নির্ঘুম রাত শেষে পুকোভস্কির ‘প্রিয়’ দিন

স্বপ্ন পূরণের আনন্দ, ভালো লাগায় হাবুডুবু, রোমাঞ্চের দোলা, সঙ্গে স্নায়ুর চাপ, সব মিলিয়ে নানা মনে অনুভূতির খেলা। টেস্ট অভিষেকের আগের রাতে তাই ঘুমের সঙ্গে আড়ি! এমন ছটফট একটি রাত শেষেই এসেছে উইলিয়াম পুকোভস্কির আলোয় রাঙা দিন। তরুণ এই ব্যাটসম্যান যেটিকে বলছেন এখনও পর্যন্ত নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে প্রিয় দিন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2021, 04:13 AM
Updated : 8 Jan 2021, 04:13 AM

ভারতের বিপক্ষে সিডনি টেস্টে পুকোভস্কি পান বহু কাঙ্ক্ষিত টেস্ট ক্যাপ। ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত আঙিনায় নিজের প্রথম দিনে ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান খেলেন ৬২ রানের ইনিংস।

দিনের খেলা শেষে পুকোভস্কি জানান আগের রাতে উত্তেজনা ও প্রথম দিনের প্রাপ্তির কথা।

“ সত্যি বলতে, ঘুম খুব একটা ভালো হয়নি। নিজের কাছে মনে হচ্ছিল, ভয়ঙ্কর নার্ভাস থাকব (মাঠে), তবে দিনশেষে অতটা খারাপ হয়নি।”

“ সম্ভবত এটি এখনও পর্যন্ত ক্রিকেটে আমার প্রিয় দিন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে পারা দারুণ রোমাঞ্চকর, বিশেষ করে এই অবস্থায় উঠে আসতে যত কিছু পেরোতে হয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ ছিল।”

‘যত কিছু পেরোতে হয়েছে’ বলে পুকোভস্কি বুঝিয়েছেন তার চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা ক্যারিয়ারের কথা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার আগেই তো ক্রিকেট ও জীবনের অনেক রঙ তার দেখা হয়ে গেছে!

পুকোভস্কি পরিবারের শেকড় চেকোশ্লাভাকিয়ায়। তার বাবা অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন সার্বিয়া থেকে। পুকোভস্কির জন্ম, বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটের পথে এগিয়ে চলা, সবই অস্ট্রেলিয়ায়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই জানান দেন নিজের প্রতিভার। ২০১৬-১৭ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সাড়া জাগান টানা চারটি সেঞ্চুরিসহ ৮ ইনিংসে রেকর্ড ৬৫০ রান করে।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পথ পেরিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও পারফর্ম করতে থাকেন দারুণ। শেফিল্ড শিল্ডে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই খেলেন ১৮৮ রানের ইনিংস। কদিন পর উপহার দেন ডাবল সেঞ্চুরি। বয়স ২১ হওয়ার আগেই শেফিল্ড শিল্ডে ডাবল সেঞ্চুরি করা মাত্র অষ্টম ব্যাটসম্যান তিনি। 

কিন্তু প্রতিভা ও  রানের পাশাপাশি তিনি আলোচনায় থাকেন বারবার কনকাশনের শিকার হয়েও। স্কুল জীবনে রুলস ফুটবলে প্রথমবার এর শিকার হয়েছিলেন। এরপর বয়সভিত্তিক ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নানা সময়ে ব্যাটিংয়ের সময়, ফিল্ডিং ও রানিং বিটুইন দা উইকেটের সময় বল লেগে, নানাভাবে কনকাশনের শিকার তিনি হন।

এসবের সঙ্গে যোগ হয় মানসিক অবসাদ। ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরতি নেন। তাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে নেমে আসে হতাশা।

তবে সবকিছু জয় করে আবার ফেরেন ক্রিকেটে। রানের জোয়ারও ফেরে তার ব্যাটে। এবারের শেফিল্ড শিল্ডে নিজেকে মেলে ধরেন নতুনভাবে। আগে তিনি ব্যাট করতেন মূলত তিন-চার নম্বরে। এবার ওপেন করার দায়িত্ব পেয়ে টানা দুই ম্যাচে খেলেন ২৫৫ ও ২৩৮ রানের ইনিংস। এই পারফরম্যান্সেই জায়গা পেয়ে যান ভারতের বিপক্ষে সিরিজের অস্ট্রেলিয়া দলে। টেস্ট অভিষেকও মনে হচ্ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার।

তখনই ফিরে আসে পুরোনো শুত্রু। টেস্ট সিরিজ শুরুর ঠিক আগে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে কনকাশনের শিকার হন আবার। সব মিলিয়ে যা ছিল তার নবম কনকাশন!

অভিষেকের সম্ভাবনা থেকে প্রথম দুই টেস্টে তিনি হয়ে যান দর্শক। অবশেষে এই টেস্টে সুযোগ এলো, তিনি লুফেও নিলেন।

কনকাশনের এসব ঘটনার কারণেই ভারতীয় বোলারার তাকে শর্ট বল করবে একের পর এক, জানতেন পুকোভস্কি। তিনি তৈরিও ছিলেন এজন্য।

“ আমার কনকাশনের ইতিহাসের কারণেই, সব পর্যায়ের ক্রিকেটেই আমাকে সবসময় অনেক বাউন্সার করা হয়েছে। জানতাম, ভারতও এটির চেষ্টা করবে প্রবলভাবে। আমার মনে হয়, প্রথম দিনে বেশির ভাগ সময় ভালোভাবেই সামলেছি, কখনও আবার একটু নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। তবে সবমিলিয়ে দিনটি ছিল দারুণ ভালো লাগার।”

স্মরণীয় এই দিনে তিনি অনুভব করেছেন প্রিয়জনদের অভাব। কোভিডের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত বন্ধ থাকায় সিডনিতে আসতে পারেননি তার আপনজনরা।

“ খুব ভালো লাগত যদি মা, বাবা ও আমার বান্ধবী এখানে থাকতে পারত, আমার সঙ্গে উদযাপন করতে পারত। কিন্তু কোভিড সীমাবদ্ধতার কারণে আসতে পারেনি ওরা। কিছুটা হতাশার এটি, বিশেষ করে আমার বাবার জন্য। আমার পুরো পথচলায় তিনি সবসমই পাশে ছিলেন ও প্রেরণা জুগিয়ে আসছেন।”

“ তবে এই হতাশা কেবলই শতকরা এক ভাগ… বাকি ৯৯ ভাগই উল্লাসের।”