প্রস্তুত হচ্ছে উইন্ডিজ, উল্টো রথে বাংলাদেশ

নতুন বল হাতে ছুটলেন কেমার রোচ, সুইং করে একটু ভেতরে ঢুকে আঘাত হানল প্যাডে। প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। মরা উইকেটেও প্রাণ জাগালেন রোচ ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। মন্থর উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেওয়ার পথ দেখালেন অভিজ্ঞ দুই পেসার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2021, 02:43 PM
Updated : 15 Jan 2021, 03:34 PM

সেখানে লাল বলের লড়াইয়ে নামার আগে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে না পারার শঙ্কা ঘিরে ধরছে স্বাগতিকদের।

মিরপুর শের-ই-বাংলার ক্রিকেট একাডেমির ছাদে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের শুক্রবারের অনুশীলন দেখলেন নাঈম হাসান। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে আঙুলে পাওয়া চোট থেকে এখনও সেরে ওঠেননি পুরোপুরি।

আগামী বুধবার নাগাদ হয়তো বোলিংয়ে ফিরতে পারেন এই অফ স্পিনার। তবে দলের সঙ্গে অনুশীলনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন। ওয়ানডে সিরিজ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে টেস্ট দলের অনুশীলন। নিশ্চিতভাবেই টেস্ট দলের অনেক সদস্য থাকবেন ওয়ানডে দলে। আপাতত স্বাগতিকদের নজর তাই এই সংস্করণে।

সেই সমস্যা নেই সফরকারীদের। দুই দলেই আছেন এমন ক্রিকেটার তাদের মাত্র পাঁচ জন। প্রথম দিনের অনুশীলনে টেস্ট দলের সঙ্গে থাকলেও শুক্রবার থেকে ওয়ানডে দলের সঙ্গে অনুশীলন করছেন তারা।

ওয়ানডে সিরিজ দুয়ারে। তাই স্কিল অনুশীলন নিয়েই বেশি ব্যস্ত ক্যারিবিয়ানরা। দুপুরে মাঠে আসার পর ওয়ার্ম-আপ করেই চলে গেলেন নেটে। সঙ্গে ভাগভাগ হয়ে চলল ফিল্ডিং।

টেস্ট দলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তা নয়। যথেষ্ট সময় আছে হাতে। সময়ের পুরো সদ্ব্যবহারের দিকে মনোযোগ সবার। বোলিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে ফিল্ডিং সাজানো নিয়ে কথা বললেন রোচ, গ্যাব্রিয়েল ও কোচ ফিল সিমন্স।

সহজ রান যতটা সম্ভব বন্ধ করে দিতে চান তারা। সিঙ্গেল নেওয়া করে তুলতে চান কঠিন। ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখার কৌশল ঝালিয়ে নেওয়ার প্রয়াস দেখা গেল তাদের মধ্যে। একই সঙ্গে গুরুত্ব পেল বোলিংয়ের লাইন, লেংথ।  

শুরুতে ব্যাটিংয়ে আসেন ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেল। সামলান রোচ ও গ্যাব্রিয়েলের গোলা। পরে খেলেন রাকিম কর্নওয়াল, ভিরাসামি পেরমল ও জোমেল ওয়ারিক্যানের স্পিন।

পরের ধাপে জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ব্যাটিং করেন শেন মোজলি। বোলিং চলতে থাকে একই ধারাবাহিকতায়। বোলার ও কোচ দেখে নিচ্ছিলেন স্কোরিংয়ের অপশনগুলো।

অনুশীলন শেষে কেমার রোচের কথায়ও ফুটে উঠল, আপাতত পরিকল্পনা ঠিক করার দিকে মনোযোগ তাদের। সঠিক পরিকল্পনা, যথাযথ বাস্তবায়ন-এই কৌশল দিয়ে বাংলাদেশে টেস্টে জয়ে ফিরতে চাইছে গতবার হোয়াইটওয়াশড হওয়া দলটি।

“যদি ভালো পরিকল্পনা করতে পারি, ভালো জায়গায় বল করতে পারি, তাহলে তা আমাদের জন্য সহায়ক হবে। সবকিছু ঠিকমত করতে পারলে আমি মনে করি, আমরা সিরিজে ভালো করতে পারব।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যস্ত ওয়ানডে দল নিয়ে। অধিনায়ক মুমিনুল হক চোট কাটিয়ে এখনও অনুশীলনে ফিরেননি। নাঈমও পুরোপুরি প্রস্তুত নন। মাঝে আবু জায়েদ চৌধুরি, ইবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ বল করেছেন জাতীয় দলের নেটে। সেটা অবশ্য সাদা বলে।

অবশ্য শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে লাল বলে ইনডোরে অনুশীলন করেন এই তিন পেসার। ইবাদত করেন ব্যাটিং, আবু জায়েদ ও খালেদ বোলিং।

গত ফেব্রুয়ারিতে সবশেষ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এরপর থেকে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ আর খেলা হয়নি। নিশ্চিতভাবেই লম্বা বিরতিতে এই সংস্করণে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে তাদের। সেখানে প্রস্তুতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে পিছিয়ে থাকার যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।

মহামারীকালে তৃতীয় সিরিজ খেলতে যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে তিন টেস্ট। ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি। এই সংস্করণে খেলার মধ্যে থাকার পরও প্রস্তুতি নিয়ে দারুণ হিসেবি ক্যারিবিয়ানরা।

টেস্ট সিরিজের আগে একটি তিন দিনের ম্যাচে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারবে সফরকারীরা। সেখানে হয়তো স্বাগতিকরা পরীক্ষা করে নিতে পারে কয়েক জনকে।    

ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে-পরে বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই এই সংস্করণে খেলতে হচ্ছে তাদের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে জেতার পর বলেছিলেন, জোর দিতে চান টেস্টে সংস্কৃতি বদলের দিকে। এরপর প্রায় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো পরিবর্তনের ছাপ নেই। 

অবশ্য সে লক্ষ্যে বড় বাধা হয়ে আসে মহামারী পরিস্থিতি। কিন্তু এর মাঝেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টের জন্য সময় বের করে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ এখনও শুরুর অপেক্ষায়।