চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে চা-বিরতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১৪০।
ফেরার ম্যাচে ৫৯ রান করে সাদমান বিদায় নেন ব্যাখ্যাতীতভাবে। জোমেল ওয়ারিক্যানের বাঁহাতি স্পিনে এই বাঁহাতি ওপেনারকে এলবিডব্লিউ দেন অভিষিক্ত আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। অপর প্রান্তে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নেননি সাদমান। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল চলে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে দিয়ে। কোভিড পরিস্থিতিতে এখন প্রতি দলের জন্য আছে ৩টি করে সফল রিভিউ। তার পরও রিভিউ না নেওয়ার কারণ বোঝা ভার।
সাদমানের আগে মুমিনুলের বিদায়ও দৃষ্টিকটুভাবে। ১ রানে ২ দফায় অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়ার পর কিছুটা ধীরস্থির হলেও পরে আবার ছটফট করতে থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছুটতে থাকেন ঝুঁকির পথে। শেষ পর্যন্ত ২৬ রানে বিদায় নেন আলগা এক শটে।
এই দুই থিতু ব্যাটসম্যানের আগে সকালের সেশনে বাংলাদেশ হারায় তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। তামিমকে বোল্ড করা কেমার রোচের ডেলিভারিটি ছিল দারুণ, তবে নড়বড়ে শটে দায় ছিল তামিমেরও। দারুণ খেলতে থাকা শান্তর রানআউট ছিল আত্মঘাতী।
সকালে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। লাঞ্চের আগে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো মনে হয়েছে যথেষ্টই। বল ব্যাটে-এসেছে, বাউন্স ছিল সমান।
পঞ্চম ওভারেই তামিমকে হারানোর ধাক্কা। রাউন্ড দা উইকেটে করা রোচের ডেলিভারি স্কিড করে অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকে একটু। তামিম পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করেন বটে, তবে ব্যাট-প্যাডে ফাঁক রেখে দেন অনেকটা। ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে বল উড়িয়ে দেয় বেলস।
৯ রান করে মুশফিকুর রহিমকে ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড আবার নিজের করে নেন তামিম (৪ হাজার ৪১৪)। তবে ওই ৯ রানেই শেষ তার ইনিংস।
সাদমান ও শান্ত এরপর এগোতে থাকেন মৃসণ গতিতেই। রোচের বলে দারুণ এক ড্রাইভে চার মে শান্তর পথচলা শুরু হয়। পরে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে স্ট্রেট ড্রাইভে চার মারেন আরেকটি, প্রথম সেশনের সেরা শট বলা যায় যেটিকে।
ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট প্রথম ঘণ্টায়ই আক্রমণে আনেন রাকিম কর্নওয়ালকে। উইকেট থেকে কিছুটা বাউন্স আদায় করে নেন ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার অফ স্পিনার। কয়েকটি বল টার্নও করে তীক্ষ্ণভাবে। তবে উইকেট পাননি এখনও।
শান্তকে মনে হচ্ছিল খুবই আত্মবিশ্বাসী। সাদমানের সঙ্গে তার জুটিও জমে গিয়েছিল। তখনই দুজনের ভুল বোঝাবুঝি।
কাইল মেয়ার্সের বল লং লেগের দিকে খেলেন সাদমান, প্রথম রান এসে যায় অনায়াসেই। দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় শান্ত ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকলেও ছুটতে থাকেন সাদমান, শান্তকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও তার থামাথামি নেই। শেষ পর্যন্ত শান্তও দৌড় শুরু করেন, কিন্তু ক্রিজের কাছাকাছিও পারেননি যেতে। ২৫ রানেই সমাপ্তি তার সম্ভাবনাময় ইনিংসের।
লাঞ্চের পর মুমিনুল-সাদমানের জুটি এগোচ্ছিল বেশ স্বচ্ছন্দেই। দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টা নিরাপদে পার করেন দুজন। ১৪ মাস পর টেস্ট খেলার ম্যাচে সাদমান পেরিয়ে যান ফিফটি। দুজনের জুটি ছাড়িয়ে যায় পঞ্চাশ।
কিন্তু হুট করেই অস্থির হয়ে ওঠেন মুমিনুল। কয়েকবার খেলেন আলগা শট। শেষ পর্যন্ত ওয়ারিক্যানের নিরীহ এক ডেলিভারি তিনি তুলে দেন শর্ট মিডউইকেট ফিল্ডারের হাতে।
সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই সাদমানের বিদায় ১৫৪ বলে ৫৯ রান করে। বাংলাদেশের ইনিংসও তাই আপাতত অগোছালো।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (চা বিরতি পর্যন্ত):
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৮ ওভারে ১৪০/৪ (সাদমান ৫৯, তামিম ৯, শান্ত ২৫, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ৯*, সাকিব ৩*; রোচ ১১-৪-২২-১, গ্যাব্রিয়েল ১৪-৩-৪০-০, কর্নওয়াল ১৩-১-২৯-০, মেয়ার্স ৭-২-১৬-০, ওয়ারিক্যান ১৩-২-৩১-২)।