শেষ দিকে নুয়ান প্রদিপের দুই ওভারে চার বাউন্ডারি আর ক্যামিও ইনিংসে ক্যারিবিয়ান ড্রেসিং রুমে স্বস্তি এনে দিলেন নিকোলাস পুরান। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিশ্চিত করল সিরিজ জয়।
অ্যান্টিগায় শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দানুশকা গুনাথিলাকার ৯৬, দিনেশ চান্দিমালের ফিফটি ও ভানিদু হাসারাঙ্গার ঝড়ো ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে তোলে ২৭৩ রান।
ক্যারিবিয়ানদের রান তাড়ায় লুইস ও হোপের উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ১৯২ রান। এরপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পুরানের সৌজন্যে জয় ধরা দেয় ২ বল বাকি থাকতে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে এই প্রথম ২৩৫ রানের বেশি তাড়া করে জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারের আগে লঙ্কানদের বিপক্ষে তাদের সবশেষ সিরিজ জয় ছিল সেই ২০০৮ সালে।
শেষ ৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন পড়ে ৩১ রানের। সম্ভাবনায় এগিয়ে তখন শ্রীলঙ্কাই। কিন্তু ডেথ ওভারে লেংথ হারিয়ে বসেন নুয়ান প্রদিপ। তার লেগ স্টাম্পে থাকা বল ছক্কায় ওড়ান ফ্যাবিয়ান অ্যালেন। পরের বলে আরেকটি লেগ স্টাম্প ডেলিভারিতেই উইকেট উপহার দেন অ্যালেন।
কিন্তু ওই ওভারেই দুটি বাউন্ডারিতে সমীকরণ নাগালে নিয়ে আসেন পুরান। ওভার থেকে আসে ১৮ রান। ৪৯তম ওভারে দুশমন্থ চামিরা দেন মাত্র ৪ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন তখন ৯।
আবারও প্রদিপকে পেয়ে বসেন পুরান। প্রথম বলে রান না পেলেও পরের দুই বলেই বাউন্ডারি! চতুর্থ বলে সিঙ্গেলে ম্যাচের সমাপ্তি।
দুজনের কেউই খুব বেশি ঝুঁকি নেননি। তবে বাজে বলকে সাজা দিতে ভুল করেননি। সঙ্গে রানিং বিটুইন দা উইকেট ছিল দারুণ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তাই দুজনের জুটি ছাড়িয়ে যায় শতরান। আগের ম্যাচে ১৪৩ রানে থামলেও এবার জুটি এগিয়ে যায় দুইশর কাছে।
জুটির শতরান হয় ১০৭ বলে। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম টানা দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ।
লুইস ফিফটি স্পর্শ করেন ৫২ বলে, ৬৪ বলে হোপ।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হোপ এই নিয়ে টানা ৫ ইনিংসে ছাড়িয়ে গেলেন পঞ্চাশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একই স্বাদ পেলেন টানা ৫ ইনিংসে।
বরাবরের মতো অনেক ডট বল খেললেও চার-ছক্কায় পুষিয়ে দেন লুইস। ৮ চার ও ৪ ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১৬ বলে। ওয়ানডেতে তার এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি।
লুইসের বিদায়েই ভাঙে ১৯২ রানের জুটি। ১০৩ রান করে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান স্টাম্পড হন চায়নাম্যান লাকশান সান্দাক্যানের বলে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা উদ্বোধনী জুটি এটিই।
সঙ্গীকে হারিয়ে পরের ওভারেই বিদায় নেন হোপ। থিসারা পেরেরাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি ফেরেন ১০৮ বলে ৮৪ রান করে।
এরপরই ক্যারিবিয়ানদের উল্টো হাঁটার শুরু। অভিজ্ঞ ড্যারেন ব্রাভো ফেরেন অল্পতে। একটি করে চার-ছক্কা মেরেই বিদায় নেন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। ৭ বলে ১৫ রানের ইনিংসে রান-বলের ব্যবধান কিছুটা কমান অ্যালেন, তবে তিনিও পারেননি শেষ করে ফিরতে।
শেষের মতো ম্যাচের শুরুটাও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালো। নতুন বলে আলজারি জোসেফ ফিরিয়ে দেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ও তরুণ পাথুম নিসানকাকে।
আরেক প্রান্তে পাল্টা আক্রমণে রান বাড়াতে থাকেন গুনাথিলাকা। জেসন হোল্ডারের পরপর দুই ওভারে চার-ছক্কা মারেন ফর্মে থাকা এই ওপেনার। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন নবম ওভারে আক্রমণে এসে ফিরিয়ে দেন ওশাদা ফার্নান্দোকে। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৩ উইকেটে ৫০।
চতুর্থ উইকেটে গুনাথিলাকা ও চান্দিমাল দলকে উদ্ধার করেন ১০০ রানের জুটিতে। গুনাথিলাকার তৃতীয় সেঞ্চুরি যখন ছিল স্রেফ একটি শটের ব্যাপার, জেসন মোহাম্মেদের জোরের ওপর করা বলে তিনি হয়ে যান বোল্ড। তার ৯৬ বলে ৯৬ রানের ইনিংসে চার ১০টি, ছক্কা ৩টি।
চান্দিমাল এক প্রান্ত আটকে রাখলেও আশেন বান্দারা, থিসারা পেরেরা পারেননি রানের গতি বাড়াতে। জেসনের অফ স্পিনে চান্দিমালও কাটা পড়েন ৯৮ বলে ৭১ করে। লঙ্কানরা তখন আড়াইশর নিচে আটকে পড়ার শঙ্কায়।
সেখান থেকে দারুণ ব্যাটিংয়ে রান বাড়ান ভাদিনু হাসারাঙ্গা। ৪ ছক্কায় ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। তার সৌজন্যে শেষ ৫ ওভারে ৫১ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।
তবে বল এ দিন উইকেট নিতে পারেননি লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গা। ম্যাচ শেষ দিকে ম্যাচ জমে উঠলেও জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা : ৫০ ওভারে ২৭৩/৮ (গুনাথিলাকা ৯৬, করুনারত্নে ১, নিসানকা ১০, ফার্নান্দো ২, চান্দিমাল ৫১, বান্দারা ১৮, থিসারা ১৯, হাসারাঙ্গা ৪৭, সান্দাক্যান ২*, চামিরা ১*; জোসেফ ১০-১-৪২-২, হোল্ডার ৯-০-৬৬-১, আকিল ৪-০-২০-১, শেফার্ড ৩-০-৩৭-০, অ্যালেন ১০-০-৪৩-০, পোলার্ড ৪-০-১৭-০, জেসন ১০-০-৪৭-৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৯.৪ ওভারে ২৭৪/৫ (লুইস ১০৩, হোপ ৮৪, পুরান ৩৫*, ব্রাভো ১০, পোলার্ড ১৫, অ্যালেন ১৫, হোল্ডার ২*; প্রদিপ ৯.৪-০-৬৬-২, চামিরা ১০-০-৫৬-০, থিসারা ৭-০-৪৫-২, গুনাথিলাকা ৩-০-১৭-০, হাসারাঙ্গা ১০-০-৪৮-০, সান্দাক্যান ১০-১-৩৬-১)।
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : এভিন লুইস।