আনকোরা স্পিনেই বিপাকে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সকালের স্বস্তি মিলিয়ে দেল দুপুরে। ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো করলেও বিসিবি একাদশের অনভিজ্ঞ ও অনিয়মিত স্পিনারদের বোলিংয়েই নাকাল ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদও নির্বাচকদের জানান দিলেন বার্তা। সব মিলিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে বিপাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2021, 06:14 AM
Updated : 29 Jan 2021, 08:45 AM

চট্টগ্রামে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিন চা বিরতির সময় বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৫৬ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৬।

প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে রান ছিল ১ উইকেটে ৮৯। দ্বিতীয় সেশনে ২৯ ওভারে রান এসেছে ৯৭, ক্যারিবিয়ানরা উইকেটে হারিয়েছে আরও ৫টি।

তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ও টেস্ট দলে জায়গা পাওয়ার আশায় থাকা খালেদ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। দুই অনিয়মিত অফ স্পিনার শাহাদাত হোসেন ও সাইফ হাসানের শিকার ১টি করে উইকেট।

সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে ব্যাটিং অনুশীলন ভালোই করে নিচ্ছেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ইনিংস শুরু করতে নেমে এখনও অপরাজিত ৭২ রানে।

লাঞ্চের একটু আগে ব্র্যাথওয়েটকে ২৫ রানে ফেরানোর একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ফেলে দিন ফিরতি ক্যাচ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আদর্শ প্রস্তুতির সুযোগ না দিতে এই ম্যাচের বিসিবি স্কোয়াডে রাখা হয়নি কোনো বাঁহাতি স্পিনার বা স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার। ম্যাচের উইকেটও দেওয়া হয়নি স্পিন সহায়ক। মাঘ মাসের আবহাওয়ায় এমএ আজিজ স্টেডিয়াম মরা ঘাসে ভরা। সেই বাদামী প্রান্তর থেকে পিচ আলাদা করা কঠিন। মাঝের ওই ২২ গজ যেন মরা ঘাসের বিছানা।

মরা ঘাসের উইকেটে সকালে বেশ প্রাণবন্ত বোলিং করেন খালেদ। উইকেট না পেলেও বেশ আগ্রাসী ছিলেন এই পেসার। প্রথম পানি পানের বিরতি পর্যন্ত এক প্রান্ত থেকে টানা ৭ ওভার বোলিং করেন। বিরতির পরও করেন আরেকটি। তার টানা স্পেল ছিল ৮-২-২২-০।

খালেদের অফ স্টাম্প ঘেষা বাড়তি লাফানো দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শুরু হয় ম্যাচ। বাড়তি বাউন্সেই তিনি কয়েকবার অস্বস্তিতে ফেলেন ব্র্যাথওয়েট-ক্যাম্পবেলকে। ব্র্যাথওয়েটের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে অল্পের জন্য বল স্লিপের হাতে যায়নি দুইবার।

আরেক প্রান্তে তরুণ পেসার মুকিদুল ইসলাম লেগ স্টাম্পের বাইরে দুটি ডেলিভারি দিয়ে শুরু করলেও পরে খারাপ করেননি।

মুকিদুলের বলে দুর্দান্ত এক অন ড্রাইভে চার মেরে শুরুর অস্বস্তি ঝেরে ফেলেন ব্র্যাথওয়েট। খালেদকে স্কয়ার ড্রাইভে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে ক্যাম্পবেল পান প্রথম বাউন্ডারির দেখা।

তৃতীয় পেসার শাহিন আলম আক্রমণে আসার পর আলগা বোলিংয়ে ক্যারিবিয়ানদের রানের গতি বাড়ে আরেকটু। তরুণ এই পেসারকে পরপর দুই ওভারে কাভার ড্রাইভে চার মারেন ক্যাম্পবেল। ছক্কাও মারেন তার বলেই। প্রথম ৩ ওভারে ২২ রান দেওয়ার পর অন্য প্রান্তে আনা হয় শাহিনকে। এরপর একটু নিয়ন্ত্রণ দেখা যায় তার বোলিংয়ে।

সহজাত আগ্রাসী ব্যাটসম্যান ক্যাম্পবেল খেলেন বেশ কিছু আক্রমণাত্মক শট। তাতে রান যেমন বাড়তে থাকে, তার সঙ্গী হয় ঝুঁকি। শেষ পর্যন্ত সেই প্রবণতাই ডেকে আনে তার পতন। শাহাদাতকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি মিড অনে।

৭ চার ও ১ ছক্কায় ক্যাম্পবেলের রান ছিল ৪৪। ভেঙে যায় ৬৭ রানের উদ্বোধনী জুটি।

টেস্ট দলে জায়গা পাওয়ার আশায় থাকা খালেদ দেখিয়েছেন বোলিং ঝলক।

ব্র্যাথওয়েট খেলেছেন তার মতোই ধীরে-সুস্থে। রানের চেয়ে তার মনোযোগ বেশি উইকেটে সময় কাটাতে। বাজে বল কাজে লাগাতেও ভুল করেননি।

কিন্তু অধিনায়কের পথ অনুসরণ করতে পারেননি অন্যরা। রিশাদের টপ স্পিনারের মতো দারুণ একটি ডেলিভারিতে বোল্ড হন বাঁহাতি শেন মোজলি। খালেদের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে বিদায় নেন এনক্রুমা বনার, উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন নুরুল হাসান সোহান।

এই দলের মিডল অর্ডারের বড় ভরসা জার্মেইন ব্ল্যাকউড গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন। কিন্তু সেই পরিক্রমায় এগোতে পারেননি বেশিক্ষণ। রিশাদের একটি শর্ট বল পুল করতে গিয়ে তুলে দেন আকাশে। স্লিপ থেকে শর্ট ফাইন লেগে দৌড়ে সহজ ক্যাচটি নেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।

এরপর খালেদের বাড়তি লাফানো বল কাভেম হজের গ্লাভসে ছোবল দিয়ে যায় গালিতে রিশাদের হাতে। ১ উইকেটে ১১০ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান হয়ে যায় ৫ উইকেটে ১৩১।

ব্র্যাথওয়েটকে এরপর কিছুটা সঙ্গ দেন কিপার জশুয়া দা সিলভা। তবে থিতু হওয়ার পর উইকেট ছুঁড়ে আসেন জশুয়াও (২০)। সাইফকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন লং অনে।

আটে নেমে পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন কাইল মেয়ার্স। ১৪ বলে ২০ রান নিয়ে চা বিরতিতে যান তিনি। অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট তখন অপরাজিত ১৪৪ বলে ৭২ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (চা বিরতি পর্যন্ত):

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫৬ ওভারে ১৮৬/৬ (ব্র্যাথওয়েট ৭২*, ক্যাম্পবেল ৪৪*, মোজলি ১৫, বনার ২, ব্ল্যাকউড ৯, হজ ০, জশুয়া ২০, মেয়ার্স ২০*; খালেদ ১৬-৩-৩৯-২, মুকিদুল ১১-৫-২৮-০, শাহিন ৬-০-২৮-০, শাহাদাত ৫-১-২৯-১, রিশাদ ১২-০-৪৫-২, সাইফ ৬-১-১৫-১)।