দৃষ্টিকটূ সব আউটে বাংলাদেশের আক্ষেপের দিন

টস জয়, আগে ব্যাটিং, স্বস্তিময় শুরু। প্রায় ১ বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে আর কী চাই! রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বাংলাদেশের শুরুটা হলো ঝলমলে। হাতছানি দারুণ একটি দিনের। কিন্তু তা মিলিয়ে গেল নিজেদের দায়ে। সময় যত গড়াল, হারাতে থাকল ব্যাটিংয়ের আলো। কিছু বাজে শট আর রিভিউ না নেওয়ার বিস্ময়কর কাণ্ড মিলিয়ে সম্ভাবনাময় দিনটি শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল ম্লান।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2021, 11:41 AM
Updated : 3 Feb 2021, 03:33 PM

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ২৪২।

স্কোরকার্ডে হয়তো খুব হতাশার কথা বলছে না, তবে দিনটি ভালো হতে পারত আরও অনেক। দলের স্কোরে পুরোপুরি ফুটে উঠছে না দিনের চিত্র। সেটি খানিকটা ফুটিয়ে তুলতে পারে ব্যক্তিগত স্কোরগুলি। আউট হওয়া ৫ ব্যাটসম্যানের ৪ জনই ছুঁয়েছেন ২৫, কিন্তু ফিফটি করেছেন কেবল একজন। সেই একজন, সাদমান ইসলাম ফিরে গেছেন ৫৯ রানে।

ব্যক্তিগত স্কোরগুলিতে যদি মিশে থাকে আক্ষেপ, ইনিংসগুলো শেষ হওয়ার ধরনে থাকছে চরম হতাশা। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের বিদায় আলগা শটে, ভীষণ বাজে শটে অধিনায়ক মুমিনুল হক। দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত আউট দৃষ্টিকটু রান আউটে। সাদমানের আউটের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।

উইকেট প্রথম দিনে ছিল ব্যাটিং সহায়ক। কিছুটা টার্ন মিলেছে বটে। তবে বাউন্স ছিল বেশ সমান, বল ব্যাটে এসেছে ভালোভাবেই। এখানে আগে ব্যাটিংয়ের ফায়দা পুরোপুরি নিতে পারেনি বাংলাদেশ।

বিপদ বাড়তে পারত আরও, যদি লিটন দাসের ২ রানে রাকিম কর্নওয়ালের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ না পড়ত। লিটন দিনশেষে অপরাজিত ৩৪ রানে, সঙ্গে ৩৯ রানে সাকিব আল হাসান। শেষ স্বীকৃত দুই ব্যাটসম্যানের ৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে খানিকটা স্বস্তিতে অন্তত দিনটি শেষ করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

৩ উইকেট নিয়ে প্রথম দিনে ক্যারিবিয়ানদের সফলতম বোলার বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান। অফ স্পিনার কর্নওয়াল উইকেট না পেলেও খারাপ বল করেননি।

প্রথম দিনে ৩ উইকেট শিকারি জোমেল ওয়ারিক্যানকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস।

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বুধবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। শুরুটায় ছিল ভালো কিছুর ইঙ্গিত। প্রথম বলেই কেমার রোচের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে সাদমানের বাউন্ডারিতে শুরু হয় ম্যাচ। প্রথম চার ওভারেই দুই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে দুটি করে বাউন্ডারি।

পঞ্চম ওভারেই তামিমকে হারানোর ধাক্কা। রাউন্ড দা উইকেটে করা রোচের ডেলিভারি স্কিড করে অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকে একটু। তামিম পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেন বটে, তবে ব্যাট-প্যাডে ফাঁক রেখে দেন অনেকটা। ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে বল উড়িয়ে দেয় বেলস (৯)।

সাদমান ও শান্ত এরপর এগোতে থাকেন মৃসণ গতিতেই। রোচের বলে দারুণ এক ড্রাইভে চার মেরে শান্তর পথচলা শুরু হয়। পরে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে স্ট্রেট ড্রাইভে চার মারেন আরেকটি, প্রথম সেশনের সেরা শট বলা যায় যেটিকে।

শান্তকে মনে হচ্ছিল খুবই আত্মবিশ্বাসী। সাদমানের সঙ্গে তার জুটিও জমে গিয়েছিল। তখনই দুজনের ভুল বোঝাবুঝি।

কাইল মেয়ার্সের বল লং লেগের দিকে খেলেন সাদমান, প্রথম রান এসে যায় অনায়াসেই। দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় শান্ত ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকলেও ছুটতে থাকেন সাদমান, শান্তকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও তার থামাথামি নেই। শেষ পর্যন্ত শান্তও দৌড় শুরু করেন, কিন্তু ক্রিজের কাছাকাছিও পারেননি যেতে। ২৫ রানেই সমাপ্তি তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের।

মুমিনুল উইকেটে যাওয়ার পরপরই রক্ষা পান দুই দফায়। দুবারই গ্যাব্রিয়েলের বলে অল্পের জন্য ধরা পড়েননি শর্ট লেগে। শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে অবশ্য থিতু হয়ে ওঠেন আস্তে আস্তে। সাদসানের সঙ্গে তার জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। ১৪ মাস পর টেস্ট খেলার ম্যাচে সাদমান স্পর্শ করেন ফিফটি, ১২৮ বলে।

এরপর হুট করেই অস্থির হয়ে ওঠেন মুমিনুল। কয়েকবার খেলেন আলগা শট। শেষ পর্যন্ত ২৬ রানে ওয়ারিক্যানের নিরীহ এক ডেলিভারি তিনি তুলে দেন শর্ট মিডউইকেট ফিল্ডারের হাতে।

সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই সাদমানের বিদায় ১৫৪ বলে ৫৯ রান করে। ওয়ারিক্যানের বাঁহাতি স্পিনে এই বাঁহাতি ওপেনারকে এলবিডব্লিউ দেন অভিষিক্ত আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। অপর প্রান্তে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নেননি সাদমান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল চলে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে দিয়ে। কোভিড পরিস্থিতিতে এখন প্রতি দলের জন্য আছে ৩টি করে অসফল রিভিউ। তার পরও রিভিউ না নেওয়া কারণ বোঝা ভার।

সেই জোড়া ধাক্কা দল অনেকটাই সামলে উঠেছিল মুশফিক ও সাকিবের জুটিতে। বাংলাদেশের সফলতম টেস্ট জুটি দলকে এনে দেন আরও একটি অর্ধশত রানের জুটি।

সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের অবিচ্ছিন্ন জুটির সৌজন্যে শেষটা একটু স্বস্তিতে করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

বেশ নির্বিঘ্নেই যখন খেলছিলেন দুজন, ছন্দপতন আবারও। এবার বিদায় থিতু হয়ে যাওয়া মুশফিকের। ওয়ারিক্যানের বলে আলতো করে ব্যাট পেতে দিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি ৩৮ রান করে।

১৯৩ রানেই তখন নেই ৫ উইকেট। লিটন তখন জীবন না পেলে দলকে কতটা ভুগতে হতো, কে জানে!

বেঁচে গিয়ে লিটন খেলতে থাকেন আগ্রাসী সব শট। ঝুঁকির পথে হাঁটলেও বিপদ হয়নি এ দিন আর। ৬ চারে তার রান ৩৪। আরেক প্রান্তে সাকিব খেলেছেন মোটামুটি নির্ভরতায়। দিনশেষে ৯২ বলে অপরাজিত তিনি ৩৯ রানে।

দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের ইনিংসের এগিয়ে চলা নির্ভর করবে হয়তো এই দুজনের ওপরই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস:  ৯০ ওভারে ২৪২/৫ (সাদমান ৫৯, তামিম ৯, শান্ত ২৫, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ৩৮, সাকিব ৩৯*, লিটন ৩৪*; রোচ ১৬-৫-৪৪-১, গ্যাব্রিয়েল ১৭-৩-৫১-০, কর্নওয়াল ২২-১-৫৬-০, মেয়ার্স ৭-২-১৬-০, ওয়ারিক্যান ২৪-৫-৫৮-৩, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-১৩-০)।