স্মিথের সেঞ্চুরির পর গিলের ঝলক

টানা ১৪ ইনিংস সেঞ্চুরির সঙ্গে আড়ি, প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির পর থেকে এমন খরায় আর পড়েননি স্টিভেন স্মিথ। সিডনি টেস্ট শুরুর আগে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার টম মুডি বললেন, “খাঁচাবন্দি সিংহ স্মিথ ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তত।” মুডির কথা স্মিথের কানে পৌঁছেছিল কিনা কে জানে। তবে ঠিকই ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনি, রান ক্ষুধা মিটিয়ে ছুঁড়লেন প্রবল হুঙ্কার! অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দারুণ সেঞ্চুরির দিনে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখালেন ভারতের তরুণ ওপেনার শুবমান গিল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2021, 08:51 AM
Updated : 8 Jan 2021, 09:42 AM

খানিকটা মন্থর থাকলেও সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের উইকেট দারুণ ব্যাটিং সহায়ক। তারপরও হয়নি রান উৎসব। বরং দ্বিতীয় দিনে ব্যাট-বলের লড়াই জমল তুমুল। স্মিথের সেঞ্চুরি তাই আরও স্পেশাল। 

প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া অলআউট ৩৩৮ রানে। ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে স্মিথের রান ১৩১। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে মার্নাস লাবুশেন কাটা পড়েন ৯১ রানে।

উইকেট থেকে সহায়তা খুব একটা না পেলেও ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার রবীন্দ্র জাদেজা। সঙ্গে দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ে স্মিথকে রান আউট করেন তিনি।

ভারত শুক্রবার দিন শেষ করে ২ উইকেটে ৯৫ রান নিয়ে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা গিল স্ট্রোকের ফোয়ারা ছুটিয়ে দেখা পান প্রথম ফিফটির।

অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় দিন শুরু করে ২ উইকেটে ১৬৬ রান নিয়ে। দুই দফা ছোট্ট বৃষ্টি বিরতিতেও লাবুশেন ও স্মিথের মনোসংযোগে ব্যাঘাত খুব ঘটেনি। দুজনের জুটি জমাট হয় আরও। ৬৭ রানে দিন শুরু করা লাবুশেন এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে।

অস্ট্রেলিয়া যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, হঠাৎই বিপত্তি। জাদেজার একটু খাটো লেংথের বল পেছনের পায়ে ড্রাইভ করেন লাবুশেন, ইনিংসজুড়ে যে শট তিনি খেলেছেন অনেকবার। কিন্তু এবার বলটি একটু বাড়তি লাফিয়ে স্পর্শ করে ব্যাটের কানা। স্লিপে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন অজিঙ্কা রাহানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার নড়বড়ে নব্বইয়ে কাটা পড়ার তিক্ত স্বাদ পান লাবুশেন (১৯৫ বলে ৯১)।

১০০ রানের এই জুটি ভাঙার পর আর কোনো বড় জুটি পায়নি অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিংয়ে দুই টেস্টের ব্যর্থতার নিজের সহজাত পজিশন মিডল অর্ডারে ফিরেও নিজেকে ফিরে পাননি ম্যাথু ওয়েড। ১৩ রান করে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বাজে এক শটে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন জাদেজাকে। আগের টেস্টে তিনি ঠিক একইভাবে উইকেট বিলিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে।

এরপর লড়াইটা কেবলই স্মিথ ও ভারতীয় বোলারদের। দ্বিতীয় নতুন বলে অস্ট্রেলিয়ার আর কোনো ব্যাটসম্যান দাঁড়াতেই পারেননি। জাসপ্রিত বুমরাহর ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ ক্যামেরন গ্রিন, বোল্ড টিম পেইন। জাদেজার ফ্লাইটেড বল ইয়র্ক বানিয়ে বোল্ড প্যাট কামিন্স।

৪৪ বল খেলে এই ৩ জনের সম্মিলিত রান ১! গ্রিন ২১ বলে শূন্য, পেইন ১০ বলে ১, কামিন্স ১৩ বলে শূন্য।

আরেকপ্রান্তের এই স্থবিরতার মধ্যেও স্মিথ দারুণ ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নেন। ২০১ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক। তার আগ্রাসী উদযাপনেই ফুটে ওঠে, কতটা মরিয়া ছিলেন বড় রানে ফিরতে।

ভারতের বিপক্ষে এটি তার অষ্টম সেঞ্চুরি। ভারতীয়দের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি শতকের রেকর্ডে স্মিথের নাম এখন রিকি পন্টিং, ভিভ রিচার্ডস ও গ্যারি সোবার্সের মতো কিংবদন্তির পাশে।

সেঞ্চুরির পরও স্মিথ এগিয়ে নেন দলকে। কিন্তু পাশে পাননি সতীর্থদের। মিচেল স্টার্ক ২ চার ও ১ ছক্কা মারলেও আউট হয়ে যান ২৪ রানে। এমনিতে উইকেটে আঁকড়ে পড়ে থাকার সামর্থ্য থাকলেও ন্যাথান লায়ন ফেরেন শূন্যতে।

শেষ দিকে রান বাড়ানোর তাড়ায় স্ট্রাইক নিতে গিয়ে জাদেজার বুলেট গতির থ্রোয়ে থামে স্মিথ আর অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।

এমন ব্যাটিং উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে সাড়ে তিনশর নিচে আটকে রাখতে পারা ভারতীয় বোলারদের বড় কৃতিত্বই বটে। এরপর ব্যাটিংয়েও তাদেরকে ভালো শুরু এনে দেন রোহিত শর্মা ও গিল।

দেশের বাইরে প্রথমবার ওপেন করতে নামা রোহিত খেলতে থাকেন স্বচ্ছন্দে। গিল উপহার দেন দ্যুতিময় সব স্ট্রোক। প্রথম ৬ ওভারে বাউন্ডারি আসে ৫টি। দারুণ শুরুর পর মসৃণভাবে এগিয়ে যান দুজন।

তবে দুজনই আউট হয়ে যান জমে যাওয়ার পর। রোহিতের বিদায়ের ভাঙে ৭০ রানের উদ্বোধনী জুটি। জশ হেইজেলউডকে ড্রাইভ খেলে ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি (৭৭ বলে ২৬)।

গিল ফিফটি স্পর্শ করেন ১০০ বলে, ৮ চারে। মুখোমুখি হওয়া পরের বলেই আউট হন কামিন্সের বলে পুশ করে, গালিতে দারুণ ক্যাচ নেন ক্যামেরন গ্রিন।

দিনের বাকি সময় রান ভুলে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকেন চেতেশ্বর পুজারা (৫৩ বলে ৯) ও অজিঙ্কা রাহানে (৪০ বলে ৫)।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ১০৫.৪ ওভারে ৩৩৮ (আগের দিন ১৬৬/২) ( লাবুশেন ৯১, স্মিথ ১৩১, ওয়েড ১৩, গ্রিন ০, পেইন ১, কামিন্স ০, স্টার্ক ২৪, লায়ন ০, হেইজেলউড ১*; বুমরাহ ২৫.৪-৭-৬৬-২, সিরাজ ২৫-৪-৬৭-১, অশ্বিন ২৪-১-৭৪-০, সাইনি ১৩-০-৬৫-২, জাদেজা ১৮-৩-৬২-৪)।
 
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৫ ওভারে ৯৬/২ (রোহিত ২৬, গিল ৫০, পুজারা ৯*, রাহানে ৫*; স্টার্ক ৭-৪-১৯-০, হেইজেলউড ১০-৫-২৩-১, কামিন্স ১২-৬-১৯-১, লায়ন ১৬-৭-৩৫-০)।