ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে রোববার প্রথম ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ২৮৬। আগের দিন পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ২৯৭ রানে।
১১২ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন উইলিয়ামসন। তার টানা তৃতীয় ও ক্যারিয়ারের ২৪তম টেস্ট সেঞ্চুরি এটি। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের টেস্টে তিনি খেলেছিলেন ১২৯ রানের ইনিংস, তার আগের টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৫১।
নিকোলস দিন শেষে অপরাজিত ৮৯ রানে। উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটির রান ২১৫।
দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে দল ৭১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর এই জুটির সৌজন্যে সারাদিন আর কোনো উইকেট হারায়নি নিউ জিল্যান্ড।
দিনের প্রথম সেশনে লড়াই হয় সমানে-সমান। কিউইদের রান ছিল ২ উইকেটে ৬৬। দ্বিতীয় সেশন খানিকটা হেলে পড়ে নিউ জিল্যান্ডের দিকে। এই সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে ২৬ ওভারে আসে ৭৯ রান। শেষ সেশনে উইলিয়ামসন ও নিকোলসের রান উৎসবে ৩৪ ওভারে আসে ১৪১ রান!
দিনের শেষের মতো শুরুটাও ছিল কিউইদের জন্য ভালো। হ্যাগলি ওভালের উইকেট প্রথম দিনের মতো না হলেও সবুজাভ ছিল এ দিনও। সেটির ফায়দা নিতে পারেনি পাকিস্তানের পেসাররা। উদ্বোধনী জুটিতে নিউ জিল্যান্ডকে পঞ্চাশ পার করান টম ব্লান্ডেল ও টম ল্যাথাম।
মূল পেসারদের ব্যর্থতার পর ৫২ রানের জুটি ভাঙেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ। ব্লান্ডেলকে (১৬) রিভিউ নিয়ে ফেরায় পাকিস্তান।
প্রথম উইকেটের হাত ধরে উইকেট আসে আরেকটি। শাহিন শাহ আফ্রিদির দারুণ এক ডেলিভারিতে ৩৩ রানে ফেরেন ল্যাথাম। দ্বিতীয় স্লিপে শান মাসুদ হাতে জমাতে না পারলেও প্রথম স্লিপে দারুণ রিফ্লেক্সে বল তালুবন্দী করেন হারিস সোহেল।
এই জোড়া ধাক্কার পর উইলিয়ামসন ও রস টেইলরের জুটিও টেকেনি বেশিক্ষণ। লাঞ্চের পরপরই টেইলরকে ১২ রানে বিদায় করেন মোহাম্মদ আব্বাস।
উজ্জীবিত পাকিস্তান এরপর চেপে ধরে নিউ জিল্যান্ডকে। ছন্দ খুঁজে পেতে লড়তে থাকেন উইলিয়ামসন। আফ্রিদির বলে ৩ রানে নিকোলসের দুর্দন্ত ক্যাচ নেন রিজওয়ান, কিন্তু বলটি ছিল ‘নো।’ দুজনেরই ব্যাটের কানায় কয়েকবার বল লেগে ফিল্ডারের কাছে যায়নি অল্পের জন্য।
জুটির দুইশ হওয়ার পর উইলিয়ামসন ও নিকোলস। ছবি : নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের টুইটার।
উইলিয়ামসন ফিফট স্পর্শ করেন ১০৫ বলে। সেখান থেকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান কেবল ৩৫ বলেই। অথচ ঝড়ো ব্যাটিং বা আগ্রাসী শটে নয়, প্রায় সবই ছিল ক্রিকেটীয় শট। ৭৮ থেকে নাসিম শাহর এক ওভারেই মারেন চারটি বাউন্ডারি। এর একটি স্লিপ ফিল্ডারের একটু ওপর দিয়ে যায় বাউন্ডারিতে। বাকি দুটি ছিল কবজির দারুণ মোচড়ে, একটি চোখধাঁধানো অন ড্রাইভে।
পরে ফাহিমকে তিন ওভারের মধ্যে দুটি বাউন্ডারিতে তিনি পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। ১০৭ রানে ফাহিমের বলেই ক্যাচ দেন গালিতে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন শান মাসুদ।
নিকোলসের ফিফটি ছিল ১০৭ বলে। পঞ্চাশের পর রানের গতি বাড়ান তিনিও। দিনের শেষভাগে আবার সাবধানী হয়ে যান একটু। তার পরও সুযোগ দিয়েছিলেন ৮৬ রানে। আফ্রিদির বলে উইকেটের পেছনে সহজ সেই ক্যাচ ছাড়েন পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রিজওয়ান। নিউ জিল্যান্ড দিন শেষ করে স্বস্তিতে।
৭ হাজার টেস্ট রান থেকে ১১ রান দূরে তৃতীয় দিন শুরু করবেন উইলিয়ামসন, সেঞ্চুরি থেকে ১১ রান দূরে নিকোলস।
প্রথম সেশনের কিছু সময় ছাড়া পাকিস্তানের বোলিং ছিল ধারহীন। পেসাররা তেমন কোনো প্রভাব রাখতে পারেননি। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার জাফর গোহার ছিলেন একদমই নির্বিষ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ২৯৭
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৮৫ ওভারে ২৮৬/৩ ( ল্যাথাম ৩৩, ব্লান্ডেল ১৬, উইলিয়ামসন ১১২*, টেইলর ১২, নিকোলস ৮৯*; আফ্রিদি ১৯-৫-৪৫-১, আব্বাস ২০-৭-৩৭-১, নাসিম ১৪-১-৭২-০, ফাহিম ১৮-৪-৫৫-১, মাসুদ ২-০-১৭-০, গোহার ১১-০-৫০-০, হারিস ১-০-২-০)।