ওয়াকার দুঃখ পাওয়ায় খুশি আমির

ওয়াকার ইউনিস ও মিসবাহ-উল-হকের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন মোহাম্মদ আমির। এই দুজনের কোচিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অকাল অবসরে যাওয়া এই বাঁহাতি পেসার। আহবান জানালেন ড্রেসিং রুমের ভীতি জাগানিয়া সংস্কৃতি বন্ধ করার। তার মন্তব্য শুনে ওয়াকার দুঃখ পেয়েছেন জেনে নিজের ভালো লাগার কথাও অকপটে বললেন আমির।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2021, 03:55 AM
Updated : 15 Jan 2021, 03:55 AM

টিম ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে পাওয়া মানসিক নির্যাতন ও প্রচণ্ড চাপকে কারণ দেখিয়ে গত মাসে আচমকাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান আমির। সেসময় আলাদা করে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করান দলের বোলিং কোচ ও পাকিস্তানের পেস বোলিং কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনুসকে।

নিউ জিল্যান্ড সফর থেকে ফেরার পর কয়েকদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে আমিরের সব দাবি উড়িয়ে দেন ওয়াকার ও প্রধান কোচ মিসবাহ। আমির সব বানিয়ে বলেছেন বলে পাল্টা দাবি করেন মিসবাহ, প্রশ্ন তোলেন পাকিস্তান দলের প্রতি তার নিবেদন নিয়ে। ৮৭-৮৮ মাইল গতিতে বোলিং করার সামর্থ্য থাকলেও আমির ৮১ মাইল গতিতে বোলিং করেছেন বলে অভিযোগও তোলেন তিনি। পারফরম্যান্সের কারণেই নির্বাচকরা সবাই ও অধিনায়ক মিলে আমিরকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলেও জানান মিসবাহ।

এরপর বৃহস্পতিবার লাহোরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রধান কোচের এসব মন্তব্যের জবাব দেন আমির।

“ আমি কোনো ভুল কথা বলিনি, সবই সত্যি বলেছি। পারফরম্যান্স এখানে কোনো ঘটনাই নয়, কারণ আমি জানি যে আমার সামর্থ্য আছে শক্তভাবে ফেরার। কিন্তু ব্যাপারটি হলো, তারা যেরকম মানসিক নির্যাতনের ভেতর ক্রিকেটারদের ঠেলে দেয়।”

“ ক্রিকেটারদের একটু মুক্তভাবে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিন, স্বাধীনতা দিন। ড্রেসিং রুমের এই ভীতি জাগানিয়া আবহ সরিয়ে ফেলুন। দেখবেন, ক্রিকেটাররা পারফর্ম করবে ও ম্যাচ জেতাবে।”

আমিরকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ ছিল না বলে দাবি করেছিলেন মিসবাহ। কিন্তু আমির দেখালেন উল্টো ছবি।

“ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ২১ উইকেট নেওয়ার পরের ম্যাচেই আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এটা যদি ব্যক্তিগত ইস্যু না হয়, তাহলে কোনটি ব্যক্তিগত? আমার গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল কারণ আমি পুরো ফিট ছিলাম না এবং ক্লান্ত ছিলাম। কিছুদিন আগে আমি লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে গেছি তরতাজা হয়ে। সেখানে ১৪৫ কিলোমিটার (৯০ মাইলের বেশি) গতিতে বোলিং করেছি।”

পাকিস্তানের এই দুই কোচের মানসিকতা দুইরকম বলেও অভিযোগ করেন আমির।

“এক কোচ বলেন, গতি কোনো ব্যাপার নয়, ২০ উইকেট নিতে পারাই গৃরুত্বপূর্ণ (ওয়াকার)। আরেক কোচ বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কার কথা বিশ্বাস করব আমরা? আগে নিজেরা ভাবুন যে কী বলতে চান, তার পর আমিরকে শেখাতে আসবেন।”

আমিরের মন্তব্যে দুঃখ পাওয়ার কথা জানিয়ে ওয়াকার কদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এই বাঁহাতি পেসারের দুঃসময়ে কতভাবে তিনি পাশে ছিলেন।

“ আমিরের মন্তব্য আমাকে আহত করেছে। যেভাবে সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছে এবং যেসব মন্তব্য করেছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সে দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার। নাজাম শেঠির (পিসিবির আগের চেয়ারম্যান) কাছে আমি ওর জন্য সুপারিশ করেছি, ২০১৬ সালে আমির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর ওর যেসব সতীর্থ প্রতিবাদ করেছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি আমি।”

ওয়াকারের আহত হওয়ার কথা জেনে আমির বললেন তার স্বস্তির কথা।

“ আমি খুশি যে তিনি দুঃখ পেয়েছেন ও হতাশ হয়েছেন। এখন তিনি বুঝতে পারবেন, কারও মন্তব্যে কেউ কতটা আহত হতে পারে। আমার অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তার মন্তব্যে আমার যেমন লেগেছিল।”

ওয়াকার অবশ্য আমিরের ফেরার পথ খোলা রেখেছেন। সংবাদ সম্মেলনেই বলেছেন, আমির এখনও দলের ভাবনায় আছেন এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করলেই ফিরতে পারবেন। আমির নিজেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না। তবে এটাও পরিস্কার করে দিলেন, এই কোচদের সময়ে অন্তত আর ফিরছেন না।

“ ইউনিস খান, মোহাম্মদ ইউসুফ, শহিদ আফ্রিদিরা নানা সময়ই অবসর থেকে ফিরে এসেছেন। আমি তাই এটা নিয়ে চিন্তিত নই। জানি যে পারফর্ম করলে যে কেউই ফিরে আসতে পারে।”

“ তবে এখনই নয়। ওয়াকার ইউনিস অবশ্যই একজন কিংবদন্তি, মিসবাহ দুর্দান্ত অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু কোচিংয়ের ব্যাপারটি পুরো আলাদা। মাঠে কোচিং করানোর আগে শেখা জরুরি, প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেওয়া জরুরি। আমি এটা বলছি না যে পিসিবির উচিত তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া। তবে এখনকার কোচিং স্টাফদের যে মানসিকতা, এই অবস্থায় আমি জাতীয় দলে খেলতে পারব না।”