প্রস্তুতি আর প্রতিজ্ঞায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়

মহামারীকালেও টেস্ট খেলার মাঝে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবুও এই সংস্করণের প্রস্তুতির জন্য তাদের ছিল বাড়তি মনোযোগ। ছিল গতবার হোয়াইটওয়াশড হওয়ার বদলা নেওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। শুরু থেকেই ক্যারিবিয়ানরা বলে আসছিল, বাংলাদেশে জিততে হলে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন। স্বাগতিকদের হতাশায় ডুবিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে অবিশ্বাস্য জয়ের পর দলটির অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট বললেন, আগে থেকে ঠিক করা সেই মন্ত্রেই সাফল্য পেয়েছে তার দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2021, 02:31 AM
Updated : 8 Feb 2021, 02:31 AM

গত ১০ জানুয়ারি ওয়ানডে দলের সঙ্গেই বাংলাদেশে আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দল। বাধ্যতামূলক তিন দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে শুরু হয় ব্র্যাথওয়েট, গ্যাব্রিয়েলদের প্রস্তুতি। ওয়ানডে ও টেস্ট দলের প্রস্তুতির চিত্র থেকেও বোঝা যাচ্ছিল, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সফরকারীরা।

গতবার বাংলাদেশ সফরে দুই টেস্টেই তিন দিনের মধ্যে হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকদের চার স্পিনারকে সামলানোর পথ পায়নি তারা। এবার তাই শুরু থেকেই স্পিন সামলানোর দিকে ছিল তাদের মনোযোগ।

টেস্টে কী ধরনের পরিস্থিতির সামনে পড়তে হতে পারে, এর একটা ধারণা ছিল ক্যারিবিয়ানদের। প্রস্তুতিও নিয়েছে সেভাবে। ম্যাচ পরিস্থিতি দিয়ে ব্যাটসম্যান, বোলারদের আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন কোচ ফিল সিমন্স।

বোলারদের জন্য কাজ ছিল, সহজ সিঙ্গেলের পথ বন্ধ করা। বাজে বলের সংখ্যা কমিয়ে আনা। আর ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল আঁটসাঁট বোলিংয়ে ধৈর্য না হারিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খেলে যাওয়া। এক-দুই নেওয়ার পথ খুঁজে বের করা।

ক্যারিবিয়ানরা এই প্রস্তুতি যখন নেওয়া শুরু করে তখনও বাংলাদেশ বুঁদ হয়েছিল ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে। সেখানে সহজে জিতেছেও স্বাগতিকরা। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে পেয়েছে পুরো ৩০ পয়েন্ট।  

তৃতীয় ওয়ানডের পর বাংলাদেশ শুরু করে প্রস্তুতি। প্রায় এক বছর বড় দৈর্ঘ্যের কোনো ম্যাচ না খেলে দলটি নেমে যায় টেস্ট খেলতে। অন্যদিকে, ক্যারিবিয়ানরা তিন দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচে ঝালিয়ে নেয় নিজেদের। সেখানে আনকোরা স্পিনের বিপক্ষে ভুগলেও নিজেদের পরিকল্পনা ঠিকই সাজিয়ে নেয় তারা।

চট্টগ্রাম টেস্টে অবিশ্বাস্য এক জয়ের পর সঠিক পরিকল্পনা আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারাকে কৃতিত্ব দিলেন অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট।

“প্রধান কোচ, সহকারী কোচ ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে প্রচুর কথা বলেছি। আমাদের আলাদা আলাদা পরিকল্পনা ছিল। বোলারদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তারা এই পরিকল্পনার প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।”

“ম্যাচের আগে বিভিন্ন পরিকল্পনা করাই হয়। তবে মাঠে সেটা বাস্তবায়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বোলিংয়ে সুশৃঙ্খল ছিলাম। জানতাম যদি বোলিংয়ে শৃঙ্খলা না হারাই, চাপের জন্য উইকেট আসবেই।”

প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ নাগালের বাইরে যেতে দেয়নি ক্যারিবিয়ানরা। অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরিতে সফরকারীদের জয়ের নায়ক কাইল মেয়ার্স জানান, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা আশাবাদী করে তোলে তাদের।

“ড্রেসিং রুম সবসময় ইতিবাচক ছিল। ফ্ল্যাট উইকেটে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের উজ্জ্বীবিত বোলিংয়ে সেটা আরও বাড়ে। তৃতীয় দিন শেষ বেলায় ওদের ৩ উইকেট নিয়ে ড্রেসিং রুমে যাওয়ার পর কোচ ও অধিনায়ক জানান, ম্যাচ এখন উন্মুক্ত। আমাদের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।”

“ভালো করার আত্মবিশ্বাস, আমাদের সব সময়ই ছিল। জানতাম, যদি পরিকল্পনায় অটল থাকতে পারি আমরা জিতব।”

প্রায় চারশ রান তাড়া করা সহজ নয়। স্পিনারদের জন্য উইকেটে ছিল যথেষ্ট সহায়তা। বল কখনও বাড়তি বাউন্স করেছে, কখন নেমেছে। তীক্ষ্ণ বাঁকও নিয়েছে কয়েকবার। এর মধ্যেও এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অপরাজিত ২১০ রানের ইনিংস খেলেছেন মেয়ার্স।

ব্র্যাথওয়েট জানান, পিচ দেখার পর কীভাবে খেলতে হবে বলে দিয়েছিলেন সতীর্থদের।

“এদের সঙ্গে বয়সভিত্তিক দল থেকে অনেক ক্রিকেট খেলেছি। আমাদের কী সামর্থ্য আছে সেটা আমি জানি। জানতাম, একবার আত্মবিশ্বাস পেলে, ওরা যা করতে চায় সেটা ভালোভাবেই করতে পারবে।”

“ব্যাটিং ছিল আমার পরিকল্পনা। ওদের বলেছিলাম, মাঠে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে। সত্যি বলতে, খেলা যত এগিয়েছে, আমার পরিকল্পনা খুব একটা পাল্টায়নি। অবশ্যই পিচ পর্যবেক্ষণ করেছিলাম। ম্যাচ জুড়েই পিচ ছিল ভালো।”

চট্টগ্রামে জিতে ব্র্যাথওয়েটদের নজর এখন ঢাকায়।