হতাশার প্রহর কাটিয়ে স্বপ্নের ঠিকানায় হাসান

ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ক্রিকেটের দুই রূপ দেখা হয়ে গেছে হাসান মাহমুদের। অভিষেক রাঙিয়েছেন তিনি সাফল্যের রঙে। কিন্তু পরের ম্যাচে ছিলেন বিবর্ণ। হাসান অবশ্য তাতে কাতর নন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার আগেই শরীরের চোট ভুগিয়েছে অনেক, সেসব জয় করার পর মনের চোট আর সহজে লাগে না। বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বপ্নময় জগতে বিচরণ উপভোগ করছেন তরুণ এই পেসার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2021, 12:32 PM
Updated : 24 Jan 2021, 06:04 PM

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন হাসান। জীবনের বড় একটা স্বপ্ন পূরণের সেই অধ্যায় রচনা করা সহজ ছিল না তার জন্য।

প্রতিভা যদিও তার সহজাত। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেশ ভালো গতি, অ্যাকশন মসৃণ, ব্যাটসম্যানকে হুট করে চমকে দেওয়া ও উইকেট শিকারি প্রবণতাও আছে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই জানান দেন নিজের সামর্থ্যের। ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তার শিকার ছিল ৯ উইকেট।

এরপরই হানা দেয় ফাস্ট বোলারদের চিরায়ত শত্রু চোট। বাইরে থাকতে হয় লম্বা সময়। তরুণ একজনের জন্য বড় ধাক্কা। তবে হাসান তাতে টালমাটাল হননি। পুনর্বাসনের কষ্টকর প্রক্রিয়া পেরিয়ে, নিজের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে আবার ফেরেন স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে।

এরপর পারফর্ম করতে থাকেন ঘরোয়া আসরগুলোয়। বাংলাদেশ ইমার্জিং দল, বিপিএলে পারফর্ম করে নির্বাচকদের নজর কাড়েন ভালোভাবেই। গতির কারণে তাকে ঘিরে বাড়তি একটা আগ্রহ তো ছিলই। সব মিলিয়ে গত বছরের শুরুতে পাকিস্তান সফরের বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়ে যান। ওই সফরে অভিষেক না হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পান দেশে ফিরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে।

সেখান থেকে যখন এগিয়ে যাওয়ার পালা, তখন আবার ফিরে এলো থমকে যাওয়া সময়। কোভিডের প্রকোপে খেলা বন্ধ দীর্ঘ সময়। পরে যখন শুরু হলো ক্রিকেট, নিজেদের মধ্যে খেলা প্রস্তুতি ম্যাচে তিনি উপহার দিলেন দুর্দান্ত বোলিং। এরপর আবার হতাশা। প্রেসিডেন্ট’স কাপ ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন হাঁটুর চোট নিয়ে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শুরুতেই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেন হাসান।

যথারীতি আবারও পুনবার্সনের পালা। এবারও চোট জয় করে ফিরলেন দারুণ প্রতাপে। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে জ্বলে উঠলেন বল হাতে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচেও শিকার করলেন ৪ উইকেট। এরপর পেলেন কাঙ্ক্ষিত সেই খবর, ওয়ানডে দলে সুযোগ। স্কোয়াডেই শুধু নয়, জায়গা হলো একাদশে।

এরপর তো সাফল্য-ব্যর্থতার দুই ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে দারুণ বোলিংয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই খরুচে। তৃতীয় ম্যাচে খেলবেন নাকি থাকতে হবে বিশ্রামে, সেটির উত্তর মিলবে সময়ে। তবে হাসান তাকিয়ে সামনে। ২১ বছর বয়সেই চোটের সঙ্গে জোর লড়াই করে পোক্ত হয়েছেন। সহসাই তাই ভেঙে পড়ছেন না।

“ইনজুরির সময়টা আসলে চাপের মধ্যেই ছিলাম। একটা বছর রিহ্যাব বলেন, বিশ্রাম বলেন…কামব্যাক করতে করতে প্রায় এক বছর হয়ে গিয়েছিল। পরে এইচপিতে ব্যাক করেছি, ওখানে ভালো করেছি, ওখান থেকেই শুরু হয়েছে।”

“যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, অভিষেক ম্যাচটা ম্যাটার করে, আলহামদুলিল্লাহ ভালো শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচেও চেষ্টা করেছি প্রথম ম্যাচের মতোই পারফর্ম করার। কিন্তু হয়নি। অসুবিধা নাই, ইনশাল্লাহ পরেরবার হবে।”

ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর একটি পেস আক্রমণ গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ, হাসানকে তাতে ভাবা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভূমিকায়। তিনি নিজেও তা জানেন। ২১ বছর বয়সী পেসার বললেন, বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন উন্নতি করতে।

“এখানে তিনিও (ওটিস গিবসন) ভালো দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। লাইন লেংথ, ইয়র্কার, স্লোয়ার, এগুলো আরেকটু নিখুঁত করার জন্য যা বলছেন, তাই করছি।”