যেসব কারণ দেখিয়ে অকাল অবসরে গেছেন মোহাম্মদ আমির, সেসব কথায় কোনো সত্যতা নেই বলে দাবি করলেন মিসবাহ-উল-হক। পাকিস্তানের প্রধান কোচের মতে, বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে তিলকে তাল করেছেন আমির।
Published : 12 Jan 2021, 10:40 AM
আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া আমির গত মাসে আচমকাই বিদায় জানান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণকে। কারণ হিসেবে আমির তখন বলেছিলেন, প্রচণ্ড মানসিক নির্যাতন, অসহনীয় চাপ ও দলে বৈরি পরিবেশের কথা। টিম ম্যানেজমেন্টকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। আলাদা করে আঙুল তুলেছিলেন বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনিসের দিকে।
মিসবাহ সোমবার লাহোরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে উড়িয়ে দিলেন আমিরের দাবি।
“ আমিরের ঘটনায় ওয়াকারের হাত থাকা নিয়ে কথা উঠেছে। কিন্তু এসবে কোনো সত্যতা নেই। ৬ জন নির্বাচক ছিলেন, সঙ্গে আমি প্রধান নির্বাচক। তার পর অধিনায়ক তো ছিলেনই। কাজেই, কেবল মাত্র একজনই দল নির্বাচনে প্রভাব রেখেছে, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
“ পারফরম্যান্সের কারণেই তাকে (আমির) কেউই নিতে চায়নি। আমি বুঝতে পারছি না, কেন সে এত কিছু তৈরি করছে এবং গোটা দৃশ্যপটকে তিল থেকে তাল বানিয়েছে। সে দলে জায়গা পায়নি, এরপর প্রক্রিয়া ছিল খুব সাধারণ। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে নিজের ফর্ম দেখিয়ে জাতীয় দলে জায়গা আদায় করে নেওয়া। বাকি সবকিছু এখানে অবান্তর।”
স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আমির যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন, ওয়াকার তখন ছিলেন দলের প্রধান কোচ, মিসবাহ টেস্ট অধিনায়ক। আমিরকে দলে নেওয়ার প্রতিবাদে তখন ক্যাম্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ, আজহার আলিরা। তাকে দলে না নেওয়ার পক্ষে দাবি ছিল প্রবল। তার পরও তাকে নেওয়া হয়েছিল, সেটি মনে করিয়ে দিলেন মিসবাহ।
“ আমিরের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি আছে এবং আমি সবসময়ই ক্রিকেটারদের ভাবনাকে সম্মান করেছি, তা সে সিনিয়র হোক বা জুনিয়র। সে যখন ফিরে এলো (নিষেধাজ্ঞার পর), আমিই ছিলাম অধিনায়ক। তখন তাকে স্বাগত জানিয়েছি, সবকিছু একপাশে সরিয়ে কেবল পাকিস্তান ক্রিকেটের স্বার্থে তাকে সমর্থন করেছি।”
২০১৯ সালের জুলাইয়ে আচমকাই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষনা দেওয়ার পর থেকেই আমিরের ক্যারিয়ারের পেছন দিকে হাঁটা শুরু। অবসরের আগে ৬ টেস্টে ২৪ উইকেট নিয়েছিলেন আমির। কিন্তু নিজের ওয়ার্কলোডের কথা ভেবে ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ক্যারিয়ার লম্বা করতে সিদ্ধান্ত নেন সাদা পোশাকের ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার।
তবে এরপর রঙিন পোশাকেও তাকে আগের মতো ধারাবাহিক দেখা যায়নি। টেস্টকে বিদায় জানানোর পর পাকিস্তানের হয়ে ৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে তার উইকেট মোটে ৪টি। সবশেষ ইংল্যান্ড সফরে গত অগাস্টে ২ টি-টোয়েন্টিতে তিনি বোলিং করতে পেরেছেন মোটে ৪.১ ওভার। তাতে ৩৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। এই সময় পাকিস্তানের ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি, বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতেও আমিরকে সেরা ছন্দে দেখা গেছে কমই।
আমিরের অবসরের ঘোষণা আসে সদ্য সমাপ্ত নিউ জিল্যান্ড সফরের পাকিস্তান দলে জায়গা না পাওয়ার পর। মিসবাহর মতে, স্রেফ ক্রিকেটীয় কারণেই আমিরকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
“শাহিন আফ্রিদি, হাসনাইন, হারিস রউফের মতো বোলাররা যখন নিজেদের উজার করে দিচ্ছে, উন্নতি করছে এবং আমিরের চেয়ে ভালো করছে, তখন আমিরের উচিত ছিল ওদের সঙ্গে লড়াই করে দলে জায়গা করে নেওয়া। স্রেফ সিনিয়র বোলার বলেই তো কাউকে নেওয়া যাবে না, ফর্মও দেখাতে হবে।”
“ব্যাপারটি ছিল শুধুই পারফরম্যান্সের, আর কিছু নয়। দল যখন ঘোষণা করা হয়, সে ফর্মে ছিল না, নিজের বোলিং সামর্থ্যের চূড়ায়ও ছিল না। ব্যাপারটা ছিল এরকমই সোজাসুজি, ব্যক্তিগত কোনো ব্যাপার এখানে ছিল না।”
গত ইংল্যান্ড সফরের উদাহরণ তুলে ধরে মিসবাহ প্রশ্ন তুললেন জাতীয় দলের প্রতি আমিরের নিবেদন নিযে।
“ আমার মনে আছে, গত ইংল্যান্ড সফরের আগে সফরে যেতে রাজি করাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আমি। কিন্তু সে ব্যক্তিগত কারণে যেতে চায়নি। পরে সে সমস্যা কাটিয়ে আমাকে বার্তা পাঠায় যে, সফরে যেতে চায়। তখন আমি ও ওয়াকার ভাই তাকে ঠিকই দলে নেই। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে তাকে যথেষ্ট সম্মান দেই।”
“ ওই সফরে আমিরকে নিয়ে আমাদের যা পরিকল্পনা ছিল, আমরা তাকে তা পরিস্কার বুঝিয়ে বলি। তাকে বলি যে, ‘যেহেতু তুমি সিনিয়র বোলার, আমাদের স্ট্রাইক বোলার ও টি-টোয়েন্টি খেলছো, আমরা চাই তুমি নিজেকে উজার করে দেবে। চার ওভার মাত্র বোলিং, নিজের সেরাটা দিয়ে দলে অবদান রাখবে।’ কিন্তু মাঠে সেটির প্রমাণ চোখে পড়েনি। ৮৭-৮৮ মাইল গতিতে বোলিং করার সামর্থ্য থাকলেও যদি কেউ ৮১ মাইল গতিতে বল করে, তাকে রাখা দলের জন্য কঠিন।”