৪৪ বছর বয়সে মাঠে ফিরে দিলশানের চমক

খেলোয়াড়ী জীবনের পাট চুকিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পারিবারিক সময় কাটাচ্ছিলেন তিলকরত্নে দিলশান। পাশাপাশি চলছিল টুকটাক কোচিং করানো। বেশ কয়েকটি ক্লাবের কাছ থেকে খেলার প্রস্তাব পেলেও রাজি হননি। কিন্তু কেসি সাউথ-মেলবোর্ন ক্লাবকে ‘না’ বলতে পারলেন না। ৪৪ বছর বয়সে আবার ২২ গজে নেমে পড়লেন ব্যাট হাতে। ভিক্টোরিয়ার প্রিমিয়ার গ্রেড ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচেই সাবেক শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান উপহার দিলেন দারুণ ফিফটি!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2021, 03:41 AM
Updated : 21 Jan 2021, 03:41 AM

২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ২০১৭ পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন দিলশান। ক্রিকেট থেকে বিদায়ের পর কিছুদিন রাজনীতি করার চেষ্টা করেছিলেন। পরে আর সেই পথে না এগিয়ে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। স্ত্রী মাঞ্জুলা থিলিনি ও ৪ সন্তানসহ থিতু হন মেলবোর্নের অদূরে বেকন্সফিল্ডে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭ বছর খেলে ১৭ হাজারের বেশি রান করা ও দেড়শর বেশি উইকেট শিকারি ক্রিকেটারকে সেখানে পেয়ে গ্রেড ক্রিকেটের অনেক ক্লাবই আগ্রহী হয় দলে পেতে। দিলশান উপেক্ষা করেই আসছিলেন এতদিন। কিন্তু কেসির প্রস্তাব তার পছন্দ হয়ে যায়। এই ক্লাবের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছেন আরেক সাবেক লঙ্কান ব্যাটসম্যান ও বাংলাদেশের সাবেক ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে দিলশান চুক্তি করে ফেলেন পুরো মৌসুম খেলার জন্য। পরে দিন দুয়েক অনুশীলন করে মাঠে নেমেই খেলেন ৪২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস। বল হাতেও শুরু করেন দলের ইনিংস। দিলশানের নৈপূন্যে কেসি হারায় ড্যানডেনংকে, যে ক্লাবে খেলছেন তার সাবেক লঙ্কান সতীর্থ সুরাজ রনদিভ। পরের ম্যাচে অবশ্য দিলশানরা হেরে গেছেন মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় দলের বিপক্ষে।

এসইএন রেডিওর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে দিলশান জানান ক্লাব ক্রিকেটে ফেরার কারণ।

কেসি ক্লাবের হয়ে বল হাতেও ইনিংস শুরু করেন দিলশান। ছবি : কেসি সাউথ-মেলবোর্ন ক্লাব।

“ অবসরের পর আর ক্রিকেট খেলতে চাইনি। মাস্টার্স ক্রিকেট আর এরকম দু-একটি ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু কেসি ক্লাবে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খুব ভালো আলোচনা হয় আমার। তিনি চাইছিলেন ভিক্টোরিয়ার তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমি যেন আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করি। আমারও মনে হলো, উঠতি ক্রিকেটারদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করি।”

“ প্রথম ম্যাচের মাত্র দিন দুয়েক আগে ক্লাবে প্রথমবার আসি আমি। আগের এক বছরে ব্যাট ছুঁয়েও দেখিনি। কিন্তু নেটে কয়েকটি বল খেলার পর মনে হলো, আমি প্রস্তুত।”

যথারীতি তার ট্রেডমার্ক ‘দিলস্কুপ’ শট খেলতে দেখা গেছে তাকে। কোচিং করানো সময় উঠতি ক্রিকেটাররা নাকি তার কাছে শুধু এই শট শিখতে চান বারবার!

এমনিতে অস্ট্রেলিয়ার জীবন তিনি ও তার পরিবার দারুণ উপভোগ করছেন বলে জানালেন দিলশান।

“ এখানকার সিস্টেম ও স্বাধীনতা আমি সত্যিই পছন্দ করি। এশিয়ায় বাইরে গেলেই ভক্তরা ঘিরে ধরে, অনুসরণ করে। জীবন সেখানে সহজ নয়। কিন্তু এখানে জীবন মুক্ত, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য। এখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দারুণ, বিশেষ করে স্কুলে।”

শুধু দিলশানই নন, তার বড় মেয়ে লিমান্সাও অস্ট্রেলিয়ায় শুরু করেছে তার ক্রিকেট অধ্যায়। লেগ স্পিনার ও বাঁহাতি ব্যাটার লিমান্সা ১৩ বছর বয়সেই খেলছে অফিসার্স ক্রিকেট ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১৮ দলে। একদিন কি তাকে তাহলে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের দলে খেলতে দেখা যাবে? দিলশান ভবিষ্যৎ ছেড়ে দিলেন মেয়ের হাতেই।

“ এটা কঠিন প্রশ্ন। আমি বাচ্চাদের জোর করতে চাই না। ওরা যা চায়, করবে। ওদের নিয়ে আমার আশা অনেক। বড় মেয়ের বয়স মোটে ১৩, অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছে। বেশ ভালো খেলে। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘বাবা চলো অনুশীলন করি।’ পরিশ্রম করতে চায় সে। উন্নতি করতে থাকলে বছর দুয়েকের মধ্যে হয়তো ভালো অবস্থায় পৌঁছে যাবে।”