। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৩৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস সাজানো ৫ ছক্কা ও ৪টি চারে। ভাঙে ৫৬ বলে ৯৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

আগের ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছিলেন সূর্যকুমার যাদব। এবার তিনি মুখোমুখি দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ছক্কায় ওড়ান রশিদকে। স্বাগতিকদের রান ১০০ স্পর্শ করে ৯ ওভার ৪ বলে। সূর্যকুমার পরে টানা তিন বলে চার মারেন ক্রিস জর্ডানকে।

সিরিজে তিনটি অপরাজিত ফিফটি করলেন কোহলি। ছবি: রয়টার্স

সেই জর্ডানের অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে থামে সূর্যকুমারের ১৭ বলে ৩২ রানের ইনিংস। রশিদকে বেরিয়ে এসে খেলা শটে হতে পারতো ছক্কা। লং অন থেকে নিজের ডান দিকে অনেকটা দৌড়ে জর্ডান এক হাতে বল ধরে বাউন্ডারির বাইরে চলে যাওয়ার আগে বল ছুড়ে দেন কাছে দাঁড়ানো জেসন রয়ের দিকে। ভাঙে ২৬ বলে ৪৯ রানের জুটি।

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দুটি করে চার ও ছক্কায় কোহলি ৩৬ বলে স্পর্শ করেন ২৮তম ফিফটি, সিরিজে তার তৃতীয়। হার্দিক পান্ডিয়া তোলেন ঝড়। উডকে বাউন্ডারি মারেন টানা দুই বলে। পরপর দুই বলে ছক্কায় ওড়ান জর্ডানকে।

দুজনের ব্যাটে শেষ পাঁচ ওভারে ভারত তোলে ৬৭ রান। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটির রান ৪০ বলে ৮০। ৫২ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৮০ রান করেন কোহলি। ১৭ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন পান্ডিয়া।

সিরিজে পাঁচ ইনিংসে কোহলির মোট রান ২৩১, পূর্ণ সদস্য দলগুলোর দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। গত বছর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে পাঁচ ইনিংসে ২২৪ রান করেছিলেন লোকেশ রাহুল।

পঞ্চাশের বেশি রান খরচ করেন ইংল্যান্ডের দুই বোলার-জর্ডান ৫৭ ও উড ৫৩ রানে ছিলেন উইকেটশূন্য। সিরিজে পাঁচ ইনিংসে জর্ডান দেন মোট ১৯৮ রান, দ্বিপক্ষীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে কোনো বোলারের সর্বোচ্চ।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ড রয়কে হারায় ভুবনেশ্বরের করা ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই। বাটলার ও মালান এরপর এগিয়ে নেন দলকে। পাওয়ার প্লেতে সফরকারীদের রান ছিল ১ উইকেটে ৬২।

মালান আগের তিন ম্যাচে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। এবার তিনি ফিফটি তুলে নেন ৩৩ বলে। বাটলার তোলেন ঝড়। জুটির রান তিন অঙ্ক স্পর্শ করে ৫৪ বলে। ১২ ওভারে ইংল্যান্ডের রান ছিল ১ উইকেটে ১২৭।

যথেষ্ট হয়নি দাভিদ মালানের লড়াই। ছবি: রয়টার্স

বাটলার ৩০ বলে ফিফটির পর আর টেকেননি। বোলিংয়ে ফিরে তাকে বিদায় করে ১৩০ রানের বড় জুটি ভাঙেন ভুবনেশ্বর। ৩৪ বলে ৪ ছক্কা ও ২টি চারে কিপার-ব্যাটসম্যান করেন ৫২ রান।

ওই ওভারেই টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম এক হাজার রানের রেকর্ড গড়েন মালান। ২৪ ইনিংসে হাজার ছুঁয়ে তিনি ভেঙে দেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের রেকর্ড (২৬ ইনিংস)।

বাটলারের বিদায়ের পরই মূলত পথ হারায় ইংল্যান্ড। ১ উইকেটে ১৩০ থেকে দ্রুতই তাদের স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১৪২।

শার্দুল ঠাকুর একই ওভারে ফিরিয়ে দেন জনি বেয়ারস্টো ও মালানকে। বোল্ড হয়ে ফেরা মালান ৪৬ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৬৮ রান। বেয়ারস্টোর মতো দুই অঙ্কে যেতে পারেননি অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান।

স্টোকস থামেন ২ চার মেরেই। ইংল্যান্ডও যেতে পারেনি লক্ষ্যের ধারেকাছে। শেষ ওভারে জর্ডানের একটি ও কারানের দুটি ছক্কা হারের ব্যবধানই কমাতে পারে শুধু। সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতে ভারত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ২২৪/২ (রোহিত ৬৪, কোহলি ৮০*, সূর্যকুমার ৩২, পান্ডিয়া ৩৯*; রশিদ ৪-০-৩১-১, আর্চার ৪-০-৪৩-০, উড ৪-০-৫৩-০, জর্ডান ৪-০-৫৭-০, স্যাম কারান ১-০-১১-০, স্টোকস ৩-০-২৬-১)

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৮৮/৮ (রয় ০, বাটলার ৫২, মালান ৬৮, বেয়ারস্টো ৭, মর্গ্যান ১, স্টোকস ১৪, জর্ডান ১১, আর্চার ১, স্যাম কারান ১৪*, রশিদ ০*; ভুবনেশ্বর ৪-০-১৫-১, পান্ডিয়া ৪-০-৩৪-১, সুন্দর ১-০-১৩-০, শার্দুল ৪-০-৪৫-৩, নাটরাজন ৪-০-৩৯-১, চাহার ৩-০-৩৩-০)

ফল: ভারত ৩৬ রানে জয়ী

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ভারত ৩-২ ব্যবধানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ভুবনেশ্বর কুমার

ম্যান অব দা সিরিজ: বিরাট কোহলি।