চড়াই-উৎরায়ে নানা ধাপ পেরিয়ে, রোমাঞ্চ-উত্তেজনার স্রোতে ভেসে শেষ পর্যন্ত ড্র হলো সিডনি টেস্ট।
নাটকীয় শেষ দিনে সোমবার রিশাভ পান্তের আগ্রাসী ৯৭ আর আপন ঢংয়ে চেতেশ্বর পুজারার ৭৭ রানের ইনিংসে এক পর্যায়ে ভারতের জয়ও মনে হচ্ছিল খুব সম্ভব। পরে ঘুরে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া আবার জাগিয়ে তোলে জয়ের সম্ভাবনা। শেষ পর্যন্ত বিহারি ও অশ্বিনের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ম্যাচ বাঁচিয়ে ফেলে ভারত। ১-১ সমতায় থেকেই তাই ব্রিজবেনে শেষ টেস্টে যাচ্ছে দুই দল।
অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে বিহারি ও অশ্বিন জুটির রান ৬২। তবে তাদের লড়াইয়ে রানের মূল্য সামান্যই। বলের পর বল, ওভারের পর ওভার পার করে দুজন উইকেটে কাটিয়ে দেন ৪২.৪ ওভার। অনেকবারই তাদের ব্যাটের কানায় লাগে বল, অনেকবার পরাস্ত হন তারা। জীবনও পান দুজন। কিন্তু হাল ছাড়েননি কোনো অবস্থায়ই। দলকে নিরাপদ ঠিকানায় নিয়ে দুজন মাঠ ছাড়েন মাথা উঁচু করে।
হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও হার না মানা মানসিকতায় লড়াই করে বিহারি অপরাজিত ১৬১ বলে ২৩ রান করে। অশ্বিনের নামের পাশে ১২৮ বলে অপরাজিত ৩৯। বিহারির আছে টেস্ট সেঞ্চুরি, অশ্বিনের সেঞ্চুরি চারটি। তবু এই ম্যাচের ইনিংসকে হয়তো ভুলতে পারবেন না দুজনের কেউই।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের উইকেট শেষ দিনেও ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল দারুণ সহায়ক। অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা চেষ্টায় কমতি রাখেননি। কিন্তু ক্যাচ ছাড়ার মহড়ায় ব্যর্থতার পথ তৈরি করে তারাই। কাঠগড়ায় এখানে স্বয়ং অধিনায়ক টিম পেইন। তিনি একাই ছাড়েন তিনটি ক্যাচ! পান্তকে জীবন দেন দুইবার, বিহারিকে একবার। অশ্বিনের ক্যাচ ছাড়েন বদলি ফিল্ডার শন অ্যাবট।
৮ উইকেট হাতে নিয়ে ভারত শুরু করে শেষ দিন। কার্যত উইকেট ছিল আসলে ৭টি, চোটের কারণে রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট করার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। শেষের লড়াইয়ের শুরুতেই তারা হজম করে বড় ধাক্কা। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানেকে ফেরান ন্যাথান লায়ন।
এই দুজনের সৌজন্যে দ্রুত বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। দিনের প্রথম সেশনেই রান আসে ১০৮। দ্বিতীয় সেশনেও দুজন এগিয়ে যান একইভাবে। কোনো জবাবই পাচ্ছিল না অস্ট্রেলিয়া। লায়নের বলে ৩ রানে ও ৫৬ রানে পান্তের ক্যাচ ছাড়েন পেইন।
দ্বিতীয় নতুন বল যখন খুব কাছে আর সেঞ্চুরির কাছে পান্ত, তখনই সমাপ্তি তার রোমাঞ্চকর অভিযানের। লায়নকে বারবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে দারুণ কিছু শট খেললেও গড়বড় করে ফেলেন এবার। ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৮ বলে ৯৭ রানের ইনিংস শেষ হয় পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে।
পরের ওভারেই দ্বিতীয় নতুন বল পায় অস্ট্রেলিয়া। আগুন ঝরানো বোলিং করতে থাকেন স্টার্ক-কামিন্স-হেইজেলউডরা। পুজারার ২০৫ বলে ৭৭ রানের ইনিংস শেষ করেন হেউজেলউড।
অস্ট্রেলিয়াকে তখন হাতছানি দিচ্ছিল জয়। ভারতের সামনে হারার শঙ্কা। কিন্তু বিহারি ও অশ্বিন ছিলেন হার মানতে নারাজ। শরীরে-গ্লাভসে বল লাগিয়ে, বলের পর বল ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে যান দুজন।
সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাচ মিস তো ছিলই। কামিন্সের বলে যখন ক্যাচ ছাড়েন অ্যাবট, অশ্বিন ততক্ষণে খেলেছেন ৪৭ বল। এরপর তিনি খেলেন আরও ৮১ বল।
দিনের খেলার যখন বাকি ৯.২ ওভারে, এবার স্টার্কের বলে বিহারির ক্যাচ ডাইভ দিয়ে নিতে ব্যর্থ পেইন। অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনায় শেষ পেরেক সেটিই। শেষ পর্যন্ত এক ওভার আগে হাল ছেড়ে ড্র মেনে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
দুই ইনিংসে ১৩১ ও ৮১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা স্টিভেন স্মিথ। তবে ম্যাচটি হয়তো সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিহারি-অশ্বিনের ম্যাচ হিসেবেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৩৮
ভারত ১ম ইনিংস: ২৪৪
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ৩১২/৬ (ডি.)
ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪০৭) ১৩১ ওভারে ৩৩৪/৫ (আগের দিন ৯৮/২) (রোহিত ৫২, গিল ৩১, পুজারা ৭৭, রাহানে ৪, পান্ত ৯৭, বিহারি ২৩*, অশ্বিন ৩৯*; স্টার্ক ২২-৬-৬৬-০, হেইজেলউড ২৬-১২-৩৯-২, কামিন্স ২৬-৬-৭২-১, লায়ন ৪৬-১৭-১১৪-২, গ্রিন ৭-০-৩১-০, লাবুশেন ৪-২-৯-০।
ফল: ম্যাচ ড্র
সিরিজ: ৪ ম্যাচ সিরিজের ৩টি শেষে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: স্টিভেন স্মিথ।