‘হতাশ’ ক্যালিস, ‘স্টুপিড’ হতে চান না বাউচার

১৬৬ টেস্ট ও ৩২৮ ওয়ানডের অভিজ্ঞতা। ২৫ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান, প্রায় ছয়শ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। অথচ এই জ্যাক ক্যালিসকেই কিনা দক্ষিণ আফ্রিকা কাজে লাগাচ্ছে না বিতর্কিত নিয়মের কারণে! নিজ দেশে কাজ করতে না পেরে ক্যালিস নিজেও হতাশ। আর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ মার্ক বাউচার বলছেন, ক্যালিসের মতো একজনকে ধরে রাখতে না পারলে তা হবে নির্বোধের মতো কাজ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2021, 05:26 AM
Updated : 15 Jan 2021, 05:26 AM

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং পরার্মক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ক্যালিস। পরে তার সঙ্গে তার চুক্তি নবায়ন করেনি বোর্ড। মূল কারণ, বোর্ডের নীতি। ক্রিকেট পরিচালক গ্রায়েম স্মিথ, প্রধান কোচ বাউচার, হাই পারফরম্যান্স ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, সবাই শ্বেতাঙ্গ। বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী সেখানে আরেকজন শ্বেতাঙ্গ যোগ করা কঠিন। ম্যাকেঞ্জির মূল কাজ যদিও জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের নিয়ে। 

ক্যালিসের সঙ্গে কাজ করে উপকৃত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কজন ব্যাটসম্যান তাকে কোচিং স্টাফে পেতে চেয়েছিলেন আবার। কিন্তু বোর্ড সেটি করতে পারেনি। সুযোগটি লুফে নিয়েছে ইংল্যান্ড। চলতি শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য এই প্রোটিয়া কিংবদন্তিকে ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ইংলিশরা।

ইংল্যান্ডের দায়িত্ব পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি ক্যালিস নিজ দেশে কাজ করতে না পারার হতাশাও লুকাননি।

“ একদিক থেকে এটা দুঃখজনক যে আমি দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাহায্য করতে পারছি না। তবে এখানে ইংল্যান্ডের হয়ে সময় আমি পুরোপুরি উপভোগ করছি। আমার অভিজ্ঞতা যতটা সম্ভব এখানে ভাগাভাগি করব ও তাদের সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।”

“ দক্ষিণ আফ্রিকা দলে আমাকে সম্পৃক্ত হতে দেওয়া হয়নি, কারণ ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, সেখানে আর কোনো শ্বেতাঙ্গ পরামর্শক নেওয়া হবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে সুযোগ হয়নি, ইংল্যান্ডকে সহায়তার সুযোগ এসেছে এবং দুহাতে লুফে নিয়েছি।”

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের চাওয়া ও তার চাওয়া এক বিন্দুতে মিললেও বাস্তবতার কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন ক্যালিস।

“ দক্ষিণ আফ্রিকার ছেলেদের সঙ্গে গত মাস দুয়েক ধরে সেভাবে সম্পৃক্ত নই আমি। বেশ কজনই কাজ করতে আগ্রহী, তবে ওই নিয়মের কারণে ব্যাপারটি আমার হাতে নেই। আমাদের দেশে এভাবেই হয়; এই নীতির কারণে অনেক ক্রিকেটারও ছিটকে পড়েছে। এটা কঠিন, তবে আমরা জানি কোত্থেকে এটা এসেছে। ব্যাপারটি দুঃখজনক, কিন্তু এরকম সময়েই আমরা এখন আছি।”

ক্যালিসকে হারিয়ে হতাশ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাউচারও। তবে বোর্ডের নীতিমালা একটু শিথিল হওয়ার খবর জানার পর ক্যালিসকে ফিরে পেতে আশার আলো দেখছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ।

“ সংবাদমাধ্যম বলছে, সে আমার বন্ধু, এজন্যই নাকি তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। হ্যাঁ, সে আমার ঘনিষ্ঠ। কিন্তু সে অসাধারণ এক ক্রিকেটারও, যার জ্ঞান অগাধ। কেন আমরা তাকে ফিরে পেতে চাইব না?”

“ সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, নিয়মে একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাহলে আমরা তাকে অবশ্যই আবার পরামর্শক হিসেবে পেতে চাইব। অল্প কদিনের মধ্যেই, যতটা দ্রুত সম্ভব ওকে যদি আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি, সম্ভব হলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই (আগামী মাসের সিরিজে), অবশ্যই তা করা উচিত আমাদের।”

ক্যালিসের কাছ থেকে অনেক ক্রিকেটার দারুণভাবে উপকৃত হয়েছে বলে জানালেন বাউচার। নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন, বললেন সাবেক এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

“ ছেলেদের অনেকের সঙ্গেই ব্যক্তিগতভাবে কাজ করছিল জ্যাক। ওকে হারানো অনেক বড় ক্ষতি, কারণ ছেলেরা তার সঙ্গে কাজ করে খুবই লাভবান হয়েছে। এমনকি মৌসুম শেষে সে অনলাইনেই কাজ করছিল। টেম্বা বাভুমার সঙ্গে কাজ করেছে, বাভুমা তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে। আরও অনেকেই উপকার পেয়েছে। জ্যাক ও এরকম আরও যারা আছে আমাদের, তাদেরকে কাজে লাগানো উচিত। দুভার্গ্যজনকভাবে আমার হাত পেছনে বাঁধা, আমি কেবল বার্তাটাই দিতে পারি যে অমুককে লাগবে।”

“ আমার ভাবনায় সে অবশ্যই আছে। চেষ্টা করছি তাকে আবার সম্পৃক্ত করার। আমার স্রেফ আশা, আমরা যেন তাকে সম্মানের সঙ্গে দেখি। বিশ্ব ক্রিকেটে তার কাজের সুযোগের অভাব নেই, সেটা এর মধ্যেই দেখা গেছে। তাকে ধরে রাখতে না পারাটা হবে স্টুপিডের মতো কাজ। আমি জানি, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে কাজ করতে জ্যাকের ভালো লাগবে। ওর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, আমি আশা করছি যে ওকে ফিরে পাব।”