তিন সপ্তাহের ক্রিকেটীয় উত্তেজনা পৌঁছে গেছে শেষ অঙ্কে। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে জেমকন খুলনা ও গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার খেলা শুরু বিকেল সাড়ে চারটায়।
দিন তিনেক আগেও মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। সেই ম্যাচের আগে পরিষ্কার ফেভারিট ছিল চট্টগ্রাম। প্রাথমিক পর্বে তারা ৮ ম্যাচের ৭টিই জিতেছিল, খুলনাকে হারিয়েছিল দুই ম্যাচেই। কিন্তু গত সোমবার প্রথম কোয়ালিফায়ারে সেই চট্টগ্রামকেই হারিয়ে ফাইনালে পা রাখে খুলনা।
চট্টগ্রাম পরে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে ঠিকই ফাইনালে উঠে গেছে। তবে সমীকরণ এবার আর আগের মতো নেই। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে কারণে ফেভারিট ছিল খুলনা, নানা চড়াই-উৎরাই শেষে ফাইনালেও দলটির শক্তির জায়গা সেটিই, একগাদা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার!
ফাইনালের আগের দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে চট্টগ্রামের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এখানেই এগিয়ে রাখলেন খুলনাকে।
“আমি মনে করি, টি-টোয়েন্টি হচ্ছে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের খেলা। মাঠের ভিতরে যাদের ভালো মাথা যত থাকবে, তারাই ম্যাচ জিতবে। সেদিক দিয়ে খুলনা অনেক এগিয়ে আছে। কারণ তাদের বড় বড় ক্রিকেটার অনেক আছে। আমাদের ছেলেদের হয়তো ওই অভিজ্ঞতা নাই, খুব বেশি ফাইনাল ম্যাচও ওরা খেলেনি।”
“যেহেতু দর্শক নাই, এটা একটা বড় ধরনের সুবিধা। দর্শক থাকলে হয়তো একটু চিন্তার বিষয় ছিল। কারণ ওই চাপ নেওয়া ছেলেদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যেত। দর্শক না থাকায় একটু শান্তিতে আছি। পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের একটা ধারাবাহিকতা ছিল, এ ম্যাচটাও সেভাবে খেলতে পারলে আমাদের একটা ভালো সম্ভাবনা থাকবে।”
সালাউদ্দিন যেটা বললেন, সেই ধারাবাহিকতার জায়গায় চট্টগ্রাম এই টুর্নামেন্টে সবার ওপরে। আসর শুরুর আগে শীর্ষ ফেভারিট দল তারা ছিল না, কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে ফাইনালের আগ পর্যন্ত তারাই ছিল সবার ওপরে।
বড় ম্যাচে বড় ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা ও চাপ সামেলানোর ক্ষমতা বড় সম্পদ অবশ্যই। তবে খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ফাইনালের মতো মঞ্চে কোনো দলের এগিয়ে থাকার নীতিতে বিশ্বাসী নন।
“ফাইনাল খেলায় আমার মনে হয় এগিয়ে রাখার বিষয়টা ওরকম ম্যাটার করে না। কারণ ফাইনালে অনেক চাপের মুহূর্ত থাকে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি থাকে। এই জিনিসগুলো যে দল ভালোভাবে সামলাতে পারবে, আমি মনে করি যে তারাই সুবিধা পাবে। ভালো ক্রিকেট খেলেই আমাদের ভালো ফল করতে হবে।”
চট্টগ্রামের বিপক্ষে ভালো খেলাটা সহজ হবে না। দলটির মূল শক্তি তাদের বোলিং আক্রমণ। দুই বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম আসর জুড়ে ছিলেন দুর্দান্ত। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছে শরিফুলের সুইং, আগ্রাসন ও বাউন্স আর মুস্তাফিজের সুইং, কাটার ও নিয়ন্ত্রণ। নতুন বলে অফ স্পিনে নাহিদুল ইসলাম ম্যাচের পর ম্যাচ দারুণ পারফর্ম করে চলেছেন। মোসাদ্দেক হোসেনও কার্যকর ভূমিকা রাখছেন অফ স্পিনে।
ব্যাটিংয়ে লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটিই দলের ভার বয়ে নিয়েছে বেশির ভাগ ম্যাচে। মিডল অর্ডারকে সেভাবে পরীক্ষা দিতে হয়নি। একটি ম্যাচে তবু অভিজ্ঞ শামসুর রহমান জিতিয়েছেন দলকে। মোহাম্মদ মিঠুন শুরুতে বিবর্ণ থাকলেও সবশেষ দুই ম্যাচে খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। দলের ব্যাটিং অর্ডার বেশ লম্বা।
“তারা খুবই ভালো দল, সবাই জানে যে সৌম্য-লিটন খুব ভালো ব্যাটিং করছে। লিটন এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান স্কোরার। ওদের বোলিং আক্রমণ ভালো। তবে আমার মনে হয়, ওদের প্রতি মনোযোগ বেশি না দিয়ে আমরা নিজেদের আত্মবিশ্বাসে যেন ভরসা রাখি। তাহলে মনে হয় আমাদের জন্য ভালো হবে এবং দলের জন্যও ভালো।”
দুই দলের অধিনায়কের জন্যও ফাইনাল হতে যাচ্ছে বিশেষ কিছু। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই নেতৃত্ব দেন মাহমুদউল্লাহ। তবে অধিনায়ক হিসেবে এরকম ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে ট্রফির স্বাদ পাননি এখনও। মোহাম্মদ মিঠুন ঘরোয়া ক্রিকেটে নানা সময় অধিনায়কত্ব করলেও নেতা হিসেবে ঠিক সেরকম পরিচিত ছিলেন না। তবে এই আসরে চমকে দিয়েছেন তার নেতৃত্বগুণ দিয়ে। ট্রফি জিততে পারলে তার জন্যও হবে দারুণ স্মরণীয় কিছু।
ফাইনালে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হবে টস। বিকেল সাড়ে চারটায় শুরু ম্যাচে আগে ব্যাট করা দলের জন্য প্রকৃতির আলো থেকে কৃত্রিম আলোয় প্রবেশের সময়টুকু মানিয়ে নেওয়া যেমন একটু কঠিন হবে, আরও বড় চ্যালেঞ্জ ভারি শিশিরে পরে বল করা।
টুর্নামেন্টে দলের জন্য কোনো প্রাইজমানি নেই। তবে চ্যাম্পিয়ন দলের ক্রিকেটাররা পাবেন দেড় লাখ টাকা করে, রানার্সআপ দলের ক্রিকেটাররা ৭৫ হাজার টাকা করে। সঙ্গে আছে আরও বেশ কিছু ব্যক্তিগত পুরস্কার। স্বীকৃতির আশায় উজ্জীবিত থাকার কথা ক্রিকেটারদের।
সব মিলিয়ে বিপিএলের মতো অতটা জাঁকজমক আবহ ও ঠাসা উত্তেজনা না থাকলেও রোমাঞ্চের রসদ কম নেই এই ফাইনালেও।