২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে দ্বিতীয় ওয়ানডে দিয়ে রশিদের অভিষেক। প্রথম ওয়ানডেতে আফগানিস্তান হেরে গিয়েছিল বাজেভাবে। ১৭ বছর বয়সী রশিদ অভিষেক ওয়ানডেতেই দেখান নিজের ঝলক। ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে শিকার করেন আরও দুটি করে উইকেট।
এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সময়ের পরিক্রমায় তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ক্রিকেটারদের একজন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বড় তারকা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের চলতি সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের আগে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রশিদ ফিরে গেলেন তার শুরুর সময়টায়। কীভাবে দলে তার সুযোগ হয়েছিল, শোনা যাক তার জবানিতেই।
“ আমার প্রথম দলে সুযোগ পাওয়ার সময়ের একটি গল্প আছে। আমি ওয়ানডেতে সুযোগ পাইনি, শুধু টি-টোয়েন্টিতে ছিলাম। ওয়ানডে দল চলে গিয়েছিল জিম্বাবুয়েতে। আমি কাবুলে অনুশীলন করছিলাম। ইনজি ভাই তখন বলেছিলেন, ‘পুরো আফগানিস্তানে কি একজন লেগ স্পিনার নেই? একজন তো অন্তত থাকা উচিত!’ তখন আমি জানি না, কে একজন বলেছিলেন, ‘একজন আছে, তবে কেবল টি-টোয়েন্টিতে। কারণ সে অনেক জোরে বল করে। ওয়ানডের উপযোগী নয়।’ তখন ইনজি ভাই বললেন, ‘ঠিক আছে, ওকে ডাকো। ভালো হলে ওয়ানডে খেলবে। নইলে শুধু টি-টোয়েন্টিই।’
“রাতে আমি কল পেলাম। খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম যে ওয়ানডেও খেলতে পারব। এত কম বয়সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারা ছিল স্বপ্নের মতো। পরদিন আমি গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিলাম। আমি যাওয়ার পর দিন আমাদের খেলা ছিল (ওয়ানডে)। আমার ধারণা ছিল, এই ম্যাচেই আমি খেলব। ইনজি ভাই বললেন, ‘কালকের ম্যাচে তুমি নেই। আগে তোমাকে দেখব, তার পর সিদ্ধান্ত নেব।’ আমি মনে মনে ভাবলাম, ‘ঠিক আছে, আরেকটি ট্রায়াল তাহলে বাকি আছে।”
“ ম্যাচটি আমরা হেরে গেলাম। পরের দিন অনুশীলনে ইনজি ভাই নিজেই প্যাড পরে বললেন, ‘তিনি নিজেই আমার বল খেলে পরখ করতে চান।’ আপনারা তো জানেন, কাট শটে তিনি কতটা দক্ষ। আমার প্রথম দুই বলেই কাট শট খেললেন। তখন আমার মনে হলে, একই জায়গায় বল ফেলে ‘রং আন’ করি। উইকেট অনেক টার্নিং ছিল। রং আন করলাম। তিনি আউট হননি, তবে পরাস্ত হন, বল লাগে তার প্যাডে। এরপরই তিনি নেট থেকে বের হয়ে আমার কাছে এসে বললেন, ‘কালকের ম্যাচের জন্য প্রস্তুত থাকো। তুমি এখন দলের অংশ।”
“ ওই সময়টায় যে সমর্থন পেয়েছি, দল থেকে আর বাদই পড়িনি। দলে ঢুকেই মূল স্পিনার হয়ে ওঠায় যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম, তাতেই আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে মনোযোগ ধরে রাখতে হবে এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।”
“ পরে আরেকটি গল্প আমি আরেকজনের কাছ থেকে শুনেছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে একটি সিরিজের দল নির্বাচন যখন চলছিল, নির্বাচক কমিটি তাকে একটি দল দেয়। তিনি তখন বলেন, ‘যাকে ইচ্ছা দলে নাও, কিন্তু রশিদের নাম সবার আগে রাখো।’ একজন ক্রিকেটারের এটাই প্রয়োজন। কোচ যখন তার ওপর এতটা আস্থা রাখেন, তিনি যখন বিশ্বাস করেন যে এই ছেলেটার ভেতর কিছু আছে, কিছু করে দেখাতে পারে, ওই ক্রিকেটার তখন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। শুরুতে অমন আস্থা পেয়েই আমার ভেতরে বিশ্বাস জন্মেছিল যে আমি পারব।”