চা-বিরতির পর ৫৬ মিনিট টেকে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এই সময়ে ২৪ রান যোগ করতেই স্বাগতিকরা হারায় শেষ ৪ উইকেট। ৭৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে মুমিনুল হকের দলকে ২৯৬ রানে থামিয়ে দেন অফ স্পিনার কর্নওয়াল।
লিটন ৭১, মিরাজ ৫৭ ও মুশফিকুর রহিম ৫৪ রান করেন।
তৃতীয় দিনেও উইকেটে নেই বোলারদের জন্য তেমন কোনো সহায়তা। নিজেদের ব্যর্থতাতেই আউট স্বাগতিকদের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান।
অথচ দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দারুণ আশা জাগানিয়া। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ ও লেগ গালি রেখে শর্ট বল করার কৌশল নিয়ে শুরু করেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। তা কাজে লাগেনি। উল্টো তিনি ‘নো’ বল করেন তিনটি। ফুল লেংথে বল পেলেই ড্রাইভ করছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। আরেক পাশে বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানও সুবিধা করতে পারেননি। রান বাড়তে থাকে অনায়াসে।
আগের দিন শেষ বিকেলে চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ে ৬১ বলে ৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মিঠুন। নতুন দিনেও তার ব্যাটিংয়ে ছিল প্রতিজ্ঞার ছাপ। কিন্তু এক মুহূর্তের অমনোযোগীতায় শেষ হয় তার প্রচেষ্টা। ৮৬ বলে ১৫ করে বিদায় নেন কর্নওয়ালের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে।
পঞ্চম উইকেটে মুশফিক-মিঠুনের জুটি ছিল ১৮১ বলে ৭১ রানের।
২৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা মুশফিক ফিফটি স্পর্শ করেন ৮৯ বলে। এক মুহূর্তের জন্যও অস্বস্তিতে পড়তে দেখা যায়নি তাকে। কিন্তু হঠাৎই চেপে বসে রোমাঞ্চের ভূত। কর্নওয়ালের নিরীহ এক বলে রিভার্স সুইপ করতে যান। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় কাভারে। ১০৫ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটি গড়া যেমন সাবলীলতায়, শেষ হওয়ার ধরন তেমনি ভুলিয়ে দিল যেন সবকিছু।
লিটন ও মিরাজ এরপর আর বিপদ হতে দেননি লাঞ্চের আগে। তাদের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি সিরিজে নিজেদের প্রথম উইকেটশূন্য সেশনে ২৭ ওভারে ৯১ রান তোলে স্বাগতিকরা।
প্রথম ঘণ্টার পরপরই মুশফিক উইকেট বিলিয়ে এলে জুটি গড়েছিলেন লিটন-মিরাজ। তখনও দল ছিল ফলো অনের শঙ্কায়। শুরু থেকেই আস্থার সঙ্গে খেলা দুই ব্যাটসম্যান ক্যারিবিয়ানদের আবার ব্যাটিংয়ে নামা নিশ্চিত করেন। আশা জাগান ব্যবধান একশ রানের নিচে নিয়ে আসার।
৭৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন রাকিম কর্নওয়াল
একটা সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডিং ছিল অনেকটাই রক্ষণাত্মক। সেই সুবিধা ভালো মতোই কাজে লাগান দুই তরুণ ব্যাটসম্যান। চা-বিরতির আগে ভালোভাবেই সামাল দেন দ্বিতীয় নতুন বল।
তৃতীয় সেশনে আর পারেননি। কর্নওয়ালের সাদামাটা এক ডেলিভারিতে ভাঙে মিরাজ-লিটনের ১২৬ রানের জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন লিটন, বুঝে ফেলে আগেই স্লিপ থেকে লেগ স্লিপের দিকে দৌড় দেন জার্মেইন ব্ল্যাকউড। ব্যাটসম্যানের ব্যাটের নিচের কানা ছুঁয়ে আসা ক্যাচ সহজেই জমান মুঠোয়।
৭ চারে ১৩৩ বলে ৭১ রান করেন লিটন। এই রান করার পথে টেস্টে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
নাঈম হাসান টেকেন কেবল তিন বল। দ্বিতীয় বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়ার পরের বলে স্লিপে ধরা পড়েন এই তরুণ। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট পান কর্নওয়াল।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ পা দেন গ্যাব্রিয়েলের ফাঁদে। একের পর এক বাউন্সার দিয়ে হুট করে স্টাম্পে রাখেন একটি ফুল লেংথ বল। সেটিই কাভারে তুলে দেন মিরাজ। ৬ চারে ১৪০ বলে করেন ৫৭।
দুবার জীবন পাওয়া তাইজুল অপরাজিত থাকেন ১৩ রানে। আলজারি জোসেফের বলে আবু জায়েদ গালিতে ক্যাচ দিলে ২৯৬ রানে থামে বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তারা একই ইনিংসে ১০ উইকেট হারাল ক্যাচ দিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৪০৯
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১০৫/৪) ৯৬.৫ ওভারে ২৯৬ (মুশফিক ৫৪, মিঠুন ১৫, লিটন ৭১, মিরাজ ৫৭, নাঈম ০, তাইজুল ১৩*, আবু জায়েদ ১; গ্যাব্রিয়েল ২১-৩-৭০-৩, কর্নওয়াল ৩২-৮-৭৪-৫, জোসেফ ১৭.৫-৩-৬০-২, মেয়ার্স ৮-২-১৫-০, ওয়ারিক্যান ১৩-২-৪৮-০, বনার ৩-০-১৭-০, ব্র্যাথওয়েট ২-০-৭-০)।