কোহলিকে ছাপিয়ে নায়ক বাটলার

দলের ভীষণ প্রয়োজনের সময় হাল ধরলেন বিরাট কোহলি। ব্যাটিং মাস্টারক্লাস মেলে ধরে ভারতকে এনে দিলেন দেড়শ ছাড়ানো পুঁজি। কিন্তু অধিনায়কের লড়াই যথেষ্ট হলো না। জস বাটলারের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে সহজেই জিতল ইংল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2021, 06:02 PM
Updated : 16 March 2021, 06:56 PM

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের জয় ৮ উইকেটে। ১৫৭ রানের লক্ষ্য ইংলিশরা পেরিয়ে যায় ১০ বল বাকি থাকতেই।

বাজে শুরুর পর নড়বড়ে ভারতকে দারুণ দক্ষতায় এগিয়ে নেন কোহলি। টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে ভারতীয় অধিনায়ক করেন ৪৬ বলে অপরাজিত ৭৭। ভারতের আর কেউ ছাড়াতে পারেননি ২৫। ৫২ বলে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক বাটলার।   

পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ড এখন এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে স্টেডিয়ামে দর্শক থাকলেও এদিন গ্যালারি ছিল ফাঁকা। শেষ দুই ম্যাচেও থাকবে একই চিত্র।

নিজের শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক মর্গ্যান। স্বাগতিকদের শুরুটা হয় বাজে, পাওয়ার প্লের মধ্যেই হারায় টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে।  

দারুণ ইনিংস খেললেও কোহলির এই হাসি থাকেনি ম্যাচ শেষে। ছবি: বিসিসিআই

ইংল্যান্ড বোলিং শুরু করে লেগ স্পিনার আদিল রশিদকে দিয়ে। তৃতীয় ওভারে সাফল্য আসে একাদশে ফেরা মার্ক উডের হাত ধরে। এই ফাস্ট বোলারের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন লোকেশ রাহুল। পর পর দুই ম্যাচে তিনি রানশূন্য, প্রথম ম্যাচে করেন ১ রান।

প্রথম দুই ম্যাচে বিশ্রামে থাকা রোহিত শর্মা ফেরেন এ দিন সূর্যকুমার যাদবের জায়গায়। অভিষেকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পেয়েই বাদ পড়েন সূর্যকুমার। ৪ রানে জফ্রা আর্চারের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেও বেশিক্ষণ টেকেননি রোহিত (১৭ বলে ১৫)।

আগের ম্যাচে ঝড়ো ফিফটিতে অভিষেক রাঙানো ইশান কিষাণ এবার দেখেন মুদ্রার উল্টো পিঠও (৯ বলে ৪)।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ভারতের রান ছিল ৩ উইকেটে ২৪।

সেই ধাক্কা কিছুটা সামাল দেন কোহলি ও রিশাভ পান্ত। দুজনের ব্যাটে বাড়ছিল রান। তবে দারুণ তিনটি চার মারলেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি পান্ত। তরুণ কিপার ব্যাটসম্যান তৃতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হয়ে ফেরেন ২০ বলে ২৫ রান করে। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি শ্রেয়াস আইয়ার।

তবে কোহলি এ দিন ছিলেন নিজের ব্যাটসম্যানশিপের চূড়ায়। দ্বিতীয় বলে কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরুর পর খেলেন অসাধারণ সব শট। আর্চারকে ছক্কায় ওড়ান ফ্লিক করে, পুল করে জর্ডানকে। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৭ বলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টানা দুই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর টানা দুই ম্যাচে তিনি করলেন ফিফটি।

নিজের প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া উড কোটার শেষ ওভারে হজম করেন ১৭ রান। তার ১৪৭ ও ১৫০ কিলোমিটার দুটি বলে পরপর দুটি চোখধাঁধানো ছক্কা মারেন কোহলি।

অধিনায়ককে তখন সঙ্গ দেন হার্দিক পান্ডিয়া। জুটির পঞ্চাশ স্পর্শ করে মাত্র ২৩ বলে।

শেষ দুই ওভারে পান্ডিয়াও মারেন দুটি ছক্কা। শেষ বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ১৭ রান। ৪৬ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি।

জস বাটলার ও জনি বেয়ারস্টোর জুটি শেষ করে দেয় ম্যাচ। ছবি: বিসিসিআই

শেষ পাঁচ ওভারে ভারত তোলে ৬৯ রান। যেখানে কোহলির রান ১৭ বলে ৪৯।

রান তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুরুটা হয় ধীরলয়ে। জেসন রয় ও বাটলার প্রথম তিন ওভারে তুলতে পারেন ১৬ রান।

চতুর্থ ওভারে আক্রমণে আসা লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেলকে পেয়ে বসেন বাটলার। প্রথম বলেই ছক্কা! তৃতীয় বলে যদিও জেসন রয়ের উইকেট পেয়ে যান এই লেগ স্পিনার, কিন্তু পঞ্চম বল আবার ছক্কায় ওড়ান বাটলার।

এরপর আর বাটলারকে থামানো যায়নি। ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় একাদশ ফিফটি স্পর্শ করেন ২৬ বলে। দাভিদ মালানের সঙ্গে তার জুটির রান পঞ্চাশ স্পর্শ করে ৩৩ বলে। মালান ফেরেন থিতু হয়ে (১৭ বলে ১৮)।

জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৭৭ রানের জুটিতে বাকিটা সহজেই সারেন বাটলার। শার্দুলকে পরপর দুই চারে ম্যাচের ইতি টানা বেয়ারস্টো অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ৪০ রান করে। বাটলারের ৫২ বলে ৮৩ রানের ইনিংস সাজানো ৫ চার ও ৪ ছক্কায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৫৬/৬ (রোহিত ১৫, রাহুল ০, কিষান ৪, কোহলি ৭৭*, পান্ত ২৫, শ্রেয়াস ৯, পান্ডিয়া ১৭; রশিদ ৪-০-২৬-০, আর্চার ৪-০-৩২-০, উড ৪-০-৩১-৩, জর্ডান ৪-১-৩৫-২, স্টোকস ২-০-১২-০, স্যাম কারান ২-০-১৪-০)

ইংল্যান্ড: ১৮.২ ওভারে ১৫৮/২ (রয় ৯, বাটলার ৮৩*, মালান ১৮, বেয়ারস্টো ৪০* ; ভুবনেশ্বর ৪-০-২৭-০, শার্দুল ৩.২-০-৩৬-০, চেহেল ৪-০-৪১-১, পান্ডিয়া ৩-০-২২-০, সুন্দর ৪-০-২৬-১)

ফল: ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে তিন ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: জস বাটলার।